প্রেমিকের অনৈতিক মেলামেশায় ছয় মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরী (১৬)। নিজের অপকর্ম ঢাকতে প্রেমিকার গর্ভের সন্তান হত্যার পরিকল্পনা করে প্রেমিক মেহেদী হাসানের পরিবার। গোপনে ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে যান মেহেদীর পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে নিয়ে অচেতন করে গর্ভের সন্তান গর্ভপাত ঘটিয়ে হত্যা করে। কিশোরী মাকে নবজাতকের মুখটি না দেখিয়ে অজ্ঞাত স্থানে ওই শিশুর লাশ গুম করে অভিযুক্তরা। পরে অসুস্থ কিশোরীকে গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেয় মেহেদীর বন্ধু রানা। ঘটনা প্রকাশ পেলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শনিবার মধ্যরাতে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে অভিযোগ করেন, গোপনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক মেলামেশা করে অন্ত:স্বত্ত্বা করে মেহেদী। পরে গর্ভে থাকা ছয়মাসের শিশু গর্ভপাত ঘটিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে। অভিযুক্তরা হলো ওই কিশোরীর প্রেমিক মেহেদী হাসান (২১), তার ভাই জয় (২৫), বাবা ইউসুফ আলী (৫৫), চাচা জুয়েল (৩৭), বন্ধু সবুজ (৩০) ও রানা (১৮)। অভিযুক্তরা একই গ্রামের বাসিন্দা।
ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে মেহেদী ফোন করে ভিকটিমকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাষ্টার বাড়ি এলাকার রসের মিষ্টির দোকানের সামনে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে অভিযুক্তদের দেখতে পায় সে। পরে অভিযুক্তরা তাকে গাড়িতে করে ময়মনসিংহে নিয়ে যায়। তার গর্ভের সন্তান গর্ভপাত ঘটিয়ে হত্যা করতে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করে। পরে একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যায়। সে কিছু বলতে পারেনি। জ্ঞান ফিরলে দেখে সে হাসপাতালে শুয়ে আছে। পেটে প্রচন্ড ব্যথা। তার গর্ভে সন্তান নেই। ওরা তাকে অচেতন করে গর্ভের ছয় মাসের সন্তানকে গর্ভপাত ঘটিয়ে হত্যা করেছে। সন্তানের মুখটিও দেখায়নি। শুনেছি ছেলে সন্তান ছিল। দুই দিন হাসপাতালে রেখে শনিবার রাত ৮টার দিকে মেহেদীর বন্ধু রানা তাকে বাসায় দিয়ে যায়।
ভিকটিম আরও জানায়, দুই বছ পূর্বে ভিকটিমের সঙ্গে মেহেদীর পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে গড়ে তুলে অনৈতিক সম্পর্ক। নিজ বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ওই কিশোরীর সঙ্গে দৈহিক মিলন করত মেহেদী। এক পর্যায়ে কিশোরী অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। ভিকটিম মেহেদীকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে তালবাহানা করতে থাকে। এরই মধ্যে ভিকটিমের গর্ভের সন্তানের বয়স দাঁড়ায় ছয় মাসে।
ভিকটিমের মা বলেন, ‘মেয়ে অন্ত:স্বত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জেনে ভিকটিমের মা মেহেদীর বাবা-ভাইকে জানাই। প্রভাবশালী মেহেদীর পরিবার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। ছেলের অপকর্ম ঢাকতে ভিকটিমের গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপনে মেয়েকে নিয়ে যায়। আমি কাজ শেষে বাসায় ফিলে মেয়েকে দেখতে পাইনি। অনেক খুঁজে তার সন্ধান করতে পারিনি। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল। গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে মেহেদীর বন্ধু রানা অসুস্থ মেয়েকে বাসায় দিয়ে যায়। তখন দেখি তার পেটে বাচ্চা নাই। মেয়ে জানায় মেহেদী ও তার পরিবারের লোকজন তাকে কৌশলে ময়মনসিংহের হাসপটাতালে নিয়ে অচেতন করে গর্ভপাত ঘটিয়ে তার পেটের সন্তানকে হত্যা করেছে। মরদেহটিও না দেখিয়ে অজ্ঞাত স্থানে গুম করেছে। আমার মেয়ের চিকিৎসার কাগজ পর্যন্ত রেখে দিয়েছে। ছেলের অপকর্ম ঢাকতে মেহেদীর বাবা ইউসুফ আলী পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়ের গর্ভের সন্তান গর্ভপাত ঘটিয়ে হত্যা করেছে। তার মরদেহটিও গুম করেছে। অমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
বক্তব্য জানতে মেহেদীর বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মেহেদীর বাবা জানান, বিষয়টি তারা ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করছেন।
শ্রীপুর থানার পরিতদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।