ঢাকা ০৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বার্থের লোভের দুঃসময়ে বিএনপি ত্যাগ করে বসন্তের কোকিলরা এখন ফিরতে উন্মুখ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৭ বছরের দুঃশাসন ও স্বৈরশাসনামলে ইতিহাসের বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, হামলা-মামলা, গ্রেফতার-কারাবন্দীর শিকার হয়েছেন বিএনপি জাতীয় নেতাকর্মীরা। দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বড় ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকরাও এ থেকে বাদ যাননি। অবর্ণনীয় এসব নির্যাতনের শিকার হয়েও দীর্ঘ এই সময় ধরেই বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন নেতাকর্মীরা। লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের। শুধু বিএনপি করার কারণে ঘর-বাড়ী ছাড়তে হয়েছেন অনেকে, হারিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরিও। দল ত্যাগ করলেই অর্থ-সুন্দর জীবনের প্রলোভন থাকলেও তারা খেয়ে না খেয়ে রাত্রি যাপন করেছেন ক্ষেতে-খামারে। কিন্তু তারপরও দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি আনুগত্য ও আদর্শের প্রতি ছিলেন অবিচল। তাদের এই দুর্দমনীয় বিশ্বাস ও অঙ্গীকারের কারণে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার দেড় দশকে বহুবার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করলেও সফল হইতে পারেনি ।

তবে বিচ্ছিন্নভাবে দলটির কিছু কিছু নেতা অর্থ, পদ-পদবীর লোভে, ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়ে অথবা চাপ সামাল দিতে না পেরে কিংবা মনোনয়ন বঞ্চিত দাবি করে বিএনপির দুঃসময়ে দল ছেড়েছেন। কেউ হয়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, পেয়েছেন ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা, কেউবা যোগ দিয়েছেন আওয়ামী সরকারের অর্থায়নে গঠিত কিংস পার্টিতে। দলছুট নেতারা সাময়িক লাভবান হলেও অনেকেই হারিয়েছেন আম-ছালা দুটোই। বিএনপিতে থাকাকালীন সময়ে সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে যে সম্মান ও গুরুত্ব পেয়েছেন হারিয়েছেন তার সবই। আবার দল ছেড়ে এমপি হয়ে ছয় মাসের মধ্যেই হারিয়েছেন এমপি পদ। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ভরাডুবি হয়েছে ভোটের মাঠে। দলত্যাগী এসব নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে, জেলা-উপজেলার নেতাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, শমসের মোবিন চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী ফালু, উপদেষ্টা পরিষদের উকিল আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আশরাফ হোসেন, মোফাজ্জল করিম, আলী আজগর লবী, মিজানুর রহমান সিনহা, কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিয়া, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, মেজর (অব.) হানিফ, সাহাব উদ্দিন আহমেদ, মনিরুল হক সাক্কু, এডভোকেট শামসুজ্জামান, জেলার নেতাদের মধ্যে ফরিদপুরে হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহ আলম, সিরাজুল ইসলাম সরদার, মোহাম্মদ শোকরানাসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আরো অনেকেই পদত্যাগ করেন। এছাড়া এড. তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ একে একরামুজ্জামানসহ আরো অনেক নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পারিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর এখন দেশের রাজনীতিতে বেড়েছে গুরুত্ব ও প্রভাব, জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বিএনপি। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা, পদত্যাগ করা এবং নানা সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সিদ্ধান্ত অমান্য করা, নীতিবিরোধী কাজ করার কারণে বহিষ্কৃত নেতারা দলে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এসব নেতাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। তবে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, দলের দুঃসময়ে যারা নিরাপদ দূরত্বে থেকেছে, নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে তাদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। তাদেরকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

দলও নতুন করে যোগদান বন্ধ রেখেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের সব পর্যায়ের ইউনিটে অন্য দল বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রবেশ আপাতত বন্ধ করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোন স্তরেরই কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি দলের এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড এব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। কোনভাবেই যেন বিশ্বাসঘাতকরা দলে পুনর্বাসিত হতে না পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, পট পরিবর্তনের পর নব্যরা ফের সক্রিয় হয়েছে, দলের নতুনদের ভীড় বাড়ছে। তবে মনে রাখতে হবে নিপীড়িতরাই দলের প্রাণ। যারা দেড় দশকে ঘুমিয়ে ছিলেন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছেন, নিজেরা দল করতে চেয়েছেন তাদের বিষয়ে তাদের বিষয়ে দল সতর্ক এবং যে কোন নতুন সদস্য দলের নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিশোধন করে নিতে হবে।
আলাল বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত তারা নিশ্চয় চাইবে বিশ্বাসঘাতকরা তাদের পাশের চেয়ারে বসবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, বিগত ১৭ বছরের মধ্যে ১/১১ সময় এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি ভাঙার সর্বোচ্চ চেষ্টা হয়েছে। ১/১১’র সময় দলের মূল নেতৃত্বকে মাইনাস করে সংস্কারপন্থীদের নেতৃত্বে বিএনপি পরিচালনার ষড়যন্ত্র করে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সরকার। আর ২০২৪’র জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় সেই নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে কিছু নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে নতুন দল গঠনের নানামুখি চেষ্টা চালানো হয়। সক্রিয় নেতাদের মধ্যে কেবল ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন এবং এমপি হন। আর নতুন দলে বিএনপি নেতাদের নেওয়ার উদ্যোগটিও মুখ থুবড়ে পড়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বলিষ্ট নেতৃত্বের কারণে। ফলে বিএনপি থেকে আগেই পদত্যাগ করা শমসের মোবিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে সাধারণ সম্পাদক করে তৃণমূল বিএনপি নামে কিংস পার্টিকে নির্বাচনে নেয় আওয়ামী লীগ।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে গতবছরের ৩০ নভেম্বর এমপি পদের লোভে প্রবীণ রাজনীতিবিদ বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতও হন। যে লোভে পড়ে বিএনপি ছেড়েছিলেন সেই এমপি পদে থাকতে পেরেছেন মাত্র ৬ মাস। এরইমধ্যে গত ৫ আগস্ট তার সরকারের পতন ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা।

এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে বিএনপির নতুন কমিটিতে ভাইস-চেয়ারম্যান পদ পান মোসাদ্দেক আলী ফালু। পদ পেয়েই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকার সময় অন্যতম প্রভাবশালী ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। কিন্তু দলের দুঃসময়ে তিনি ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেন ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা যাচ্ছে। পদত্যাগের পর থেকেই তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরেই অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, দেশে ফিরে এখন তিনি নতুন করে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলছেন। তার সাথে দলটির অনেক নেতা দেখা-সাক্ষাতও করছেন।

একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক এমপি এম এ হাসেম বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। এসময় তিনি জানান তিনি আর রাজনীতি করবেন না। ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ নেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে লেখা চিঠিতে অবসর নেওয়ার পাশাপাশি বিএনপির সব পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সেসময় তিনি বলেন, রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির কোনো পদে তিনি আর থাকছেন না।

খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো চিঠিতে শমসের বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি আর রাজনীতিতে থাকছেন না। রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। যেহেতু তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন, তাই বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কূটনীতিক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। ২০০৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান হন। সামরিক কর্মকর্তা থেকে আমলা ও পরে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা শমসের মবিন বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখভাল করা নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।

তবে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পৃষ্টপোষকতায় যে তৃণমূল বিএনপি গঠিত হয় সেটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন শমসের মোবিন চৌধুরী এবং নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। যদিও নির্বাচনে তার ভরাডুবি হয়েছে। তার ওই দলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এড. তৈমুর আলম খন্দকার। তিনিও নির্বাচনে অংশ নেন এবং ভরাডুবি হয়।

২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে বিএনপি ছাড়েন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। পদত্যাগপত্রে ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ কারণ উল্লেখ থাকলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অবজ্ঞা, মনোনয়ন না দেওয়া (২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে) এবং চট্টগ্রাম ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখার কারণেই দল ছাড়তে বাধ্য হন বলে দাবি করা হয়। মোরশেদ খান ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, এর পর জুন ’৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী। ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং শেখ হাসিনার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদও পান।
২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও খুলনার সাবেক এমপি আলী আসগার লবী। শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে দলের মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র দেন তিনি।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিএনপি থেকে এবার পদত্যাগ করেন দলটির কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা। শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন ব্যবসায়িক ব্যস্ততা বাড়ার পাশাপাশি শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আমার রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। সেহেতু আমি রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মিজানুর রহমান সিনহা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

২০২১ সালের ২৮ জুন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হানিফ এবং কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত শাহজাহান মিয়া। পদত্যাগপত্রে অবসরপ্রাপ্ত শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি মো. শাহজাহান মিয়া বিএনপির ২০১৬ সালের কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। আমি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। স্বাস্থ্যগত কারণে আমি গত ২৮ জুন বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।

২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শোকরানা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ বিএনপির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. সাহাব উদ্দিন দলের সকল পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপি যখন আওয়ামী সরকারের অধীনে তামাশার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়, সেটি অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন মনিরুল হক সাক্কু। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ মে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, পটপরিবর্তনের পর ইতোমধ্যে সুযোগসন্ধানিদের ভীড় বেড়েছে। তবে দুঃসময়ে দল ছেড়ে যারা চলে গেছে তাদের কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। তাদের আর দলে কোন দরকার নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদেরকেও আগামীতে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আত্মসার্থ, ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দল বদল করা লজ্জাজনক। তবে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিএনপির সাথে অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যারাই এটি করেছে তাদের কারো পরিণতি ভালো হয়নি। আর বিএনপিরও দল হিসেবে কোন ক্ষতি হয়নি।

তিনি বলেন, দল ছেড়ে যারা ফিরতে চান তাদের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত কঠোর ও আপোষহীন। একইসঙ্গে দলের নেতাকর্মীরাও চায়না তারা দলে ফিরুক। কারণ তাদের দলে কোন প্রয়োজন নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

স্বার্থের লোভের দুঃসময়ে বিএনপি ত্যাগ করে বসন্তের কোকিলরা এখন ফিরতে উন্মুখ

আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৭ বছরের দুঃশাসন ও স্বৈরশাসনামলে ইতিহাসের বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, হামলা-মামলা, গ্রেফতার-কারাবন্দীর শিকার হয়েছেন বিএনপি জাতীয় নেতাকর্মীরা। দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বড় ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকরাও এ থেকে বাদ যাননি। অবর্ণনীয় এসব নির্যাতনের শিকার হয়েও দীর্ঘ এই সময় ধরেই বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন নেতাকর্মীরা। লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের। শুধু বিএনপি করার কারণে ঘর-বাড়ী ছাড়তে হয়েছেন অনেকে, হারিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরিও। দল ত্যাগ করলেই অর্থ-সুন্দর জীবনের প্রলোভন থাকলেও তারা খেয়ে না খেয়ে রাত্রি যাপন করেছেন ক্ষেতে-খামারে। কিন্তু তারপরও দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি আনুগত্য ও আদর্শের প্রতি ছিলেন অবিচল। তাদের এই দুর্দমনীয় বিশ্বাস ও অঙ্গীকারের কারণে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার দেড় দশকে বহুবার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করলেও সফল হইতে পারেনি ।

তবে বিচ্ছিন্নভাবে দলটির কিছু কিছু নেতা অর্থ, পদ-পদবীর লোভে, ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়ে অথবা চাপ সামাল দিতে না পেরে কিংবা মনোনয়ন বঞ্চিত দাবি করে বিএনপির দুঃসময়ে দল ছেড়েছেন। কেউ হয়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, পেয়েছেন ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা, কেউবা যোগ দিয়েছেন আওয়ামী সরকারের অর্থায়নে গঠিত কিংস পার্টিতে। দলছুট নেতারা সাময়িক লাভবান হলেও অনেকেই হারিয়েছেন আম-ছালা দুটোই। বিএনপিতে থাকাকালীন সময়ে সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে যে সম্মান ও গুরুত্ব পেয়েছেন হারিয়েছেন তার সবই। আবার দল ছেড়ে এমপি হয়ে ছয় মাসের মধ্যেই হারিয়েছেন এমপি পদ। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ভরাডুবি হয়েছে ভোটের মাঠে। দলত্যাগী এসব নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে, জেলা-উপজেলার নেতাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, শমসের মোবিন চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী ফালু, উপদেষ্টা পরিষদের উকিল আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আশরাফ হোসেন, মোফাজ্জল করিম, আলী আজগর লবী, মিজানুর রহমান সিনহা, কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিয়া, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, মেজর (অব.) হানিফ, সাহাব উদ্দিন আহমেদ, মনিরুল হক সাক্কু, এডভোকেট শামসুজ্জামান, জেলার নেতাদের মধ্যে ফরিদপুরে হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহ আলম, সিরাজুল ইসলাম সরদার, মোহাম্মদ শোকরানাসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আরো অনেকেই পদত্যাগ করেন। এছাড়া এড. তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ একে একরামুজ্জামানসহ আরো অনেক নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পারিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর এখন দেশের রাজনীতিতে বেড়েছে গুরুত্ব ও প্রভাব, জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বিএনপি। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা, পদত্যাগ করা এবং নানা সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সিদ্ধান্ত অমান্য করা, নীতিবিরোধী কাজ করার কারণে বহিষ্কৃত নেতারা দলে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এসব নেতাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। তবে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, দলের দুঃসময়ে যারা নিরাপদ দূরত্বে থেকেছে, নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে তাদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। তাদেরকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

দলও নতুন করে যোগদান বন্ধ রেখেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের সব পর্যায়ের ইউনিটে অন্য দল বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রবেশ আপাতত বন্ধ করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোন স্তরেরই কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি দলের এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড এব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। কোনভাবেই যেন বিশ্বাসঘাতকরা দলে পুনর্বাসিত হতে না পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, পট পরিবর্তনের পর নব্যরা ফের সক্রিয় হয়েছে, দলের নতুনদের ভীড় বাড়ছে। তবে মনে রাখতে হবে নিপীড়িতরাই দলের প্রাণ। যারা দেড় দশকে ঘুমিয়ে ছিলেন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছেন, নিজেরা দল করতে চেয়েছেন তাদের বিষয়ে তাদের বিষয়ে দল সতর্ক এবং যে কোন নতুন সদস্য দলের নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিশোধন করে নিতে হবে।
আলাল বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত তারা নিশ্চয় চাইবে বিশ্বাসঘাতকরা তাদের পাশের চেয়ারে বসবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, বিগত ১৭ বছরের মধ্যে ১/১১ সময় এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি ভাঙার সর্বোচ্চ চেষ্টা হয়েছে। ১/১১’র সময় দলের মূল নেতৃত্বকে মাইনাস করে সংস্কারপন্থীদের নেতৃত্বে বিএনপি পরিচালনার ষড়যন্ত্র করে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সরকার। আর ২০২৪’র জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় সেই নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে কিছু নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে নতুন দল গঠনের নানামুখি চেষ্টা চালানো হয়। সক্রিয় নেতাদের মধ্যে কেবল ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন এবং এমপি হন। আর নতুন দলে বিএনপি নেতাদের নেওয়ার উদ্যোগটিও মুখ থুবড়ে পড়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বলিষ্ট নেতৃত্বের কারণে। ফলে বিএনপি থেকে আগেই পদত্যাগ করা শমসের মোবিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে সাধারণ সম্পাদক করে তৃণমূল বিএনপি নামে কিংস পার্টিকে নির্বাচনে নেয় আওয়ামী লীগ।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে গতবছরের ৩০ নভেম্বর এমপি পদের লোভে প্রবীণ রাজনীতিবিদ বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতও হন। যে লোভে পড়ে বিএনপি ছেড়েছিলেন সেই এমপি পদে থাকতে পেরেছেন মাত্র ৬ মাস। এরইমধ্যে গত ৫ আগস্ট তার সরকারের পতন ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা।

এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে বিএনপির নতুন কমিটিতে ভাইস-চেয়ারম্যান পদ পান মোসাদ্দেক আলী ফালু। পদ পেয়েই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকার সময় অন্যতম প্রভাবশালী ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। কিন্তু দলের দুঃসময়ে তিনি ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেন ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা যাচ্ছে। পদত্যাগের পর থেকেই তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরেই অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, দেশে ফিরে এখন তিনি নতুন করে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলছেন। তার সাথে দলটির অনেক নেতা দেখা-সাক্ষাতও করছেন।

একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক এমপি এম এ হাসেম বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। এসময় তিনি জানান তিনি আর রাজনীতি করবেন না। ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ নেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে লেখা চিঠিতে অবসর নেওয়ার পাশাপাশি বিএনপির সব পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সেসময় তিনি বলেন, রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির কোনো পদে তিনি আর থাকছেন না।

খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো চিঠিতে শমসের বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি আর রাজনীতিতে থাকছেন না। রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। যেহেতু তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন, তাই বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কূটনীতিক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। ২০০৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান হন। সামরিক কর্মকর্তা থেকে আমলা ও পরে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা শমসের মবিন বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখভাল করা নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।

তবে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পৃষ্টপোষকতায় যে তৃণমূল বিএনপি গঠিত হয় সেটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন শমসের মোবিন চৌধুরী এবং নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। যদিও নির্বাচনে তার ভরাডুবি হয়েছে। তার ওই দলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এড. তৈমুর আলম খন্দকার। তিনিও নির্বাচনে অংশ নেন এবং ভরাডুবি হয়।

২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে বিএনপি ছাড়েন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। পদত্যাগপত্রে ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ কারণ উল্লেখ থাকলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অবজ্ঞা, মনোনয়ন না দেওয়া (২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে) এবং চট্টগ্রাম ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখার কারণেই দল ছাড়তে বাধ্য হন বলে দাবি করা হয়। মোরশেদ খান ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, এর পর জুন ’৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী। ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং শেখ হাসিনার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদও পান।
২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও খুলনার সাবেক এমপি আলী আসগার লবী। শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে দলের মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র দেন তিনি।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিএনপি থেকে এবার পদত্যাগ করেন দলটির কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা। শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন ব্যবসায়িক ব্যস্ততা বাড়ার পাশাপাশি শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আমার রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। সেহেতু আমি রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মিজানুর রহমান সিনহা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

২০২১ সালের ২৮ জুন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হানিফ এবং কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত শাহজাহান মিয়া। পদত্যাগপত্রে অবসরপ্রাপ্ত শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি মো. শাহজাহান মিয়া বিএনপির ২০১৬ সালের কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। আমি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। স্বাস্থ্যগত কারণে আমি গত ২৮ জুন বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।

২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শোকরানা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ বিএনপির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. সাহাব উদ্দিন দলের সকল পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপি যখন আওয়ামী সরকারের অধীনে তামাশার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়, সেটি অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন মনিরুল হক সাক্কু। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ মে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, পটপরিবর্তনের পর ইতোমধ্যে সুযোগসন্ধানিদের ভীড় বেড়েছে। তবে দুঃসময়ে দল ছেড়ে যারা চলে গেছে তাদের কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। তাদের আর দলে কোন দরকার নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদেরকেও আগামীতে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আত্মসার্থ, ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দল বদল করা লজ্জাজনক। তবে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিএনপির সাথে অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যারাই এটি করেছে তাদের কারো পরিণতি ভালো হয়নি। আর বিএনপিরও দল হিসেবে কোন ক্ষতি হয়নি।

তিনি বলেন, দল ছেড়ে যারা ফিরতে চান তাদের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত কঠোর ও আপোষহীন। একইসঙ্গে দলের নেতাকর্মীরাও চায়না তারা দলে ফিরুক। কারণ তাদের দলে কোন প্রয়োজন নেই।