রমজানের প্রভাবে রাজশাহীর বাজার হঠাৎ তেতে উঠেছে। নগরীর বাজারগুলোতে বৃহস্পতিবার প্রতিটি পণ্যের মূল্যেই তেজিভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে রমজান মাসে ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর দাম একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে কয়েকগুণ। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী কেবল আমদানি কমের দোহাই দিয়ে রাতারাতি দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে কোন কারণ ছাড়াই। তাছাড়া রাজশাহীর বাজারে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা বাজারে মূল্য তালিকা টাঙানোরও প্রয়োজনবোধ করছে না।
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানের একদিন আগেই বদলে গেছে রাজশাহী নগরীর সব বাজারের চিত্র। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পণ্যের দাম। নগরীর কোন বাজারে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পণ্যের তালিকা বোর্ড ঝুলানো হয়নি। ফলে বাজার করতে আসা ক্রেতারা পরাস্ত হচ্ছেন পণ্যের মূল্যের কাছে। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ বর্তমান বাজারদরের কাছে হয়ে পড়েছে চরম অসহায়। নিরুপায় হয়ে বেশী দাম দিয়েই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর হড়গ্রাম বাজার, শালবাগান বাজারসহ সব বাজারে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রমজানের দ্রব্যমূল্যে তেজিভাব। দাম বেড়েছে সব ধরনের মসলা, সবজি ও তেলের। বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দেশী ৪৪, ভারতীয় ৩৬ টাকায়। আদা ১৪০-১৬০ টাকায়, কাঁচামরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, বেগুন ৭০ টাকায়, শসা ৩২ টাকায়, বিভিন্ন রকম শাক ২৫-৩০, আলু ২৪-২৮, পেঁপে ৩০, কুমড়া ২০, প্রতিটি লাউ ৪০, প্রতিহালি কলা ৩০, লেবু ১৬, আদা ১৪০-১৬০, রসুন ৮০-১২০, ঢেড়স ২০, পটল ২০, সজিনার ডাটা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বুধবার প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৩০, শসা ১৬, পিঁয়াজ ৩৬ ও ৪০, পটল ১২, মরিচ ৩০, ভেন্ডি ১২, পেঁপে ২০, আদা দেশী ১২০ ও বিদেশী ৮০, রসুন, দেশী ৬০ ও বিদেশী ১শ’, আলু ১৬-২০, লাউ ১০, লেবু ১০, ঝিঙা ১২, তরই ১৫ ও সজিনার ডাটা ৬০টাকায়।
এছাড়াও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬৫, সোনালী ২৩০, লেয়ার ১৬০ এবং দেশী ৩১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে পঞ্চাশ পয়সা থেকে এক টাকা করে। এদিকে প্রতিকেজি ইলিশ মাছ ৯৫০-১৬শ’, কাতল ২৫০ থেকে ৩৬০, রুই ২শ’ থেকে ৩৭০, সিলভার কার্প ১৬০- ২শ’ পাঙ্গাস ১২০-১৭০, গরুর মাংস ৩৪০, খাসির মাংস ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিলিটার সয়াবিন খোলা ৯০ এবং বোতলজাত এক লিটার ১০২ ও পাঁচ লিটার ৪৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ডালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি মসুর ডাল গোটা ১১২, ছোটদানা ১শ, খেসারি ডাল ৫০, বুটের বেসন ৮০ এবং খেসারি ডালের বেসন ৬০টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ছোলা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায় এবং চিনি বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়। এদিকে সাদা ডিম ৭শ’ ও লাল ডিম ৭৬০টাকা প্রতি শ’ বিক্রি হয়েছে।
নগরীর সাহেববাজারে আসা গৃহিণী আকলিমা খাতুন বলেন, বুধবার যে বেগুন কিনেছি ৩০ টাকায় বৃহস্পবিার তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। কাঁচামরিচের দামও কেজি প্রতি ৩০টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকার কারণেই বিক্রেতারা ইচ্ছে মত দাম হাকাচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।
রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে গেছে। তাই তারা খুচরা বাজারেও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। পাইকারি সবজি বিক্রেতা এমাজ উদ্দিন বলেন, সরবরাহ কম থাকায় রোজার কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।
বাজার মনিটরিংয়ের ব্যাপারে রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন জানান, রমজানের দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। উপজেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। রমজানে দ্রব্যমূল্য মনিটরিংয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ওই কমিটির সদস্যরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।