ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদের ট্রাভেল পাসের মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর (রোববার) সালাউদ্দিনের ট্রাভেল পাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও নতুন ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেননি তিনি।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত নতুন ট্রাভেল পাসের জন্য সালাউদ্দিনের আবেদন না করার তথ্য ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে গুয়াহাটির বাংলাদেশ মিশন। মিশনের সহকারী হাইকমিশনার রুহুল আমিন জানান, তিনি (সালাউদ্দিন) এখনও ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেননি। তাকে তিন মাসের জন্য ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়েছে। তিনি যদি নতুন করে আবার আবেদন করেন, পুনরায় ট্রাভেল পাস দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সালাউদ্দিন নতুন করে ট্রাভেল পাস না নিলে ভারতে অবস্থান করতে পারবেন কি না বা দেশটির আইন অনুযায়ী তার গ্রেপ্তারের সম্ভবনা রয়েছে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী হাইকমিশনার বলেন, আমি শুধু বলতে পারি, তিন মাসের জন্য ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়েছে। তিনি ভারতে রয়েছেন। এখানে মেঘালয় সরকার আছে, ভারত সরকার আছে; এটা তাদের বিষয়।
গত ১২ জুন গুয়াহাটির বাংলাদেশ মিশন থেকে সালাউদ্দিনের জন্য ইস্যু করা ট্রাভেল পাসে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে তাকে দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে ভারতে অবস্থান করছেন। সালাউদ্দিনের দেশে না ফেরা নিয়ে নানা কথা রয়েছে দলটির মধ্যে। দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কে দেশে ফেরেননি তিনি। আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশে ফিরতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছেন সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিনের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিষয়টি সেনসেটিভ। যার জন্য এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এতটুকু বলতে পারি সালাউদ্দিনের দেশে ফেরার বিষয়টি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেখা হচ্ছে।
সালাউদ্দিনের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তার স্ত্রী কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসিনা আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওনার ফেরার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটা দলের সিনিয়র নেতারা বলতে পারবেন। তিনি কবে দেশে ফিরবেন, এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে ওনার কোনো কথা হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে স্বামীকে দেখতে ভারত যাওয়ার প্রশ্নে হাসিনা আহমেদ বলেন, না। গত কয়েক মাসে আমার যাওয়া হয়নি। এ মুহূর্তে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
নতুন করে ট্রাভেল পারমিট এবং দেশের বিষয়ে জানতে সালাউদ্দিনের ভারতীয় মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল এবং বার্তা পাঠানো হয়। তবে তার কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। সবশেষ, আগস্টের শুরুতে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় সালাউদ্দিনের। সে সময় তিনি জানান, তিনি অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য শিলং থেকে দিল্লিতে এসেছেন।
এদিকে, গুয়াহাটির বাংলাদেশ মিশন গত ৫ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তবে ভিসা আবেদন জমা নিচ্ছে মিশন। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন যদি নতুন ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেন, তা হাতে পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সালাহউদ্দিনের দ্বিতীয় দফায় ট্রাভেল পাস দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভূমিকা বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন যে আইন আছে, সে অনুযায়ী আমাদের যে অনুরোধ করবে আমরা সেটাই রাখব।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। বিএনপি নেতা দেশে ফেরত না আসতে চাইলে তাকে ওই চুক্তির আওতায় ফেরানো হবে কি না -জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় দেশে আসতে চেয়েছেন। উনি যদি না আসে, আমরা ভবিষ্যতে দেখব।
সালাউদ্দিনের দেশে ফেরা নিয়ে দলেও আলোচনা নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের দেশে ফেরা নিয়ে দলটির মধ্যে কোনো আলোচনা হয় না বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সালাউদ্দিনের বিষয়ে দেখভাল করছেন। তারেক রহমান বলতে পারবেন সালাউদ্দিন আহমেদ কবে ফিরবেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির একটি সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে সালাউদ্দিন দেশে ফিরবেন না। কারণ, দেশে ফিরলে তার গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে একটা মীমাংসার জায়গা পৌঁছানো সম্ভব হলেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা যায়।
দলটির অন্য আরেকটি সূত্র জানায়, ভারতে অবস্থানরত সালাউদ্দিন দলটির পক্ষে কিছু কূটনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।
সালাউদ্দিনের ওপর রাগ রয়েছে খালেদার
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের ওপর খোদ দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট বলে দলটি নেতাদের থেকে তথ্য মিলছে। দলটির একটি সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক সময় সালাউদ্দিনকে খুব পছন্দ করতেন। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ সালাউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হলে চিন্তিত হয়ে পড়েন চেয়ারপারসন। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সালাউদ্দিনকে ফিরিয়ে দিতে সংবাদ সম্মেলনে করেন খালেদা জিয়া। তার কিছুদিন পর ভারতের শিলংয়ে খোঁজ মেলে সালাউদ্দিনের।
দলটির সূত্র আরও জানায়, সালাউদ্দিন যখন ভারতে উদ্ধার হয় তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। পরে খালেদা জিয়া তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করেন। কিন্তু ভারতে তাকে বিএনপির এক নেতা দেখতে গেলে সালাউদ্দিনকে বলেন, আমাকে নিয়ে ম্যাডাম সংবাদ সম্মেলনে না করলে আমি বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার হতাম। সালাউদ্দিনের ওই কথা বিএনপির চেয়ারপারসনের কানে আসে। এরপর থেকে সালাউদ্দিনের ওপর রেগে আছেন দলটির চেয়ারপারসন। সেজন্য তাকে দেখতে দলটির কোনো শীর্ষ কোনো নেতা ভারত যায়নি।
এছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সালাউদ্দিন আহমেদ মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ছিল বলেও ইঙ্গিত মিলেছে সূত্র থেকে।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন। ওই বছরের ১১ মে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করে শিলংয়ের পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে সালাউদ্দিনকে খালাস দেন ভারতের একটি আদালত। তবে আদালতের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে থেমে যায় সালাউদ্দিনের দেশে ফেরা।
প্রায় সাত বছর বিচার চলার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। তিনি বেকসুর খালাস পান। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় সালাউদ্দিন দেশে ফিরতে পারছিলেন না। পরে ট্রাভেল পারমিটের জন্য গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেন।
সালাউদ্দিন আহমদ ১৯৯১ সালে বিএনপির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। তাকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। মেঘালয়ে যখন আটক হন তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে।