জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত ধারাগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, অধ্যাদেশটির আইনি বৈধতা বজায় রেখে কর্মচারীদের আপত্তির বিষয়গুলো সমাধান করা।
সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখেও সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ পুরোপুরি বাতিল না করে তা সংশোধনের পথে এগোচ্ছে সরকার। অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে এবং কর্মচারীদের আপত্তি রয়েছে–এসব ধারা প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও ব্যাখ্যা শেষে নতুন করে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত ধারাগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, অধ্যাদেশটির আইনি বৈধতা বজায় রেখে কর্মচারীদের আপত্তির বিষয়গুলো সমাধান করা।
সূত্র জামিয়েছে, পর্যালোচনা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
গত ২৫ মে জারি হওয়া মূল অধ্যাদেশে চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য বিভাগীয় কার্যক্রম ছাড়াই কেবল একটি কারণ দর্শানোর নোটিশের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন ক্যাডারসহ অন্যান্য ফোরামের প্রতিবাদ শুরু হয়, আন্দোলনে নামে ও অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি তোলে।
তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অধ্যাদেশটি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে গত ৪ জুন একটি কমিটি করে সরকার। পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা গত ১৬ জুন প্রথম সভা করেছেন।
পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমিটি প্রথম সভায় এই অধ্যাদেশের যেসব ধারা অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সেখানে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে শুধু প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পায়।
সংশোধনের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশোধনের ফলে যেন কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়।
সোমবার পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতা মো. নূরুল ইসলাম, বাদিউল কবীর ও মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আজ তাদের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী সরকার পরে এ বিষয়ে একটি ঘোষণা দিতে পারে।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর মঙ্গলবার (২৪ জুন) টিবিএসকে বলেন, “সরকার কি করবে সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা যেসব কারণে বাতিলের দাবি তুলেছি, সেগুলো দূর করা হলে সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। কিন্তু আমাদের আপত্তির জায়গাগুলো থাকলে সেটি কর্মচারীরা মানবে না। আর আমাদের আপত্তির ধারাগুলো দূর করা হলে, এই আইন থাকা না থাকা সমান কথা।”
সম্ভাব্য সংশোধন
একজন কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘অনানুগত্য’ বলতে কী বোঝাবে তা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, যাতে ইচ্ছামতো বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ তোলা না যায়। কী কী আচরণ এই শ্রেণিতে পড়বে তার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
আরেকটি পর্যালোচনাধীন ধারা হলো—অকারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা। বর্তমানে অধ্যাদেশে বলা আছে, ‘যুক্তিসংগত কারণ’ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এখন এতে ব্যাখ্যা যোগ করা হবে যে, আগে থেকেই অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত জরুরি কাজে অনুপস্থিত থাকলেও, কেবল এজন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী কাউকে কাজে বিরত থাকতে ‘উসকানি’ দিলে বা বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই ধারায় নতুন একটি ব্যাখ্যা যুক্ত করে বলা হবে, যে কর্মচারী কাজে বিরত থাকতে প্ররোচিত বা কাজে যোগ দিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন কেবল তার অভিযোগের ভিত্তিতে এই ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তৃতীয়পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ধারায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
নারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অপব্যবহার ঠেকাতে সংশোধিত অধ্যাদেশে নতুন সুরক্ষা সংযোজন করা হবে। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের প্রক্রিয়া এবং অভিযুক্ত কর্মচারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
শাস্তিমূলক প্রক্রিয়ার বিষয়ে বর্তমানে অধ্যাদেশে বলা আছে—একজন নির্ধারিত কর্মকর্তা অভিযোগ গঠন ও নিষ্পত্তি করতে পারবেন। এখন সরকার ভাবছে—এই ক্ষমতা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া বা একটি কমিটি গঠন করা হবে, যাতে স্বচ্ছতা থাকে এবং পক্ষপাতের ঝুঁকি কমে।
পর্যালোচনা সভার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজে থেকে এই অধ্যাদেশ করেনি, বরং সরকারের নির্দেশেই এটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই বাস্তবায়ন করব। সরকার যদি অধ্যাদেশটি প্রত্যাহার করে, তাতেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
পর্যালোচনা কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুজন সদস্য–মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও ভূমি সচিব এখন বিদেশ সফরে রয়েছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপর কমিটি সভা করে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।