ঢাকা ০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
তামিম-হেলসের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভিন্নমত বিএনপিসহ বেশির ভাগ দলের ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব

সবজির অভাবিত উৎপাদন আবাদ ৫ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমি : উৎপাদন ১ কোটি ৩৫ লাখ মে. টন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৫:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১
  • ১৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে এবার শীতকালীন সবজির অভাবিত উৎপাদন হয়েছে। ‘ভেজিটেবল জোন’ হিসেবে খ্যাত যশোর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, মেহেরপুর, রাজবাড়ি, ফরিদপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠ যেন এখন সবুজের গালিচা। শিম, বাধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, বেগুন, লাউ, পেপে, ধনেপাতা, বরবটি ও টমেটোসহ রকমারি সবজি চারদিকে। সবুজের এই জয়জয়কার শুধুই মাঠে নয়; পিছেয়ে নেই বাড়ির পাশের পতিত জমি ও আঙ্গিনা।

উৎপাদনের মতো প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে দামেও। ফলে সবুজের এই ঢেউয়ে রঙিন হয়েছে কৃষকের মন। যার সত্যতা পাওয়া যায় যশোর বারীনগরের চাষি কেরামত আলীর বক্তব্যেও। তিনি বলেন, এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও মোটামুটি ভালো। বাড়ির আঙ্গিনায় এক ইঞ্চি জমিও কেউ ফেলে রাখেননি।
যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক সবজি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। বছরের বারোমাসই সবজির পর সবজি আবাদ হয়। তবে শীতকালীন সবজি উৎপাদন বরাবরই বেশি হয়। সবজি অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। চাষিদের কথা, ‘আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করি, আমাদের লাভ হয় কম, অথচ পকেট ভারি হয় পাইকারী ব্যবসায়ী, মুনাফালোভী, মধ্যস্বত্বভোগীদের’। এই বিষয়টির সমাধান করা খুবই জরুরি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে ৫ লাখ ৬২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ মেট্রিক টন সবজি। মার্চ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আবাদ চলবে। এরপর শুরু হবে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদ। বারোমাসই কমবেশি সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। তার কথা, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় সবজির অভাবনীয় ফলন হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা ও সবজি চাষিদের কথা, চাষিদের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসন, বাজারজাতকরণের সমস্যার সমাধান, উৎপাদিত সবজির উপযুক্ত মূল্য পাবার নিশ্চয়তা ও পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করে সবজি সংরক্ষণ করা হলে সম্ভাবনাময় কৃষির এই খাতটি উজ্জল স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
যশোরের মাঠে সবজির ক্ষেতের দিকে তাকালে দেখা যায়, চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। শীতের সকালে কিষাণ কিষাণীরা সবজির ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। সবজি বিপ্লব ঘটাতে দারুণ ব্যতিব্যস্ত চাষিরা। তাদের ফুরসত নেই একদন্ড। কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে বহুগুণে। সবজিকে ঘিরে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে বহুদিন ধরেই। মাঠে এক কেজি ফুলকপি ৫/৬ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। একটা মাঝারি লাউ মাঠে ১০/১২ টাকা অথচ বাজারে ৩০/৩৫ টাকা। শিম এক কেজি মাঠমূল্য ১৫/২০ টাকা, বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০/৪৫ টাকা। অবশ্য মৌসুমের শুরুতে এক কেজি শিম ১শ’ টাকা বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। প্রায় সব সবজির ক্ষেত্রেই চাষিরা যে মাঠমূল্য পাচ্ছেন ভোক্তারা তার দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি মূল্যে সবজি ক্রয় করছেন। মাঝেখানে বেশি লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইং সূত্র জানায়, সারাদেশে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দু’টি মৌসুমে সবজি আবাদ হয় ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বড় অংশই হয় শীতকালে। স্বল্পসময়ে এবং কম খরচে সবজি আবাদ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা ব্যাপকভাবে আবাদ ও উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। সারাদেশে কয়েকটি ভেজিটেবল জোন আছে। তার মধ্যে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম। এখান থেকে সারাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ ভাগ সবজি যোগান হয়।
সরেজমিনে যশোরের বারীনগর, চুড়ামনকাঠি, আমবটতলা, তীরেরহাট, মানিকদিহী, ছাতিয়ানতলা, সানতলা, খাজুরা, বাহাদুরপুর, হাশিমপুর, ঝিনাইদহের বারোবাজার, কালীগঞ্জ, খালিশপুর, ভাটই, গোপালপুর, মাগুরার শালিখা, সীমাখালি, ফুলতলা ও সাত্ক্ষীরার কলারোয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সবজি এখন প্রধান ফসল হিসেবে আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। এই অঞ্চলের মাটি আসলে সবজি আবাদ ও উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। একটু যত্ম নিলেই সব ধরনের সবজিরই বাম্পার ফলন হয়। এ অঞ্চলের অনেক সবজি চাষি পানিতে ডুবে থাকা জমিতেও শিম উৎপাদন করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে বেশ আগে থেকেই।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তামিম-হেলসের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সবজির অভাবিত উৎপাদন আবাদ ৫ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমি : উৎপাদন ১ কোটি ৩৫ লাখ মে. টন

আপডেট টাইম : ১০:১৫:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে এবার শীতকালীন সবজির অভাবিত উৎপাদন হয়েছে। ‘ভেজিটেবল জোন’ হিসেবে খ্যাত যশোর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, মেহেরপুর, রাজবাড়ি, ফরিদপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠ যেন এখন সবুজের গালিচা। শিম, বাধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, বেগুন, লাউ, পেপে, ধনেপাতা, বরবটি ও টমেটোসহ রকমারি সবজি চারদিকে। সবুজের এই জয়জয়কার শুধুই মাঠে নয়; পিছেয়ে নেই বাড়ির পাশের পতিত জমি ও আঙ্গিনা।

উৎপাদনের মতো প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে দামেও। ফলে সবুজের এই ঢেউয়ে রঙিন হয়েছে কৃষকের মন। যার সত্যতা পাওয়া যায় যশোর বারীনগরের চাষি কেরামত আলীর বক্তব্যেও। তিনি বলেন, এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও মোটামুটি ভালো। বাড়ির আঙ্গিনায় এক ইঞ্চি জমিও কেউ ফেলে রাখেননি।
যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক সবজি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। বছরের বারোমাসই সবজির পর সবজি আবাদ হয়। তবে শীতকালীন সবজি উৎপাদন বরাবরই বেশি হয়। সবজি অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। চাষিদের কথা, ‘আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করি, আমাদের লাভ হয় কম, অথচ পকেট ভারি হয় পাইকারী ব্যবসায়ী, মুনাফালোভী, মধ্যস্বত্বভোগীদের’। এই বিষয়টির সমাধান করা খুবই জরুরি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে ৫ লাখ ৬২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ মেট্রিক টন সবজি। মার্চ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আবাদ চলবে। এরপর শুরু হবে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদ। বারোমাসই কমবেশি সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। তার কথা, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় সবজির অভাবনীয় ফলন হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা ও সবজি চাষিদের কথা, চাষিদের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসন, বাজারজাতকরণের সমস্যার সমাধান, উৎপাদিত সবজির উপযুক্ত মূল্য পাবার নিশ্চয়তা ও পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করে সবজি সংরক্ষণ করা হলে সম্ভাবনাময় কৃষির এই খাতটি উজ্জল স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
যশোরের মাঠে সবজির ক্ষেতের দিকে তাকালে দেখা যায়, চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। শীতের সকালে কিষাণ কিষাণীরা সবজির ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। সবজি বিপ্লব ঘটাতে দারুণ ব্যতিব্যস্ত চাষিরা। তাদের ফুরসত নেই একদন্ড। কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে বহুগুণে। সবজিকে ঘিরে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে বহুদিন ধরেই। মাঠে এক কেজি ফুলকপি ৫/৬ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। একটা মাঝারি লাউ মাঠে ১০/১২ টাকা অথচ বাজারে ৩০/৩৫ টাকা। শিম এক কেজি মাঠমূল্য ১৫/২০ টাকা, বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০/৪৫ টাকা। অবশ্য মৌসুমের শুরুতে এক কেজি শিম ১শ’ টাকা বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। প্রায় সব সবজির ক্ষেত্রেই চাষিরা যে মাঠমূল্য পাচ্ছেন ভোক্তারা তার দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি মূল্যে সবজি ক্রয় করছেন। মাঝেখানে বেশি লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইং সূত্র জানায়, সারাদেশে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দু’টি মৌসুমে সবজি আবাদ হয় ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বড় অংশই হয় শীতকালে। স্বল্পসময়ে এবং কম খরচে সবজি আবাদ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা ব্যাপকভাবে আবাদ ও উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। সারাদেশে কয়েকটি ভেজিটেবল জোন আছে। তার মধ্যে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম। এখান থেকে সারাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ ভাগ সবজি যোগান হয়।
সরেজমিনে যশোরের বারীনগর, চুড়ামনকাঠি, আমবটতলা, তীরেরহাট, মানিকদিহী, ছাতিয়ানতলা, সানতলা, খাজুরা, বাহাদুরপুর, হাশিমপুর, ঝিনাইদহের বারোবাজার, কালীগঞ্জ, খালিশপুর, ভাটই, গোপালপুর, মাগুরার শালিখা, সীমাখালি, ফুলতলা ও সাত্ক্ষীরার কলারোয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সবজি এখন প্রধান ফসল হিসেবে আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। এই অঞ্চলের মাটি আসলে সবজি আবাদ ও উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। একটু যত্ম নিলেই সব ধরনের সবজিরই বাম্পার ফলন হয়। এ অঞ্চলের অনেক সবজি চাষি পানিতে ডুবে থাকা জমিতেও শিম উৎপাদন করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে বেশ আগে থেকেই।