ঢাকা ০২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা: আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মার্চ ২০২১
  • ১৬০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের খানসামায় মাটির উর্বরতার সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অন্যান্য সবজির পাশাপাশি রবি শষ্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলতে উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল চাষে অপার সম্ভবনা থাকায় কৃষকদের আগ্রহও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার দুহশুহ, নেউলা, হোসেনপুর ও ভান্ডারদহ গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, ধান, ভুট্টা ও গমের আবাদের সাথে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে আসছে দর্শনার্থীরাও।

সূর্য যখন যেদিকে হেলে যায়, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে থাকে, যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে আর সেলফি ওঠাতে ব্যস্ত থাকে।

খানসামা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১২০ জন কৃষক ১২০ বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ১২০ বিঘা জমিতে ১২০ জন কৃষককে বীজ ও প্রযুক্তিসহ কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এর আবাদ শুরু হয়েছে।

সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

উপজেলার নেউলা গ্রামের কৃষক সাফিয়ার রহমান জানান, টেলিভিশনে দেখে এ ফুল চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে কৃষি অফিসের সহায়তায় বীজ পেয়ে ১ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছি। সার, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে বিঘাপ্রতি সূর্যমুখী চাষে খরচ হবে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যাবে।

ভান্ডারদহ গ্রামের নুরল ইসলাম জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয়। কিন্তু সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। সূর্যমুখীর কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করা যাবে, যা থেকে বাড়তি একটা লাভ মিলবে। তাছাড়া এটি চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। শুধুমাত্র দুটি সেচ দিলে এবং ফুলগুলো একটু পর্যবেক্ষণ করলেই হলো।

সূর্যমুখী ফুল চাষী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন জানান, উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। এর আগে কখনও বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়নি। অনেকেই সৌন্দর্যবর্ধনকারী ফুল হিসেবে বাড়ির আঙিনায় এটা লাগিয়ে থাকতেন। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী এই প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অনেক কৃষকই এটার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামীতে স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপকতা অনেক বাড়বে এবং কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ.ম. জাহেদুল ইসলাম ও কেরামত আলী জানান, বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর ১৪ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যে কারণে আমাদের দেশের প্রচুর পরিমাণ মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সেটি নিরসনে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে এর চাষ শুরু করেছে। আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী ফুল এখানে চাষ হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়তই প্লটগুলো পর্যবেক্ষণ করছি ও বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। কৃষকদের কাছ থেকে কোম্পানি সরাসরি এর বীজ কিনে নিবেন।

কৃষকদের সঙ্গে কোম্পানির প্রতিনিধিদের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে কৃষকরা এটি কোথায় বিক্রি করবে, সেটি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না। আগামী বছরই এই এলাকায় হাজার বিঘা জমিতে এর চাষ হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা: আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

আপডেট টাইম : ০৯:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের খানসামায় মাটির উর্বরতার সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অন্যান্য সবজির পাশাপাশি রবি শষ্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলতে উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল চাষে অপার সম্ভবনা থাকায় কৃষকদের আগ্রহও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার দুহশুহ, নেউলা, হোসেনপুর ও ভান্ডারদহ গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, ধান, ভুট্টা ও গমের আবাদের সাথে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে আসছে দর্শনার্থীরাও।

সূর্য যখন যেদিকে হেলে যায়, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে থাকে, যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে আর সেলফি ওঠাতে ব্যস্ত থাকে।

খানসামা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১২০ জন কৃষক ১২০ বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ১২০ বিঘা জমিতে ১২০ জন কৃষককে বীজ ও প্রযুক্তিসহ কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এর আবাদ শুরু হয়েছে।

সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

উপজেলার নেউলা গ্রামের কৃষক সাফিয়ার রহমান জানান, টেলিভিশনে দেখে এ ফুল চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে কৃষি অফিসের সহায়তায় বীজ পেয়ে ১ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছি। সার, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে বিঘাপ্রতি সূর্যমুখী চাষে খরচ হবে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যাবে।

ভান্ডারদহ গ্রামের নুরল ইসলাম জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয়। কিন্তু সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। সূর্যমুখীর কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করা যাবে, যা থেকে বাড়তি একটা লাভ মিলবে। তাছাড়া এটি চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। শুধুমাত্র দুটি সেচ দিলে এবং ফুলগুলো একটু পর্যবেক্ষণ করলেই হলো।

সূর্যমুখী ফুল চাষী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন জানান, উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। এর আগে কখনও বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়নি। অনেকেই সৌন্দর্যবর্ধনকারী ফুল হিসেবে বাড়ির আঙিনায় এটা লাগিয়ে থাকতেন। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী এই প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অনেক কৃষকই এটার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামীতে স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপকতা অনেক বাড়বে এবং কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ.ম. জাহেদুল ইসলাম ও কেরামত আলী জানান, বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর ১৪ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যে কারণে আমাদের দেশের প্রচুর পরিমাণ মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সেটি নিরসনে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে এর চাষ শুরু করেছে। আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী ফুল এখানে চাষ হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়তই প্লটগুলো পর্যবেক্ষণ করছি ও বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। কৃষকদের কাছ থেকে কোম্পানি সরাসরি এর বীজ কিনে নিবেন।

কৃষকদের সঙ্গে কোম্পানির প্রতিনিধিদের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে কৃষকরা এটি কোথায় বিক্রি করবে, সেটি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না। আগামী বছরই এই এলাকায় হাজার বিঘা জমিতে এর চাষ হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায়।