হাসপাতালে রোগী আছে ডাক্তার নেই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা দীর্ঘ দিনের। একদিকে চিকিৎসক সংকট, অন্যদিকে যারা আছেন তারা আসেন ইচ্ছেমত। নিয়মিত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে না আসা যেন এখানকার নিত্য ঘটনা। ফলে দিনের পর দিন দূরদুরন্ত থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা পড়েন ভোগান্তিতে। দিন শেষে তাদের ফিরতে হয় বিনা চিকিৎসায় অথবা নাম মাত্র চিকিৎসা নিয়ে। হাসপাতালের এমন বেহাল দশা চলমান থাকলেও তা যেন দেখার কেউ নেই।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, তিনজন চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে।

সোমবার (১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় চোখে পড়ে। ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষায় চিকিৎসকদের কক্ষে বা বারান্দায় অন্তত দুই শতাধিক রোগীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কিন্তু ১নং কক্ষে ডাক্তার অনুপ বসু ও বিভিন্ন কক্ষে চারজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। এসময় চিকিৎসকদের কারও কারও কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। আবার দুই-একটি কক্ষ খোলা থাকলেও চেয়ারগুলো পড়ে আছে খালি।

হাসপাতালের ১১নং কক্ষে বসেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রেবেকা সুলতানা। তার কক্ষের দরজায় ঝুলছে তালা। ডাক্তার রাজিব পালের ৪নং কক্ষেরও একই অবস্থা। ডাক্তার মারুফের ২নং কক্ষ খোলা কিন্তু সেখানে রোগী ছাড়া কেউ নেই। আর দন্ত চিকিৎসক ডাক্তার দীপঙ্কর দের কক্ষে বসে আছেন সহকারী আব্দুর রউফ।

এসময় ৬নং কক্ষের সামনে ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে গরিবপুর গ্রামের বয়বৃদ্ধ আব্দুল হককে। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, সকাল নয়টার সময় আইছি। এখনও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। একই অভিযোগ ওই কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগী মমতা ও জেসমিনসহ অনেকের। খানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে মাকে নিয়ে এসেছি। দুই নম্বরে ডাক্তার মরুফকে দেখাতে চেয়েছিলাম। ওনাকে না পেয়ে এক নম্বর কক্ষের টিকিট নিয়েছি। রোগীর যে চাপ তাতে মনে হচ্ছে ১০০ জনের পরে আমার সিরিয়াল আসবে।

৬নং কক্ষের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, রোগীর মেলা চাপ। আরও দুই একজন ডাক্তার থাকলে ভাল হত। গত রাতে আমি আর ডাক্তার অনুপ বসু জরুরি বিভাগে ডিউটি করেছি। এখন আবার আমাদের দুই জনকে আউটডোরে রোগী দেখতে হচ্ছে।

এদিকে টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেলা ১১টার মধ্যে অন্তত সাড়ে চারশ’ রোগী ডাক্তার দেখাবেন বলে টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাক্তার শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ডাক্তার মারুফের স্ত্রী অসুস্থ বলে তিনি ছুটি নিয়েছেন। দন্ত চিকিৎসক দীপঙ্কর দে ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় গেছেন। রেবেকা সুলতানা কি কারণে ছুটি নিয়েছেন সেটা ঠিক জানা নেই। আর রাজিব পাল রাতে ডিউটি করায় ছুটিতে। এমনিতেইতো ডাক্তার সংকট। তিনজন একসাথে ছুটিতে থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারদের দিয়ে সেটা সামাল দিচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর