মাল্টা চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাল্টার চারা উৎপাদন শুরু করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তরুণ চাষী নাহিদ। জানা গেছে, বরেন্দ্র এলাকায় মাল্টা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। পেয়ারাসহ অন্যান্য ফলের চেয়ে মিষ্টি কমলা উৎপাদন খরচ কম এবং লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা মাল্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জামতলা এলাকায় মনামিনা কৃষি খামারে চাষী সাথী ফসল হিসেবে পেয়ারা বাগানে প্রায় ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত মাল্টা চাষ শুরু করেন। এতে প্রথম বছরেই ব্যাপক সাফল্য আসে। এখানে উৎপাদিত মাল্টা আমদানি করা ভারতীয় মাল্টার চেয়ে উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু হওয়ায় কৃষি বিভাগ সবগুলো মাল্টা খরিদ করে নিয়ে যায় বলে জানায় খামারের মালিক নাইজার আহমেদ নাহিদ। বর্তমানে মওসুম না হওয়া সত্বেও মাল্টা গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা ধরেছে। দেখা গেছে কোন কোন গাছে ফুলও বের হচ্ছে।
নাইজার আহমেদ নাহিদ আরও অধিক জমিতে মাল্টা চাষে পরিকল্পনা করেছেন। তার মাল্টা বাগান এবং উৎপাদন দেখে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আগ্রহীরা চারা নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন। চারা নিতে ও মাল্টা চাষের পদ্ধতি জানার জন্য মনামিনা কৃষি খামারের মালিক এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি কমকর্তার কাছে সরাসরি কিংবা মুঠোফোনের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিচ্ছেন অনেকেই। মনামিনা কৃষি খামার ঘুরে দেখা গেছে মতিউর রহমানের শিক্ষিত ছেলে নাইজার আহমেদ নাহিদ কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন। নারী শ্রমিকরা চারা তৈরীতে ব্যস্ত। জেলা সদর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকজন চাষী চারা নেওয়ার জন্য বায়না দিয়েছে। মেহেরপুর জেলার কয়েকজন চাষীও চারা নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছে। আমনুরায় গড়ে তোলা হয়েছে চারা তৈরীর নার্সারি। নাহিদ জানান, আগামী মওসুমের জন্য চারা তৈরির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে ২ হাজার চারা রোপন করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুর জেলার এক কৃষক ৪শ চারার বায়না দিয়েছেন এবং বাকিগুলোও বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিটি চারার মূল্য ধরা হচ্ছে ২৫০ টাকা। এখানে প্রায় ১০ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, মাল্টা হচ্ছে ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ফল। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ’সি’ খাওয়া প্রয়োজন। জমি ভাল করে চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে। তার পর দুই থেকে আড়াই ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও গভীর করে গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটি এক তৃতীয়াংশ এক দিকে এবং বাকি নিচের মাটি অন্য দিকে রাখতে হবে উপরের মাটির সাথে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট, ১৫০ গ্রাম এমওপি, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫ গ্রাম বোরিক এসিড, ১ কেজি চুন, মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে গর্তের নিচে দিয়ে উপরের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে রেখে ১০ দিন পরে চারা রোপন করতে হবে। বিশ্বের প্রায় ৯০ ভাগ জ্যাম জেলি ও কমলার জুস্ মাল্টা থেকে আসে তাই এই ফলের চাহিদা অপরিসীম। সর্বপরি অধিক হারে মাল্টা চাষের সম্প্রসারণ করা গেলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে মনামিনা খামারের মাল্টা চাষে সাফল্য দেখে অনেকেই এই চাষে আগ্রহী হচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকা মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরেন্দ্র এলাকায় মাল্টা চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।