ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয়ে টিকটক করেন প্রধান শিক্ষক, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • ১৮ বার

বগুড়ার শেরপুরের কালশীমাটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার চাকির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা গত দুই সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দেয়। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ায় গতকাল বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

জানা যায়, উপজেলার গাড়িদহ মডেল ইউনিয়নের কালশীমাটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার চাকি স্কুল চলাকালীন অন্যান্য শিক্ষকদের বাধ্য করে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিকটক ভিডিও করে আসছিল। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়িয়ে দিলে তা জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের নজরে আসে।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও টিকটক ভিড়িও না করার জন্য গত দুই সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরে ইউএনও আশিক খান ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

ওই কমিটির সদস্যরা হলেন- উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুল হক, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম। এই কমিটির দায়িত্ব অবহেলার কারণে গত বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।

নাঈম, জিহাদ, রাফি, আপন, হুমায়রাসহ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক স্কুল চলাকালীন নিজে এবং অন্য শিক্ষকদের নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি করতে বাধ্য করেন। এছাড়া তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। নির্ধারিত সময়ের আগে স্কুল ছুটি দেন। শ্রেণী কক্ষে ফ্যান ও বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করেনি এবং মহিলাদের কমন রুম মেরামত করার বিষয়েও অনিহা প্রকাশ করেন।

এছাড়া টিকটক ভিড়িও করতে নিষেধ করায় তিনি শিক্ষার্থীদের টিসি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন উঠে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্কুল চলাকালিন নিজে অন্য শিক্ষককে ক্লাস থেকে বের করে বিদ্যালয়ে টিকটক করেন। এটি না করতে বলায় শিক্ষার্থীদের টিসি দেওয়ার হুমকি দেন। আমরা চাই প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করুক এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

শিক্ষার্থী নওরিশ, শাম্মি, আতিয়া, হুমায়রাসহ দশম ও নবম শ্রেণীর একাধিক ছাত্রী জানান, আমাদের কমন রুম ঠিক না থাকায় আমাদের বাহিরে ঘোরাফেরা করতে হয়। সেই জন্য আমারা নিরাপাদ নয়।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার চাকি বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে বিদ্যালয়ের বই ছিলো না, তাই শিক্ষকদের নিয়ে একটু টিকটক ভিডিও করা হয়েছিল। গত ১ মাস হয়েছে টিকটক করা বন্ধ করেছি।’

এ বিষয়ে শেরপুর উপজলো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, ‘জুন মাসে ব্যস্ততার কারণে তদন্ত করতে দেরি হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিদ্যালয়ে টিকটক করেন প্রধান শিক্ষক, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

বগুড়ার শেরপুরের কালশীমাটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার চাকির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা গত দুই সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দেয়। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ায় গতকাল বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

জানা যায়, উপজেলার গাড়িদহ মডেল ইউনিয়নের কালশীমাটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার চাকি স্কুল চলাকালীন অন্যান্য শিক্ষকদের বাধ্য করে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিকটক ভিডিও করে আসছিল। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়িয়ে দিলে তা জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের নজরে আসে।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও টিকটক ভিড়িও না করার জন্য গত দুই সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরে ইউএনও আশিক খান ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

ওই কমিটির সদস্যরা হলেন- উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুল হক, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম। এই কমিটির দায়িত্ব অবহেলার কারণে গত বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।

নাঈম, জিহাদ, রাফি, আপন, হুমায়রাসহ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক স্কুল চলাকালীন নিজে এবং অন্য শিক্ষকদের নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি করতে বাধ্য করেন। এছাড়া তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। নির্ধারিত সময়ের আগে স্কুল ছুটি দেন। শ্রেণী কক্ষে ফ্যান ও বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করেনি এবং মহিলাদের কমন রুম মেরামত করার বিষয়েও অনিহা প্রকাশ করেন।

এছাড়া টিকটক ভিড়িও করতে নিষেধ করায় তিনি শিক্ষার্থীদের টিসি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন উঠে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্কুল চলাকালিন নিজে অন্য শিক্ষককে ক্লাস থেকে বের করে বিদ্যালয়ে টিকটক করেন। এটি না করতে বলায় শিক্ষার্থীদের টিসি দেওয়ার হুমকি দেন। আমরা চাই প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করুক এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

শিক্ষার্থী নওরিশ, শাম্মি, আতিয়া, হুমায়রাসহ দশম ও নবম শ্রেণীর একাধিক ছাত্রী জানান, আমাদের কমন রুম ঠিক না থাকায় আমাদের বাহিরে ঘোরাফেরা করতে হয়। সেই জন্য আমারা নিরাপাদ নয়।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার চাকি বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে বিদ্যালয়ের বই ছিলো না, তাই শিক্ষকদের নিয়ে একটু টিকটক ভিডিও করা হয়েছিল। গত ১ মাস হয়েছে টিকটক করা বন্ধ করেছি।’

এ বিষয়ে শেরপুর উপজলো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, ‘জুন মাসে ব্যস্ততার কারণে তদন্ত করতে দেরি হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।