ঢাকা ০২:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

পাহাড়ে বাড়ছে চাষ বেশি দাম, তাই কাজুবাদাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ২৫৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাহাড়ে পাহাড়ে আদা, হলুদ, কলা, আনারস। সঙ্গে জুমে হরেক ফসলের আবাদ। সুদীর্ঘকাল থেকেই পাহাড়ে চলছে এসব ফসল আর ফলফলাদির চাষবাস। এখন দিন বদলেছে। এসেছে ফসলের নানা বৈচিত্র্য। পাহাড়ে এবার কাজুবাদাম দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন। এক দশক আগেও পাহাড়ে উৎপাদিত কাঁচা কাজুবাদাম ছিল ফেলনা। তবে এখনকার ছবি একেবারেই আলাদা। অনেক চাষি পাহাড়ের ঢালে কলা-আদা চাষের বদলে কাজুবাদামের চারা রোপণে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, কলা-আদা চাষে মাটির ক্ষতি হয়। এ ছাড়া বাদাম দামি ফসল। তাই বাদাম চাষই বেশি লাভজনক। এ অঞ্চলের সাধারণ কৃষক কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টনপ্রতি এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পকেটে পোরেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বৃক্ষজাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান বর্তমানে তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলের মধ্যে কাজু রয়েছে প্রথম স্থানে। এ রকম প্রেক্ষাপটে কাজুবাদাম ও কফি চাষের উন্নয়নে ২১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষ উপযোগী জমি রয়েছে পাঁচ লাখ হেক্টর; এর বেশির ভাগ পার্বত্যাঞ্চলে। দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষ শুরু করা গেলে দেশে কাজুবাদামের উৎপাদন পাঁচ লাখ টনে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে বান্দরবানে এক হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। ২০১৮ সালে যেখানে দেশে ৯১৬ টন ফলন হয়েছিল, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৩২৩ টনে। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ফলন বেড়েছে ৩২ শতাংশ। পার্বত্যাঞ্চলের পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলেও এখন কাজুবাদাম চাষের প্রক্রিয়া চলছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বিশ্বে মোট ৫৯.৩০ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। কাজুবাদামের বাজার ৯.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই ৩.৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। কিন্তু সেই দেশে কাজু উৎপাদিত হয় পাঁচ লাখ টন; আরো ১৫ লাখ টন তারা আমদানি করে। কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির পর দেশে প্রক্রিয়াজাত এবং রপ্তানি করে ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে এখন শীর্ষে।

পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, তিন দশক আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের (কৃষি সম্প্রসারণ) সমন্বয়ে পার্বত্য এলাকায় কৃষকের উন্নয়নের জন্য অন্য ফলের সঙ্গে কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করা হয়। সময়ের হাত ধরে কাজুবাদামগাছ বড় হয়ে ফল দিতে থাকে। কিন্তু কাজুবাদামের বিক্রি, বাজারজাত বা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা তেমন একটা ছিল না। শুধু রাঙামাটিতে দেশীয় পদ্ধতিতে স্বল্প কিছু কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করা যেত। লোকসান গুনতে গুনতে একসময় কাজুবাদাম চাষ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় কৃষক।

চাষিরা যা বলছেন : পাহাড়ের ঢালে আদা-কলা চাষে দীর্ঘ সময় মজে ছিলেন রনেল চাকমা। তাঁর চোখে এবার নতুন স্বপ্ন। এখন রনেলের সুবজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে উঁকি দিচ্ছে কাজুবাদাম। রাঙামাটি শহরের মনোঘর এলাকায় তিনি গত জুলাইয়ে এক একরের পাহাড়ে কাজুর বাগান করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাদাম চাষে আমার তেমন কোনো খরচ নেই। অন্য গাছের মতো পরিচর্যা করলেই ফলন আসে। বেশ ভালো দামও পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাদাম চাষে ঢালু মাটির ক্ষয় ও ক্ষতি হয় কম। তবে আমি একা হলে হয়তো নতুন এই চাষে সাহস পেতাম না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানাভাবে আমাকে সহযোগিতা করছে।’

একই কথা বললেন খাগড়াছড়ির চাষি মজিবুর রহমান। মজিবুর বলেন, ‘কাজু নির্ঝঞ্ঝাটের চাষ। আমাদের বিশেষ কিছুই করতে হয় না। গাছের ফাঁকে ফাঁকে অন্য ফসলও চাষ করা যায়। তবে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কষ্টসাধ্য। প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে বড় বাগানও গড়ে উঠছে না।’

কৃষি গবেষকদের কথা : রাঙামাটির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন জানান, ২০১০ সালে শাকিল আহমেদ নামের এক উদ্যোক্তা বাগান থেকে কুড়িয়ে নেওয়ার খরচ দিয়ে দুই ট্রাক কাঁচা বাদাম রপ্তানির উদ্যোগ নেন। এরপর তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন একটি প্রক্রিয়াজাত কারখানা করেছেন। এ ছাড়া বান্দরবানেও আরেকটি কারখানা হয়েছে। সেখানেও বাদাম প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে।

বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকায় কৃষি মন্ত্রণালয়ও এই খাতে মনোযোগ দিয়েছে। চারা বিতরণ, প্রশিক্ষণ দেওয়া, কৃষি গ্রুপ তৈরি করা, গবেষণাকেন্দ্রগুলোতে বাগান তৈরি করা, নতুন জাত উদ্ভাবনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে আলাদা একটি প্রকল্পও তৈরি করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে যাতে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সে জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি শুল্কমুক্ত করতে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির ওপর শুল্কহার প্রায় ৯০ থেকে নামিয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশে নিয়ে আসতে এনবিআর সম্মত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে একদম শুল্কমুক্ত করে দেওয়া হবে।

শুধু প্রক্রিয়াজাত নয়, দেশে কাজুবাদাম চাষ জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে রাঙামাটির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেন, গেল বছর কৃষকের মধ্যে ৫০ হাজার কাজুবাদামের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কম্বোডিয়া থেকে প্রায় পাঁচ টন হাইব্রিড কাজুবাদামের বীজ আমদানিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এই বীজের মাধ্যমে প্রায় ছয় লাখ চারা উৎপাদন সম্ভব হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

পাহাড়ে বাড়ছে চাষ বেশি দাম, তাই কাজুবাদাম

আপডেট টাইম : ০৮:৩০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাহাড়ে পাহাড়ে আদা, হলুদ, কলা, আনারস। সঙ্গে জুমে হরেক ফসলের আবাদ। সুদীর্ঘকাল থেকেই পাহাড়ে চলছে এসব ফসল আর ফলফলাদির চাষবাস। এখন দিন বদলেছে। এসেছে ফসলের নানা বৈচিত্র্য। পাহাড়ে এবার কাজুবাদাম দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন। এক দশক আগেও পাহাড়ে উৎপাদিত কাঁচা কাজুবাদাম ছিল ফেলনা। তবে এখনকার ছবি একেবারেই আলাদা। অনেক চাষি পাহাড়ের ঢালে কলা-আদা চাষের বদলে কাজুবাদামের চারা রোপণে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, কলা-আদা চাষে মাটির ক্ষতি হয়। এ ছাড়া বাদাম দামি ফসল। তাই বাদাম চাষই বেশি লাভজনক। এ অঞ্চলের সাধারণ কৃষক কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টনপ্রতি এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পকেটে পোরেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বৃক্ষজাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান বর্তমানে তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলের মধ্যে কাজু রয়েছে প্রথম স্থানে। এ রকম প্রেক্ষাপটে কাজুবাদাম ও কফি চাষের উন্নয়নে ২১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষ উপযোগী জমি রয়েছে পাঁচ লাখ হেক্টর; এর বেশির ভাগ পার্বত্যাঞ্চলে। দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষ শুরু করা গেলে দেশে কাজুবাদামের উৎপাদন পাঁচ লাখ টনে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে বান্দরবানে এক হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। ২০১৮ সালে যেখানে দেশে ৯১৬ টন ফলন হয়েছিল, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৩২৩ টনে। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ফলন বেড়েছে ৩২ শতাংশ। পার্বত্যাঞ্চলের পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলেও এখন কাজুবাদাম চাষের প্রক্রিয়া চলছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বিশ্বে মোট ৫৯.৩০ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। কাজুবাদামের বাজার ৯.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই ৩.৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। কিন্তু সেই দেশে কাজু উৎপাদিত হয় পাঁচ লাখ টন; আরো ১৫ লাখ টন তারা আমদানি করে। কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির পর দেশে প্রক্রিয়াজাত এবং রপ্তানি করে ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে এখন শীর্ষে।

পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, তিন দশক আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের (কৃষি সম্প্রসারণ) সমন্বয়ে পার্বত্য এলাকায় কৃষকের উন্নয়নের জন্য অন্য ফলের সঙ্গে কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করা হয়। সময়ের হাত ধরে কাজুবাদামগাছ বড় হয়ে ফল দিতে থাকে। কিন্তু কাজুবাদামের বিক্রি, বাজারজাত বা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা তেমন একটা ছিল না। শুধু রাঙামাটিতে দেশীয় পদ্ধতিতে স্বল্প কিছু কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করা যেত। লোকসান গুনতে গুনতে একসময় কাজুবাদাম চাষ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় কৃষক।

চাষিরা যা বলছেন : পাহাড়ের ঢালে আদা-কলা চাষে দীর্ঘ সময় মজে ছিলেন রনেল চাকমা। তাঁর চোখে এবার নতুন স্বপ্ন। এখন রনেলের সুবজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে উঁকি দিচ্ছে কাজুবাদাম। রাঙামাটি শহরের মনোঘর এলাকায় তিনি গত জুলাইয়ে এক একরের পাহাড়ে কাজুর বাগান করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাদাম চাষে আমার তেমন কোনো খরচ নেই। অন্য গাছের মতো পরিচর্যা করলেই ফলন আসে। বেশ ভালো দামও পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাদাম চাষে ঢালু মাটির ক্ষয় ও ক্ষতি হয় কম। তবে আমি একা হলে হয়তো নতুন এই চাষে সাহস পেতাম না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানাভাবে আমাকে সহযোগিতা করছে।’

একই কথা বললেন খাগড়াছড়ির চাষি মজিবুর রহমান। মজিবুর বলেন, ‘কাজু নির্ঝঞ্ঝাটের চাষ। আমাদের বিশেষ কিছুই করতে হয় না। গাছের ফাঁকে ফাঁকে অন্য ফসলও চাষ করা যায়। তবে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কষ্টসাধ্য। প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে বড় বাগানও গড়ে উঠছে না।’

কৃষি গবেষকদের কথা : রাঙামাটির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন জানান, ২০১০ সালে শাকিল আহমেদ নামের এক উদ্যোক্তা বাগান থেকে কুড়িয়ে নেওয়ার খরচ দিয়ে দুই ট্রাক কাঁচা বাদাম রপ্তানির উদ্যোগ নেন। এরপর তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন একটি প্রক্রিয়াজাত কারখানা করেছেন। এ ছাড়া বান্দরবানেও আরেকটি কারখানা হয়েছে। সেখানেও বাদাম প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে।

বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকায় কৃষি মন্ত্রণালয়ও এই খাতে মনোযোগ দিয়েছে। চারা বিতরণ, প্রশিক্ষণ দেওয়া, কৃষি গ্রুপ তৈরি করা, গবেষণাকেন্দ্রগুলোতে বাগান তৈরি করা, নতুন জাত উদ্ভাবনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে আলাদা একটি প্রকল্পও তৈরি করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে যাতে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সে জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি শুল্কমুক্ত করতে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির ওপর শুল্কহার প্রায় ৯০ থেকে নামিয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশে নিয়ে আসতে এনবিআর সম্মত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে একদম শুল্কমুক্ত করে দেওয়া হবে।

শুধু প্রক্রিয়াজাত নয়, দেশে কাজুবাদাম চাষ জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে রাঙামাটির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেন, গেল বছর কৃষকের মধ্যে ৫০ হাজার কাজুবাদামের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কম্বোডিয়া থেকে প্রায় পাঁচ টন হাইব্রিড কাজুবাদামের বীজ আমদানিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এই বীজের মাধ্যমে প্রায় ছয় লাখ চারা উৎপাদন সম্ভব হবে।