ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈশ্বরদীতে মৌরি চাষে স্বপ্ন দেখছেন আনিসুর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৩ বার

পাবনার ঈশ্বরদীতে এই প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে মৌরি। প্রথমবারেই ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি। মসলার জগতে ব্যাপক চাহিদা ও ঔষধিগুণ থাকায় এর গুণাগুণের শেষ নেই। উৎপাদন খরচ যেমন কম তেমনি লাভও বেশি। ক্ষেত ভরে এখন হলুদ মৌরি ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য আর ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চারদিক।

উপজেলার ইস্তা গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী হিসেবে ১০ শতক জমিতে বারি-১ মৌরি চাষ করেছেন।

কৃষক আনিসুর রহমান জানায়, এই এলাকায় আগে কখনো মৌরি চাষ হয়নি। নতুন কিছু করার আগ্রহ থেকেই শুরু করি। কৃষি বিভাগ বারী-১ জাতের বীজ ও পরামর্শ দিয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বপন করি। এখন পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ভালো। আশা করছি ফলনও ভালো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খরচ হয়েছে চার-পাঁচ হাজার টাকার মতো। এখনো কাটা হয়নি, তাই লাভের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। তবে যেভাবে গাছ বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এই মৌরি মসলার সম্ভাবনা অনেক। মৌরি মসলা চাষ বেশ লাভজনক। চাহিদা থাকায় অধিক মুনাফার আশায় বিকল্প এই ফসল চাষে আকৃষ্ট হয়েছেন কৃষক আনিসুর রহমান।

উপজেলার পৌর এলাকার দরিনারিচা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন কুমার রায় বলেন, ‘বীজ ও সার প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়েছে। মৌরি মসলা ২-৩ ধাপে হারভেস্টিং করতে হয় । মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আনিসুরের মৌরি হারভেস্টিং করতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। আশা করছি ফলন আশানুরূপ হবে। প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ ফলন পাওয়া যেতে পারে।’ তারপরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমরা যেমনটি আশা করছি সেই রকম হলে আনিসুর অবশ্যই লাভবান হবেন। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত মুনাফায় কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। এ কারণে ঈশ্বরদীর আগামী দিনগুলোতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই মৌরি চাষ। এই ফসল পান মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়ভাবে একে গুয়োমুরিও বলা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সবজির ভাণ্ডার খ্যাত ঈশ্বরদীর কৃষকরা শীতের সবজি তোলার পর পতিত জমিতে কৃষক কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা থেকেই তারা মৌরির চাষ করতে পারেন। আলাদাভাবে সার সেচ কিছুই লাগে না। এটিকে বোনাস ফসল হিসেবে নিতে পারেন এখানকার কৃষকরা। কারণ, শীত মৌসুমে বাঁধা ও ফুল কপি রোপণ করার পর ক্ষেতে সারিবদ্ধভাবে ফাঁকা করে চারা রোপণ করা হয়। ক্ষেত থেকে কপি তোলার পর ক্ষেতেই গাছ বেড়ে ওঠে। এজন্য বাড়তি সার, সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুগন্ধযুক্ত উচ্চমূল্যের এই মৌরি দৈনন্দিন রান্নার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচ ফোঁড়নের এক ফোঁড়ন মৌরি। এতে ঔষধি গুণও বিদ্যমান। পাইকাররা ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাবেন। ফলে কৃষকদের ফসল বিক্রির জন্য দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু বলেন, ঈশ্বরদীতে প্রথমবার চাষ হচ্ছে মৌরি। সুগন্ধযুক্ত উচ্চমূল্যের মসলাদার ফসল মৌরি দৈনন্দিন রান্নায় অনেকখানি জুড়ে আছে। পাঁচফোঁড়নের এক ফোঁড়ন মৌরি। বহুগুণে গুণান্বিত এই মসলা। এতে প্রচুর পরিমাণে ঔষধিগুণও বিদ্যমান। বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংসের তরকারি, আচার, পিঠা, নানা ধরনের মিষ্টি খাবারে মৌরি ব্যবহৃত হয়। পান মসলা হিসেবেও খুব জনপ্রিয়।

কৃষক আনিসুর রহমানকে মৌরি চাষে কৃষি বিভাগ সার, কীটনাশক, বীজসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। তিন মাস মেয়াদের এ ফসলটি বেলে, বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে মৌরির ফল বা বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন মসলা জাতীয় এই ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণের দিকে আমরা আগাতে পারব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈশ্বরদীতে মৌরি চাষে স্বপ্ন দেখছেন আনিসুর

আপডেট টাইম : ০৫:৩১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

পাবনার ঈশ্বরদীতে এই প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে মৌরি। প্রথমবারেই ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি। মসলার জগতে ব্যাপক চাহিদা ও ঔষধিগুণ থাকায় এর গুণাগুণের শেষ নেই। উৎপাদন খরচ যেমন কম তেমনি লাভও বেশি। ক্ষেত ভরে এখন হলুদ মৌরি ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য আর ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চারদিক।

উপজেলার ইস্তা গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী হিসেবে ১০ শতক জমিতে বারি-১ মৌরি চাষ করেছেন।

কৃষক আনিসুর রহমান জানায়, এই এলাকায় আগে কখনো মৌরি চাষ হয়নি। নতুন কিছু করার আগ্রহ থেকেই শুরু করি। কৃষি বিভাগ বারী-১ জাতের বীজ ও পরামর্শ দিয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বপন করি। এখন পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ভালো। আশা করছি ফলনও ভালো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খরচ হয়েছে চার-পাঁচ হাজার টাকার মতো। এখনো কাটা হয়নি, তাই লাভের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। তবে যেভাবে গাছ বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এই মৌরি মসলার সম্ভাবনা অনেক। মৌরি মসলা চাষ বেশ লাভজনক। চাহিদা থাকায় অধিক মুনাফার আশায় বিকল্প এই ফসল চাষে আকৃষ্ট হয়েছেন কৃষক আনিসুর রহমান।

উপজেলার পৌর এলাকার দরিনারিচা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন কুমার রায় বলেন, ‘বীজ ও সার প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়েছে। মৌরি মসলা ২-৩ ধাপে হারভেস্টিং করতে হয় । মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আনিসুরের মৌরি হারভেস্টিং করতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। আশা করছি ফলন আশানুরূপ হবে। প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ ফলন পাওয়া যেতে পারে।’ তারপরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমরা যেমনটি আশা করছি সেই রকম হলে আনিসুর অবশ্যই লাভবান হবেন। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত মুনাফায় কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। এ কারণে ঈশ্বরদীর আগামী দিনগুলোতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই মৌরি চাষ। এই ফসল পান মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়ভাবে একে গুয়োমুরিও বলা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সবজির ভাণ্ডার খ্যাত ঈশ্বরদীর কৃষকরা শীতের সবজি তোলার পর পতিত জমিতে কৃষক কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা থেকেই তারা মৌরির চাষ করতে পারেন। আলাদাভাবে সার সেচ কিছুই লাগে না। এটিকে বোনাস ফসল হিসেবে নিতে পারেন এখানকার কৃষকরা। কারণ, শীত মৌসুমে বাঁধা ও ফুল কপি রোপণ করার পর ক্ষেতে সারিবদ্ধভাবে ফাঁকা করে চারা রোপণ করা হয়। ক্ষেত থেকে কপি তোলার পর ক্ষেতেই গাছ বেড়ে ওঠে। এজন্য বাড়তি সার, সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুগন্ধযুক্ত উচ্চমূল্যের এই মৌরি দৈনন্দিন রান্নার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচ ফোঁড়নের এক ফোঁড়ন মৌরি। এতে ঔষধি গুণও বিদ্যমান। পাইকাররা ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাবেন। ফলে কৃষকদের ফসল বিক্রির জন্য দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু বলেন, ঈশ্বরদীতে প্রথমবার চাষ হচ্ছে মৌরি। সুগন্ধযুক্ত উচ্চমূল্যের মসলাদার ফসল মৌরি দৈনন্দিন রান্নায় অনেকখানি জুড়ে আছে। পাঁচফোঁড়নের এক ফোঁড়ন মৌরি। বহুগুণে গুণান্বিত এই মসলা। এতে প্রচুর পরিমাণে ঔষধিগুণও বিদ্যমান। বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংসের তরকারি, আচার, পিঠা, নানা ধরনের মিষ্টি খাবারে মৌরি ব্যবহৃত হয়। পান মসলা হিসেবেও খুব জনপ্রিয়।

কৃষক আনিসুর রহমানকে মৌরি চাষে কৃষি বিভাগ সার, কীটনাশক, বীজসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। তিন মাস মেয়াদের এ ফসলটি বেলে, বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে মৌরির ফল বা বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন মসলা জাতীয় এই ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণের দিকে আমরা আগাতে পারব।