ঢাকা ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতি সুলভ ছোট ফুলঝুরি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জুন ২০১৫
  • ৭৮০ বার
বন-বনানী ও বন্যপ্রাণী আমার লেখার প্রধান উপজীব্য বিষয়। প্রকৃতি রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্পপন্থা আমার সাধ্যের বাইরে বিধায় বন্যপ্রাণী নিয়ে লেখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সেটি মাথায় রেখে নিরলসভাবে কাজও করে যাচ্ছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষুদ্র প্রয়াস অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনায় এনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘বোস্টন বাংলা নিউজ’ আমাকে অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত পুরস্কারটি আমার হাতে তুলে দেয়ার কথা ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রাপ্তির আশায় দূতাবাসে গিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভিসা দেননি! ভিসা পাইনি এ জন্যে মন খারাপ হয়নি আমার। মনটা খারাপ হয়েছে এ ভেবে, যেই প্রতিষ্ঠান আমাকে পুরস্কৃত করেছে তারা কি ভাবতে পারে আমাকে নিয়ে সেটি মাথায় এনে।
ভাবতে ভাবতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কয়েক মিটার অতিক্রম করতেই ‘ছোট ফুলঝুরি’র সাক্ষাৎ পাই ডিমে তা অবস্থায়। খুলে বলছি বিষয়টা। প্রিয় পাঠক, দূতাবাসের সামনে ছোট্ট একটি নার্সারি লক্ষ্য করবেন আপনারা। নার্সারির পাশেই ছোট ছোট ঝোপজঙ্গল। লোকজন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় এ ছোট্ট ঝোপের আড়ালে। তাছাড়া উপায়ও নেই। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার মতো আশপাশে আর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ওখানে যেতে হয়েছে আমাকেও। সে সুবাদে প্রজাতির সাক্ষাৎ মিলেছে। এরা অতি সুলভ দর্শন স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিম মিয়ানমার পর্যন্ত। বিচরণ করে পর্ণমোচী অরণ্য, ফুল এবং ফল বাগানে। অস্থিরমতি পাখি। সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটায় গাছের চিকন ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর ‘চিক্..চিক্..চিক্..’ সুরে গান গাইতে থাকে।
পাখির বাংলা নাম : ‘ছোট ফুলঝুরি’, ইংরেজি নাম: ‘প্লেইন-বেলিড্ ফ্লাওয়ার পেকার’ (Pale-billed Flowerpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dicaeum erythrorynchos। এরা ‘মেটেঠোঁট ফুলঝুরি’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য  কমবেশি ৮ সেন্টিমিটার।  মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ধূসরাভ-জলপাই। দেহতল ধূসরাভ। ঠোঁট ত্বক রঙের। ঠোঁটের গোড়া প্রশস্ত, ডগা সরু। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালো।
প্রধান খাবার ফুলের মধু, মাকড়সা, ছোট পোকামাকড়।
প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৩-৭ মিটার উঁচুতে গাছের চিকন ডালে। বাসা নাশপতি আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের সরু তন্তু, শ্যাওলা, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন।
লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অতি সুলভ ছোট ফুলঝুরি

আপডেট টাইম : ০৮:১৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জুন ২০১৫
বন-বনানী ও বন্যপ্রাণী আমার লেখার প্রধান উপজীব্য বিষয়। প্রকৃতি রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্পপন্থা আমার সাধ্যের বাইরে বিধায় বন্যপ্রাণী নিয়ে লেখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সেটি মাথায় রেখে নিরলসভাবে কাজও করে যাচ্ছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষুদ্র প্রয়াস অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনায় এনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘বোস্টন বাংলা নিউজ’ আমাকে অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত পুরস্কারটি আমার হাতে তুলে দেয়ার কথা ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রাপ্তির আশায় দূতাবাসে গিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভিসা দেননি! ভিসা পাইনি এ জন্যে মন খারাপ হয়নি আমার। মনটা খারাপ হয়েছে এ ভেবে, যেই প্রতিষ্ঠান আমাকে পুরস্কৃত করেছে তারা কি ভাবতে পারে আমাকে নিয়ে সেটি মাথায় এনে।
ভাবতে ভাবতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কয়েক মিটার অতিক্রম করতেই ‘ছোট ফুলঝুরি’র সাক্ষাৎ পাই ডিমে তা অবস্থায়। খুলে বলছি বিষয়টা। প্রিয় পাঠক, দূতাবাসের সামনে ছোট্ট একটি নার্সারি লক্ষ্য করবেন আপনারা। নার্সারির পাশেই ছোট ছোট ঝোপজঙ্গল। লোকজন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় এ ছোট্ট ঝোপের আড়ালে। তাছাড়া উপায়ও নেই। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার মতো আশপাশে আর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ওখানে যেতে হয়েছে আমাকেও। সে সুবাদে প্রজাতির সাক্ষাৎ মিলেছে। এরা অতি সুলভ দর্শন স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিম মিয়ানমার পর্যন্ত। বিচরণ করে পর্ণমোচী অরণ্য, ফুল এবং ফল বাগানে। অস্থিরমতি পাখি। সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটায় গাছের চিকন ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর ‘চিক্..চিক্..চিক্..’ সুরে গান গাইতে থাকে।
পাখির বাংলা নাম : ‘ছোট ফুলঝুরি’, ইংরেজি নাম: ‘প্লেইন-বেলিড্ ফ্লাওয়ার পেকার’ (Pale-billed Flowerpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dicaeum erythrorynchos। এরা ‘মেটেঠোঁট ফুলঝুরি’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য  কমবেশি ৮ সেন্টিমিটার।  মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ধূসরাভ-জলপাই। দেহতল ধূসরাভ। ঠোঁট ত্বক রঙের। ঠোঁটের গোড়া প্রশস্ত, ডগা সরু। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালো।
প্রধান খাবার ফুলের মধু, মাকড়সা, ছোট পোকামাকড়।
প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৩-৭ মিটার উঁচুতে গাছের চিকন ডালে। বাসা নাশপতি আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের সরু তন্তু, শ্যাওলা, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন।
লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।