ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ঈদে আম ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত আমাকে কালো জাদু করা হয়েছিল, ২২ দিন আইসিউতে ছিলাম সড়কপথে গাজার দিকে রওনা দিয়েছেন শত শত অধিকারকর্মী বিচ্ছেদকে বিদায়, যেভাবে ফের বান্ধবীর সঙ্গে এক হলেন এনজো ফার্নান্দেজ দেশ চালানোর মতো ক্ষমতা তারেক রহমানের আছে: ফজলুর রহমান লন্ডন বৈঠক সরকার ও বিএনপি উভয়ের জন্যই সুযোগ জাল টাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সেই বৃদ্ধকে ওমরাহ করাবেন অপু বিশ্বাস পুরনো বাংলাদেশকে বিদায় বলে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই : প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তি, খালেদা জিয়া ও প্রিন্স চার্লসের অনন্য ভূমিকা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি

বৃষ্টিতে লবণের লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • ১২ বার

প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয়। এই সময়ে উপকূলের জমিতে পলিথিন বিছিয়ে সমুদ্রের লোনাপানি আটকে রেখে রোদে শুকিয়ে লবণ উৎপাদন করেন চাষিরা। কিন্তু এবার বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূলের লবণচাষিদের নির্দিষ্ট সময়ের দুই সপ্তাহ আগেই উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে সরকারের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। চাষিরাও লোকসানে পড়েছেন।

গত মৌসুমের চেয়ে এ বছর ১ লাখ ৮৬ হাজার টন লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টন।

এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে গত মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার উপকূলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার সারা দিন গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে আরও কয়েক দিন কক্সবাজারে বৈরী আবহাওয়া থাকতে পারে। এতে লবণচাষিদের লোকসান আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৭ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। এরপর বৃষ্টির কারণে চাষিরা আর মাঠে নামতে পারেননি। গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন।

সরকারিভাবে এ বছর দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। উৎপাদনে ঘাটতি থাকলেও মাঠপর্যায়ে মজুত থাকা ১৪ লাখ টন লবণ দিয়ে আগামী উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিসিকের কর্মকর্তারা।

বিসিকের ১৭ মের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাঠপর্যায়ে এখন প্রতিমণ (৪০ কেজি) লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এ দর ছিল ২০০ টাকার মধ্যে। চাষিরা বলছেন, এক মণ লবণ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এ বছর চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে। বৈশাখ মাসজুড়েই বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করেছে। এর ফলে অধিকাংশ সময় লবণ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়।

পেকুয়ার করিয়ারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য সিরাজুল মোস্তফা তাঁর উপজেলার সবচেয়ে বড় লবণচাষি। চলতি মৌসুমে তিনি ২৭০ একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন। জমির মালিককে খাজনা পরিশোধ, কর্মচারীর বেতন, পলিথিন কেনাসহ নানা কাজে তাঁর সাড়ে তিন কোটি টাকা পুঁজি খাটাতে হয়েছে। সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘এ বছর আমার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।’

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের চাষি আবদুল হাকিম ও শফিউল আলম বলেন, বৈশাখের কড়া রোদ লবণ উৎপাদনের উপযোগী। এ সময় পলিথিনে পানি ওঠালেই এক-দুই দিনের মধ্যে লবণে পরিণত হয়।

কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার সেই সুযোগ পাওয়া যায়নি।

বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফে ৫৯ হাজার ৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। চাষির সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৫৫ জন।

গত বছর একই এলাকায় লবণ চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে। চাষে জড়িত ছিলেন ৪০ হাজার ৬৯৫ জন। এখানকার উৎপাদিত লবণই দেশের

চাহিদা মেটায়। চলতি বছর গত ৪ নভেম্বর মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদিত হয়েছিল কুতুবদিয়ার লেমশিখালী এলাকায়।

কক্সবাজার লবণচাষি ও মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া বলেন, জমির পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়লেও দাম না পেয়ে চাষিরা শেষ পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণেও চাষিরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জানতে চাইলে বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর ভরা মৌসুমের এক মাস লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

১৮ মে থেকে আবহাওয়া অনুকূলে না আসায় উৎপাদন মৌসুম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈদে আম ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বৃষ্টিতে লবণের লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ

আপডেট টাইম : ১০:৫৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয়। এই সময়ে উপকূলের জমিতে পলিথিন বিছিয়ে সমুদ্রের লোনাপানি আটকে রেখে রোদে শুকিয়ে লবণ উৎপাদন করেন চাষিরা। কিন্তু এবার বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূলের লবণচাষিদের নির্দিষ্ট সময়ের দুই সপ্তাহ আগেই উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে সরকারের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। চাষিরাও লোকসানে পড়েছেন।

গত মৌসুমের চেয়ে এ বছর ১ লাখ ৮৬ হাজার টন লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টন।

এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে গত মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার উপকূলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার সারা দিন গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে আরও কয়েক দিন কক্সবাজারে বৈরী আবহাওয়া থাকতে পারে। এতে লবণচাষিদের লোকসান আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৭ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। এরপর বৃষ্টির কারণে চাষিরা আর মাঠে নামতে পারেননি। গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন।

সরকারিভাবে এ বছর দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। উৎপাদনে ঘাটতি থাকলেও মাঠপর্যায়ে মজুত থাকা ১৪ লাখ টন লবণ দিয়ে আগামী উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিসিকের কর্মকর্তারা।

বিসিকের ১৭ মের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাঠপর্যায়ে এখন প্রতিমণ (৪০ কেজি) লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এ দর ছিল ২০০ টাকার মধ্যে। চাষিরা বলছেন, এক মণ লবণ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এ বছর চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে। বৈশাখ মাসজুড়েই বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করেছে। এর ফলে অধিকাংশ সময় লবণ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়।

পেকুয়ার করিয়ারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য সিরাজুল মোস্তফা তাঁর উপজেলার সবচেয়ে বড় লবণচাষি। চলতি মৌসুমে তিনি ২৭০ একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন। জমির মালিককে খাজনা পরিশোধ, কর্মচারীর বেতন, পলিথিন কেনাসহ নানা কাজে তাঁর সাড়ে তিন কোটি টাকা পুঁজি খাটাতে হয়েছে। সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘এ বছর আমার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।’

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের চাষি আবদুল হাকিম ও শফিউল আলম বলেন, বৈশাখের কড়া রোদ লবণ উৎপাদনের উপযোগী। এ সময় পলিথিনে পানি ওঠালেই এক-দুই দিনের মধ্যে লবণে পরিণত হয়।

কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার সেই সুযোগ পাওয়া যায়নি।

বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফে ৫৯ হাজার ৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। চাষির সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৫৫ জন।

গত বছর একই এলাকায় লবণ চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে। চাষে জড়িত ছিলেন ৪০ হাজার ৬৯৫ জন। এখানকার উৎপাদিত লবণই দেশের

চাহিদা মেটায়। চলতি বছর গত ৪ নভেম্বর মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদিত হয়েছিল কুতুবদিয়ার লেমশিখালী এলাকায়।

কক্সবাজার লবণচাষি ও মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া বলেন, জমির পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়লেও দাম না পেয়ে চাষিরা শেষ পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণেও চাষিরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জানতে চাইলে বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর ভরা মৌসুমের এক মাস লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

১৮ মে থেকে আবহাওয়া অনুকূলে না আসায় উৎপাদন মৌসুম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’