লবণ-মরিচ দিয়ে স্ট্রবেরি ভর্তা নিশ্চয়ই অনেকেই খেয়েছেন। বিভিন্ন শহর, গ্রামে এখন বিক্রি হচ্ছে। রীতিমতো দেশি ফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফলন হয়েছে স্ট্রবেরির। অ্যাভোকাডো, ড্রাগন ফল, সৌদি খেজুর, তীনফল, কমলা এগুলোও এখন চাষ হচ্ছে গোদাগাড়ীতে । গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে এসেছে অনেক বিদেশি ফল। প্রাথমিকভাবে কেউ নিতান্তই শখ করে চারা কলম বা বীজের মাধ্যমে এখানে নিয়ে এসেছেন গাছগুলো। পরে নার্সারির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। দেখা যাক এখন কী কী ফল এখানে জন্মে। অনেকে ছাঁদ বাগান নিজের বাড়িতে বা বারান্দার টবে আপনিও এসব ফলের চারা এনে লাগাতে পারেন।
স্ট্রবেরি
একসময় নির্দিষ্ট কিছু বাগানে সীমিত পরিমাণে দেখা গেলেও বর্তমানে গোদাগাড়ীসহ রাজশাহী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে। গাছের (Fragaria vesca) গড়ন থানকুনিগাছের মতো, লতা মাটিতে গড়ায়। ফল একক, পরিপক্ব ফলের রং উজ্জ্বল লাল, গা-অসমান, খাঁজকাটা, তাতে বীজ থাকে। ফল সুগন্ধি, টক-মিষ্টি স্বাদের। এ ফলে আছে ভিটামিন এ ও সি।
নাশপাতি
নাশপাতি (Pyrus communis) মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। দেশের বিভিন্ন কৃষি উদ্যান ও গবেষণাকেন্দ্রে সীমিত পরিসরে চাষ হয়। খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ২০০১ সালের দিকে বারি নাশপাতি-১ নামে আমাদের আবহাওয়া উপযোগী একটি নতুন জাতের নাশপাতির জাত উদ্ভাবন ও বাজারজাত শুরু করে। জন্মস্থানে কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও আমাদের দেশে সহজলভ্য প্রজাতিটি বরাবরই খয়েরি রঙের।
সৌদি খেজুর
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় আবদুল মোতালেবের বাগানে ২০০৬ সাল থেকেই ফল ধরতে শুরু করে। মূলত দেশি খেজুর শেষ হওয়ার দুই থেকে তিন মাস পর সৌদি খেজুরগুলো (Phoenix dactylifera) পাকতে শুরু করে। আমাদের আবহাওয়ায় এর অভিযোজনা চমৎকার হওয়ায় ব্যাপকভাবে রোপণ করা যেতে পারে। পুষ্টিগুণ অনেক ভালো হওয়ায় অন্তত দুটি খেজুর গাছ একটি পরিবারের সারা বছরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এখন গোদাগাড়ীসহ চাঁপাই নবাবগজ্ঞ, রাজশাহী, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে চাষ করা হচ্ছে খেজুর।
ড্রাগন ফলঃ
বাণিজ্যিকভাবে চাহিদা থাকায় দেশে প্রচুর পরিমাণে ড্রাগন ফলের (Hylocereus undatus) চাষ হচ্ছে। গাছ লতানো। সচরাচর চার রঙের ফল দেখা যায় বাজারে-লাল বাকল, লাল শাঁস; হলুদ বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, নীলচে লাল শাঁস। রঙের ভিন্নতা অনুযায়ী স্বাদের ক্ষেত্রেও তারতম্য লক্ষ করা যায়। শাঁসের ভেতর ছোট ছোট অজস্র কালো রঙের বীজ থাকে। লাল রঙের ফল থেকে চমৎকার প্রাকৃতিক রং পাওয়া যায়। এই রং শরবত তৈরিতেও ব্যবহার হয়। গোদাগাড়ীর কৃষকদের আসার আলো দেখাচ্ছে।
অ্যাভোকাডো
এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। গাছপ্রতি ফলন ও একেবারে কম নয়। অ্যাভোকাডোর (Persea americana) আদি আবাস আমেরিকা। ফল পরিণত হতে প্রায় সাত-আট মাস সময় লাগে। আকৃতিতে বেশ বড়-১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ফল সাধারণত সালাদের মিশেল হিসেবেই ব্যবহার্য। সৌন্দর্যচর্চার উপকরণ হিসেবেও অনেকে ব্যবহার করেন। গোদাগাড়ী বেশ কয়েকটি ড্রাগন বাগানে চাষ করতে দেখা যাচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, বিদেশী ফল বেশ লাভজনক, আমাদের ড্রাগনবাগানের পাশাপাশি সৌদি খেজুর, তীনফল,
স্ট্রবেরির চাষ করে বেশ লাভ হচ্ছে। আমাদের নিকট হতে চারা, পরামার্শ নিয়ে অনেকেই বাগান করছেন।
রাজশাহীর উপ-পরিচালক মোছাঃ উম্মে ছালমা জানান, দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। কৃষক ভাইয়েরা দেশী ফলের সাথে পাল্লা দিয়ে চাষ করছেন, ড্রাগন, তীন, ড্রাগন, খেজুর, আঙ্গুর, কমলা, আপেল ফলসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশী ফল। বেশ লাভবান হচ্ছে কৃষকগণ।
গোদাগাড়ীর আর্দশ কৃষক, বঙ্গবন্ধু পদক প্রদকপ্রাপ্ত দেশী বিদেশী ফল চাষি মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, বিদেশী ফল চাষ করে দেশের কৃষকগণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান বাখছেন।