ঢাকা ০১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জঙ্গি অপপ্রচারে ইহুদি-খ্রিস্টান এজেন্টরাই জড়িত : আল্লামা শফী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৮:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৬
  • ২৫৫ বার

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা ও জঙ্গিবাদ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করতে ইহুদি-খ্রিস্টানদের এজেন্টরাই সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকৃত কোনো মুসলমান জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকতে পারেনা।

বৃহস্পতিবার বাদ এশা চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ইসলামি মহাসম্মেলনে প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

আহমদ শফী বলেন, ‘ইহুদি-খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর এদেশীয় এজেন্টরা শান্তিপ্রিয় আলেম সমাজ, ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং কুরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র কওমী মাদরাসাসমূহ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা, জঙ্গি তৎপরতার বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করতে কাজ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে অব্যাহতভাবে নিয়োজিত রয়েছে। তারা দেশ ও জাতির বন্ধু হতে পারে না। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইসলাম, মুসলমান, ইসলামের প্রতীক ও ইসলামি শিক্ষার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।’

কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই ও মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন কওমী মাদারাসা বোর্ডে চেয়ারম্যান আহমদ শফী।

আল্লামা শফী বলেন, ‘এই অপশক্তির নিয়োজিত ভাড়াটে লোকগুলোই দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র বানানোর ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এদেশের মোকাবেলায় দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে সকল কালেমাগো মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা আল্লাহ হুকুম ও তার রাসূল সা. এর জীবনাদর্শ পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণ করে চলে তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘কওমী মাদরাসায় কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড হয় না; এখানে আল্লাহওয়ালা, বুজর্গ ও কুরআন-হাদিসের পণ্ডিত তৈরি হয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাকওয়া ও খোদাভীতি অনুসরণ করলে সমাজের নৈরাজ্য, অশান্তি, দুর্নীতি ও হানাহানির লেশমাত্র থাকতো না।’

হেফাজতে আমির বলেন, ‘ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ পরিপূর্ণ অনুসরণ করে শিরক-বিদআত ও নাস্তিকতামুক্ত আদর্শ সমাজ গড়া হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য। আপনারা প্রাত্যহিক জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাশাপাশি সুন্নাতে রাসুলের ইত্তেবা করবেন। বেশি বেশি করে প্রিয়নবী সা. এর প্রতি দরুদ পাঠ করবেন। গিবত, শেকায়েত, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা থেকে নিজে বিরত থাকবেন, পরিবার-পরিজনকে বিরত রাখবেন। মানুষের হক নষ্ট করবেন না; কারও ইজ্জতের ওপর আঘাত করবেন না।’

হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী ও মাওলানা শিহাবুদ্দিন চার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, মাওলানা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা মোস্তফা আল হোসাইনী, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা শহীদুল্লাহ উজানী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মাওলানা মুইনুদ্দিন রূহী, মাওলানা হাফেজ ফয়সাল ও মাওলানা আহমদুল্লাহ।

সভাপতির ভাষণে মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। যতদিন বাংলাদেশ নবীপ্রেমিক জনতার বুকে এক ফোঁটা রক্তও থাকবে নবীর সঙ্গে যারা বেয়াদবি করে, ওলামায়ে কেরামের প্রতি বিদ্রুপ করবে ও মসজিদ মাদরাসার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না।’

হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে যদি সর্বোচ্চ সাজার বিধান কার্যকর করার দৃষ্টান্ত তৈরি হতো, তাহলে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তসলিমা-লতিফের মতো ঘৃণিত কুলাঙ্গাররা মাথাচাড়া দিতে সাহস করতো না। কিন্তু ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ সাজা না থাকায় এদের মতো বেয়াদব নাস্তিক-মুরতাদরা প্রকাশ্যে ইসলামী বিধিবিধানের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ এবং আল্লাহ ও রাসূল (স.)-এর অবমাননার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জঙ্গি অপপ্রচারে ইহুদি-খ্রিস্টান এজেন্টরাই জড়িত : আল্লামা শফী

আপডেট টাইম : ১০:২৮:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৬

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা ও জঙ্গিবাদ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করতে ইহুদি-খ্রিস্টানদের এজেন্টরাই সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকৃত কোনো মুসলমান জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকতে পারেনা।

বৃহস্পতিবার বাদ এশা চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ইসলামি মহাসম্মেলনে প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

আহমদ শফী বলেন, ‘ইহুদি-খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর এদেশীয় এজেন্টরা শান্তিপ্রিয় আলেম সমাজ, ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং কুরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র কওমী মাদরাসাসমূহ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা, জঙ্গি তৎপরতার বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করতে কাজ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে অব্যাহতভাবে নিয়োজিত রয়েছে। তারা দেশ ও জাতির বন্ধু হতে পারে না। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইসলাম, মুসলমান, ইসলামের প্রতীক ও ইসলামি শিক্ষার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।’

কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই ও মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন কওমী মাদারাসা বোর্ডে চেয়ারম্যান আহমদ শফী।

আল্লামা শফী বলেন, ‘এই অপশক্তির নিয়োজিত ভাড়াটে লোকগুলোই দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র বানানোর ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এদেশের মোকাবেলায় দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে সকল কালেমাগো মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা আল্লাহ হুকুম ও তার রাসূল সা. এর জীবনাদর্শ পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণ করে চলে তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘কওমী মাদরাসায় কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড হয় না; এখানে আল্লাহওয়ালা, বুজর্গ ও কুরআন-হাদিসের পণ্ডিত তৈরি হয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাকওয়া ও খোদাভীতি অনুসরণ করলে সমাজের নৈরাজ্য, অশান্তি, দুর্নীতি ও হানাহানির লেশমাত্র থাকতো না।’

হেফাজতে আমির বলেন, ‘ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ পরিপূর্ণ অনুসরণ করে শিরক-বিদআত ও নাস্তিকতামুক্ত আদর্শ সমাজ গড়া হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য। আপনারা প্রাত্যহিক জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাশাপাশি সুন্নাতে রাসুলের ইত্তেবা করবেন। বেশি বেশি করে প্রিয়নবী সা. এর প্রতি দরুদ পাঠ করবেন। গিবত, শেকায়েত, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা থেকে নিজে বিরত থাকবেন, পরিবার-পরিজনকে বিরত রাখবেন। মানুষের হক নষ্ট করবেন না; কারও ইজ্জতের ওপর আঘাত করবেন না।’

হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী ও মাওলানা শিহাবুদ্দিন চার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, মাওলানা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা মোস্তফা আল হোসাইনী, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা শহীদুল্লাহ উজানী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মাওলানা মুইনুদ্দিন রূহী, মাওলানা হাফেজ ফয়সাল ও মাওলানা আহমদুল্লাহ।

সভাপতির ভাষণে মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। যতদিন বাংলাদেশ নবীপ্রেমিক জনতার বুকে এক ফোঁটা রক্তও থাকবে নবীর সঙ্গে যারা বেয়াদবি করে, ওলামায়ে কেরামের প্রতি বিদ্রুপ করবে ও মসজিদ মাদরাসার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না।’

হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে যদি সর্বোচ্চ সাজার বিধান কার্যকর করার দৃষ্টান্ত তৈরি হতো, তাহলে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তসলিমা-লতিফের মতো ঘৃণিত কুলাঙ্গাররা মাথাচাড়া দিতে সাহস করতো না। কিন্তু ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ সাজা না থাকায় এদের মতো বেয়াদব নাস্তিক-মুরতাদরা প্রকাশ্যে ইসলামী বিধিবিধানের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ এবং আল্লাহ ও রাসূল (স.)-এর অবমাননার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।’