প্রাত্যহিক জীবনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজ-সজ্জার একটা বড় অংশ মানুষের শরীর, স্বাস্থ্য এবং চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, ইসলাম ধর্ম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছে।
হাদিসে বলা হয়েছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা ইসলাম ধর্মকে পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজ-সজ্জার ওপর নজিরবিহীন গুরুত্ব দিয়েছেন। অবশ্য তিনি এক্ষেত্রে বৈধপন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি থাকতেন। তিনি নিজের মাথার চুল চিরুনি দিয়ে পরিপাটি করে রাখতেন। এ সম্পর্কে এক হাদিসে তিনি বলেছেন, আল্লাহতায়ালা চান তার বান্দারা বা ঈমানদার লোকেরা যখন আরেক মুমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তখন তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি অবস্থায় থাকে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে সাধারণ কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পোশাক পরতেন। তিনি দামী জামাকাপড় পরতেন না। অবশ্য সাধারণ পোশাকেও তাকে বিশেষ অভিজাত মনে হতো।
ব্রিটেনের দার্শনিক ডেভেনপোর্ট মহানবী (সা.)-এর বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি অবস্থায় থাকতেন। তার সহজ-সরল অথচ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন চাল-চলন সবাইকে আকৃষ্ট করতো। তার পবিত্র মুখে সব সময় আনন্দদায়ক ও চিত্তাকর্ষক মুচকি হাসি লেগে থাকতো। এ হাসি ছিল তার নূরানি মুখের শোভা। আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল (সা.) বেশিরভাগ সময় সাদা পোশাক পরতেন এবং অন্যদেরও সাদা পোশাক পরতে বলতেন। এর কারণ, সাদা পোশাক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকে এবং বিন্দুমাত্র ময়লা দাগ পড়লেও তা বোঝা যায়। তবে তিনি সবুজ রংয়ের পোশাকও পছন্দ করতেন।’
কোরআনে কারিমের শিক্ষার দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাবো, ইসলামি সংস্কৃতিতে বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি অবস্থা কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি আত্মিক পরিচ্ছন্নতা এবং আত্মিক শুভ্রতা ও সৌন্দর্যের ওপরও ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ইসলামি শিক্ষায় বলা হয়েছে, মানুষের অন্তর, আত্মা ও দৃষ্টিভঙ্গি যদি সুন্দর বা পরিচ্ছন্ন না হয় তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্যের কোনো কার্যকারিতা থাকে না। অর্থাৎ আচার-আচরণ ও অন্তর যদি সুন্দর না হয়, তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্য মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
কোরআনে কারিমের সূরা আরাফের ২৬ নম্বর আয়াতে সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদকে মহান আল্লাহর উপহার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, তবে একইসঙ্গে এটাও বলা হয়েছে যে, খোদাভীরুতা আরো ভালো পোশাক এবং তা মুমিনদের জন্যে সর্বোত্তম। কারণ, তাকওয়া মানুষের অভ্যন্তরীণ দিকগুলোকে পবিত্র করে এবং আত্মাকে করে শুভ্র ও সুশ্রী।
সুগন্ধী ব্যবহার ছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য। তিনি অন্যদেরও সুগন্ধী ব্যবহার করতে বলতেন। তিনি নামাজের সময় সুগন্ধী ব্যবহার করতেন।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাঁতের যত্ন নেয়ার ব্যাপারেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নামাজ পড়ার আগে মেসওয়াক করতেন । তিনি দাঁত মাজা এবং ওজু করাকে অভ্যাসে পরিণত করতে মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, মেসওয়াক করার ফলে দাঁতের মাড়ি শক্ত থাকে এবং মুখের দূর্গন্ধ দূর হয়; দাঁত মাজলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এবং শয়তান বিতাড়িত হয়।
নবী মুহাম্মদ (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি অবস্থাকে পছন্দ করতেন। একদিন এলোমেলো চুলের এক ব্যক্তি তার কাছে এলেন তিনি তাকে বললেন, আপনি যদি মাথার চুলগুলো চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে ও সাজিয়ে নিতেন তাহলে কী অসুবিধা হতো? এরপর থেকে সেই ব্যক্তি সবসময় রাসূলের এই উপদেশ মেনে চলেন এবং সেই থেকে কেউই তাকে কখনও কুৎসিত পোশাক বা অপরিপাটি অবস্থায় দেখতে পায়নি।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি অবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে এক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ নিজে পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসেন। মহান আল্লাহ নিজে মহৎ এবং তিনি মহত্বকে ভালোবাসেন। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল তাই তিনি ক্ষমাশীলতাকে ভালোবাসেন। মহান আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।