ঢাকা ১২:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

আমার মেয়ের নিরাপত্তা দেবে কে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬
  • ৬৪৬ বার

খুজিস্তা নূর ই নাহারীন মুন্নী:

তনুর মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল দেশ, তার রেশ শেষ হতে না হতেই ৫ বছরের শিশু পাশবিক যৌন নির্যাতনের শিকার। তাঁর কান্না থামতে না থামতেই দুই বোনকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ। এ কোন সভ্যতা ? একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমন লোমহর্ষক বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। এ ভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে আর কত বাবার বুকে বোবা কান্না গুমরে গুমরে উঠবে !
দেশে আবারও বেড়েছে খুন আর ধর্ষণ। প্রথমে ধর্ষণ, অতঃপর অন্যায়কে ধামাচাপা দিতে খুন। লক্ষ্মীপুরে দুই বোনকে উঠিয়ে নিয়ে একসাথে ধর্ষণ। নারায়ণগঞ্জে ৪০ বছরের পুরুষ কর্তৃক ৫ বছর বয়সের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ। তনু হত্যা রহস্য এতো প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরেও কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না আজ অবধিও । আমরা কি এক অস্থির অসুস্থ সময় পার করছি, যেখানে প্রতিটি কন্যা শিশুর মায়েরা প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ভিতর দিয়ে কাল অতিবাহিত করছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন আমার কন্যার সুরক্ষা কে দিবে ?
বর্তমান অধঃপতিত সমাজ ব্যবস্থায় কোন কোন অসহিস্নু পুরুষ এতোটাই হিংস্র আর উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছে যে জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্য কোন নীতি নৈতিকতার ধার ধারছে না। তাঁদের পৈশাচিকতা সর্বকালের নৃশংসতাকে হার মানাচ্ছে । পশুরাও জৈবিক তাড়নায় সঙ্গীকে সুখী দেখতে চায়। কিন্তু ধর্ষকামী পুরুষ নারীর চোখের ঘৃণা, আতঙ্ক, তীব্র মানসিক কষ্ট দেখে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায়। তাঁর আনন্দ তীব্রতা পায় বর্বরোচিত হত্যা কাণ্ডের মধ্য দিয়ে ।

আমরা এ কোন দেশে বাস করছি যেখানে নারীর সম্ভ্রমের এক মুহূর্তের নিশ্চয়তা নেই ! একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এক হাজার মামলার মধ্যে বিচারের মুখ দেখে মাত্র একটি। এই জন্য ধর্ষকরা অন্যায় করে নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পেশী শক্তি অথবা টাকার কাছে অসহায় দরিদ্র মানুষ ভয়ে মামলা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয় । অনেক সময় মামলার দীর্ঘসূত্রতায় ভিকটিম ক্লান্ত হয়ে হার মেনে নেয়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় আমরা এখনও আওয়ামে জাহিলিয়াত যুগে বসবাস করছি। যেখানে নারী মানেই অসহায়, কেবলই ভোগের বস্তু, কেবলই পণ্য।

বর্তমানের আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, সহজলভ্য পর্ণ সিনেমা নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন সহ সব রকম অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতায় ব্যস্ততা বাড়ার সাথে সাথে পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন গুলো খানিকটা আলগা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরতায় প্রতিনিয়ত ঘটছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। উপরন্তু আমাদের দেশের সীমানা দিয়ে মাদকের অনুপ্রবেশ, অবাধ মাদক বাণিজ্য সর্বোপরি মাদকের সহজলভ্যতায় আমাদের দেশের একটি অংশ নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্ত পুরুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যে কোন অপরাধ সংঘটিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করে না।

ধর্ষণ বন্ধ করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে ড্রাগ ডিলার দের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে পৃথক আদালতে অতি দ্রুত বিচার নিষ্পন্ন করার মাধ্যমে ধর্ষকদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিচার হীনতার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নারী এবং কন্যা শিশুদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পাঠ্য পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে আত্ম রক্ষার কৌশল শিক্ষা দিতে হবে।

লালমনিরহাটে একজন পিতা কন্যা সন্তান জন্ম দানের অপরাধে স্ত্রীকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। কারণ কন্যা মানেই যৌতুক, বোঝা, নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী। যেন কন্যা মানেই অপরাধ অপমান, নিগ্রহ আর যন্ত্রণা।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী , বিরোধী দলের নেত্রী,স্পিকার নারী । কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য প্রান্তিক তথা দেশের আপামর নারী সমাজের ভাগ্যের এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়নি। আজও ভাগ্য বিড়ম্বিতা নারীকুল রাতের নিস্তব্ধতায় নিভৃতে কেঁদে বালিশ ভেজায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতা নারী সমাজে নিজের এবং পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে তাঁদের বিচারের দাবী আদালত পর্যন্ত কাঠগড়ায় এসে পৌঁছতে সক্ষম হয় না।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও নারীরা আজও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাঁরা ক্রুশ বিদ্ধ যিশুর মত যন্ত্রণায় ছট ফট করবে, নির্যাতিত হবে, ধর্ষিত হবে। এটাই তাঁদের নিয়তি।

নারীকে অধঃস্থ নয় সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তনই এই সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

আমার মেয়ের নিরাপত্তা দেবে কে

আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬

খুজিস্তা নূর ই নাহারীন মুন্নী:

তনুর মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল দেশ, তার রেশ শেষ হতে না হতেই ৫ বছরের শিশু পাশবিক যৌন নির্যাতনের শিকার। তাঁর কান্না থামতে না থামতেই দুই বোনকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ। এ কোন সভ্যতা ? একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমন লোমহর্ষক বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। এ ভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে আর কত বাবার বুকে বোবা কান্না গুমরে গুমরে উঠবে !
দেশে আবারও বেড়েছে খুন আর ধর্ষণ। প্রথমে ধর্ষণ, অতঃপর অন্যায়কে ধামাচাপা দিতে খুন। লক্ষ্মীপুরে দুই বোনকে উঠিয়ে নিয়ে একসাথে ধর্ষণ। নারায়ণগঞ্জে ৪০ বছরের পুরুষ কর্তৃক ৫ বছর বয়সের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ। তনু হত্যা রহস্য এতো প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরেও কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না আজ অবধিও । আমরা কি এক অস্থির অসুস্থ সময় পার করছি, যেখানে প্রতিটি কন্যা শিশুর মায়েরা প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ভিতর দিয়ে কাল অতিবাহিত করছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন আমার কন্যার সুরক্ষা কে দিবে ?
বর্তমান অধঃপতিত সমাজ ব্যবস্থায় কোন কোন অসহিস্নু পুরুষ এতোটাই হিংস্র আর উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছে যে জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্য কোন নীতি নৈতিকতার ধার ধারছে না। তাঁদের পৈশাচিকতা সর্বকালের নৃশংসতাকে হার মানাচ্ছে । পশুরাও জৈবিক তাড়নায় সঙ্গীকে সুখী দেখতে চায়। কিন্তু ধর্ষকামী পুরুষ নারীর চোখের ঘৃণা, আতঙ্ক, তীব্র মানসিক কষ্ট দেখে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায়। তাঁর আনন্দ তীব্রতা পায় বর্বরোচিত হত্যা কাণ্ডের মধ্য দিয়ে ।

আমরা এ কোন দেশে বাস করছি যেখানে নারীর সম্ভ্রমের এক মুহূর্তের নিশ্চয়তা নেই ! একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এক হাজার মামলার মধ্যে বিচারের মুখ দেখে মাত্র একটি। এই জন্য ধর্ষকরা অন্যায় করে নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পেশী শক্তি অথবা টাকার কাছে অসহায় দরিদ্র মানুষ ভয়ে মামলা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয় । অনেক সময় মামলার দীর্ঘসূত্রতায় ভিকটিম ক্লান্ত হয়ে হার মেনে নেয়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় আমরা এখনও আওয়ামে জাহিলিয়াত যুগে বসবাস করছি। যেখানে নারী মানেই অসহায়, কেবলই ভোগের বস্তু, কেবলই পণ্য।

বর্তমানের আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, সহজলভ্য পর্ণ সিনেমা নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন সহ সব রকম অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতায় ব্যস্ততা বাড়ার সাথে সাথে পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন গুলো খানিকটা আলগা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরতায় প্রতিনিয়ত ঘটছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। উপরন্তু আমাদের দেশের সীমানা দিয়ে মাদকের অনুপ্রবেশ, অবাধ মাদক বাণিজ্য সর্বোপরি মাদকের সহজলভ্যতায় আমাদের দেশের একটি অংশ নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্ত পুরুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যে কোন অপরাধ সংঘটিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করে না।

ধর্ষণ বন্ধ করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে ড্রাগ ডিলার দের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে পৃথক আদালতে অতি দ্রুত বিচার নিষ্পন্ন করার মাধ্যমে ধর্ষকদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিচার হীনতার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নারী এবং কন্যা শিশুদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পাঠ্য পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে আত্ম রক্ষার কৌশল শিক্ষা দিতে হবে।

লালমনিরহাটে একজন পিতা কন্যা সন্তান জন্ম দানের অপরাধে স্ত্রীকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। কারণ কন্যা মানেই যৌতুক, বোঝা, নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী। যেন কন্যা মানেই অপরাধ অপমান, নিগ্রহ আর যন্ত্রণা।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী , বিরোধী দলের নেত্রী,স্পিকার নারী । কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য প্রান্তিক তথা দেশের আপামর নারী সমাজের ভাগ্যের এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়নি। আজও ভাগ্য বিড়ম্বিতা নারীকুল রাতের নিস্তব্ধতায় নিভৃতে কেঁদে বালিশ ভেজায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতা নারী সমাজে নিজের এবং পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে তাঁদের বিচারের দাবী আদালত পর্যন্ত কাঠগড়ায় এসে পৌঁছতে সক্ষম হয় না।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও নারীরা আজও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাঁরা ক্রুশ বিদ্ধ যিশুর মত যন্ত্রণায় ছট ফট করবে, নির্যাতিত হবে, ধর্ষিত হবে। এটাই তাঁদের নিয়তি।

নারীকে অধঃস্থ নয় সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তনই এই সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।