হাওর বার্তা ডেস্কঃ গহিন হাওরের বুকজুড়ে ছুটে চলছে লাল ও কালো রঙের দুটি চার চাকার গাড়ি। গাড়ি দুটি ছুটে চলার এই দৃশ্য দেখতে রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমিয়েছেন হাজারও মানুষ।
ঘণ্টাখানেক পর গাড়িগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে হাজির হয়। সে সময়ও এগুলোর চারপাশে জড়ো হয় ছেলে বুড়োসহ শত শত মানুষ। তাদের চোখেমুখে অন্য রকম এক আনন্দ।
আনন্দময় স্মৃতিকে ধরে রাখতে অনেকে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন। কেউ কেউ গিয়ে বসেন গাড়ির সিটেও।
‘বিরল দৃশ্য’ এজন্যই যে, ওই দুটি গাড়িই খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের মাটিতে চলা প্রথম কোনো চার চাকার গাড়ি। অর্থাৎ এর আগে আর কোনো দিন এই উপজেলা সদরে প্রাইভেট কার, জিপ কিংবা ট্রাক পৌঁছেনি।
অবশ্য খুব সহজে গাড়িগুলো সেখানে পৌঁছেনি। পোহাতে হয়েছে নানা ঝক্কিঝামেলাও। নৌকায় পার করতে হয়েছে ধনু নদী। আর সে জন্য কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থেকে আনতে হয়েছে ইঞ্জিনচালিত প্রশস্ত নৌকা। নদীর পাড়ে নির্মাণ করতে হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক।
আর এমন ঝক্কি মোকাবিলা করতে হয়েছে ফাইজার কোম্পানির কোভিড-১৯ টিকা পৌঁছাতে গিয়েই।
ফাইজার টিকা সরবরাহ করতে হয় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রার গাড়িতে করে। কিন্তু রাস্তার অভাবে দুর্গম জনপদ খালিয়াজুরীতে গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয়।
এমন চিন্তা করে খালিয়াজুরীর টিকা কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলা সদরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বাদ সাধে উপজেলাবাসী। তারা ৩০ কিলোমিটার দূরে মদনে গিয়ে টিকা গ্রহণে আপত্তি জানান। তারা যে কোনো উপায়ে খালিয়াজুরীতে টিকা পৌঁছানোর অনুরোধ করেন।
এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম। তিনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষায়িত গাড়ি দিয়েই খালিয়াজুরীতে টিকা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেন।
টিকা নিয়ে যাওয়া গাড়ি দুটির মধ্যে লাল রঙের গাড়িটি খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। আর কালো রঙের গাড়িটি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও খালিয়াজুরী উপজেলা সদরে এর আগে কোনো দিন তাদের গাড়ি পৌঁছায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে টিকা নিতে অনেকে আপত্তি তোলায় আমরা এ চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিলাম। আমরা তাতে সফল হয়েছি। শুধু গাড়ি পৌঁছাইনি, টিকাগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার জন্য আমরা একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেরও ব্যবস্থা করেছি।’
খালিয়াজুরী সদরের পুরানহাটি গ্রামের তরুণ মহসিন মিয়া বলেন, ‘খালিয়াজুরীর যোগাযোগব্যবস্থা এখনও দেশের যে কোনো উপজেলার চেয়ে অনেক দুর্গম। ২০১৭ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন খালিয়াজুরী উপজেলা সদর সফর করেন, তখন তার গাড়িও আনা সম্ভব হয়নি। তিনি হেলিকপ্টারে এসেছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর একটি সাধারণ রিকশায় চড়েন।’
উপজেলার বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জহরলাল দেব রায় বলেন, ‘খালিয়াজুরী সদরে আজই প্রথম চার চাকার গাড়ি দেখলাম। এ দিনটির কথা সারাজীবন মনে থাকবে।