ঢাকা ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশু : আইনি ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১
  • ১৭২ বার

ইহকালীন জীবনের জন্য যেমন শিশু সন্তানের গুরুত্ব হয়েছে, ঠিক পরকালীন জীবনের জন্যও শিশুদের গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। নিম্নোক্ত কুরআন ও হাদীসের উদ্বৃতি থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাঁদের সন্তানরাও ঈমানের পথে তাদের অনুসরণ করেছে, তাঁদের সে সন্তানদের আমরা তাঁদের সঙ্গে জান্নাতে একত্র করব।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৫২:২১।’’
এতে শিশু সন্তানকে সুসন্তান ও ঈমানের অনুসারী হিসাবে গড়ে তোলার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এতে শিশু সন্তানকে সুসন্তান ও ঈমানের অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- ‘‘সদা প্রস্তুত জান্নাতে তারা প্রবেশ করবে, আর তাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা পুণ্যবান হবে তারাও।’’ ‘‘আল-কুরআন, ১৩:২৩।’’ এদের জন্য ফিরিশতাদের একটি প্রার্থনা উল্লেখ করে কুরআনে এসেছে- ‘‘ওহে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে সদা প্রস্তুত জান্নাতে প্রবেশ করাও, যার প্রতিশ্রæতি তুমি তাদের দিয়েছ। আর তাদেরকেও যারা তাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে নেককার হবে। ‘‘আল-কুরআন, ৪০:৮।’’
শিশুর সাথে সদাচরণ করতে হবে। আর এটা ঈমানের পূর্ণতার গ্যারান্টি হিসেবে বিবেচিত। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ স. বলেন- ‘‘মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমান সে লোকই লাভ করেছে যার চরিত্র সর্বোত্তম এবং যিনি পরিবারের লোকদের সাথে কোমল আচরণকারী।’’ ‘‘তিরমিযী, ইমাম, আস-সুনান, অধ্যায়: আল-ঈমান, অনুচ্ছেদ: ফী ইস্তিকমালিল ঈমান ….. খ. ৫, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ২৬১২, পৃ. ৯:’’
আল্লাহ নিজেই যখন নেককার সন্তানদেরকে জান্নাতী পিতা-মাতার সঙ্গে পরকালে একত্রে বসবাস করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, তখন সন্তানদেরকে নেককার হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব। উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে শিমু-সন্তানের গুরুত্বের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদের মূলনীতিসমূহে শিশুর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিধৃত হয়েছে। সনদে বলা হয়েছে, শিশু বিষয়ক যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে শিশুর মা-বাবা, দেশের সংসদ, আদালত এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষসমূহ শিশুর সর্বত্তোম স্বার্থ রক্ষার নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে।’’ ‘‘র‌্যাচেল কবির, শিশুদের অধিকার আমাদের অঙ্গীকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ১৯৯৮, পৃ. ৫।’’
বস্তুত মানব শিশু তথা সকল প্রাণীর বাচ্চা এমনকি উদ্ভিদ জগতের জন্ম ও সৃষ্টি কৌশল আল্লাহর এক সীমাহীন কুদরত। মানবীয় প্রচেষ্টা এখানে অকার্যকর। পৃথিবীতে মানব প্রজন্মের ধারা এবং নারী ও পুরুষের ভারসাম্য রক্ষার্থে আল্লাহ তাআলার কুদরতের অন্যতম সৃষ্টি এ মানব প্রজন্ম তথা মানব শিশু। মানব শিশুর জন্মদান মানুষের ইচ্ছায় হয় না, এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে।
মানব শিশুর গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে তাদের প্রতি যথার্থ আচরণ ও ব্যবহার করা সকলের দায়িত্ব। আধুনিক ভোগবাদী চিন্তাধারায় মানুষের সুখ-শান্তি ও ভোগের আকাঙ্খায় মানব শিশুর প্রতি নানা রকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। অনেক দম্পতি স্বাস্থ্যহানি ও ভোগের সুযোগ কমে যাবে মনে করে সন্তান গ্রহণ করতে চায় না। অনেকে তো বিয়ে করতেও রাজি নয়। তারা চায় বিবাহ বন্ধনহীন উচ্ছৃঙ্খল জীবন। বিয়ের বন্ধন ছাড়াই তারা যৌন জীবন আগ্রহী। জন্ম নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশলের কারণে এসব অবৈধ কাজ অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়ে গেছে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ ও মুসলমানের সুসন্তান কামনাই স্বাভাবিক। একজন ভাল মানুষ অবশ্য শিশু-সন্তানের উজ্জ্বল সমৃদ্ধ জীবন কামনা করে। কাজেই একজন ভাল মানুষের কাছে মানব শিশু গুরুত্ব অপরিসীম।
শিশু মানব সভ্যতার রক্ষা কবচ ঃ ইসলামী সমাজ দর্শনে মানব বংশধারা, অস্তিত্ব রক্ষা ও বিস্তারের ভিত্তি ভূমি হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র দাম্পত্য জীবন। এ দাম্পত্য জীবনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতির বংশ বিস্তার ও মানব সভ্যতার অগ্রায়ণ। মানব শিশু মানব সভ্যতার রক্ষাকবচ। মানব সভ্যতার সূচনা ও বিকাশের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে বিধৃত হয়েছে। বলা হয়েছে- ‘‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের সেই রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে, তা থেকেই সৃষ্টি করেছেন তাঁর জুড়িকে এবং দু’জন থেকেই বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক পুরুষ ও নারী।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪:১।’’
আল-কুরআনে আরো এসেছে- ‘‘তিনি তোমাদের স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জড়ি বানিয়েছেন এবং অনুরূপভাবে প্রাণীকুলের মধ্যেও তাদেরই স্বজাতীয় জুড়ি বানিয়েছেন এবং এভাবেই তিনি তোমাদের বংশ বৃদ্ধি ও বিস্তার করেন।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪২:১১।’’ আরও বলা হয়েছে- ‘‘তিনিই সেই মহান সত্তা (আল্লাহ), যিনি পানির উপাদান থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। পরে মানুষকে বংশক্রম ও শ্বশুর সম্পর্কিত আত্মীয়তার ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে তিনি তোমাদের বংশ বৃদ্ধি ও বিস্তার করেন।’’ ‘‘আল-কুরআন, ২৫:৫৪।’’
কুরআনের আয়াতে আরো আছে- ‘‘হে মানবজাতি! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে। আর তোমাদের সজ্জিত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্ররূপে, যেন তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪৯:১৩।’’ উপরিউক্ত আয়াতের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানবতা ও মানব সভ্যতার জয়মাত্রা এ পৃথিবীতে শুরু হয়েছিল একজন মানুষ দিয়ে। পরে তাঁরই অংশ থেকে তার জুড়ি (স্ত্রী) সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর এ দু’জনের পবিত্র দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রæতি হিসেবেই বিশ্বময় এত অসংখ্য পুরুষ ও নারী অস্তিত্ব লাভ করেছে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, মানব বংশধারার বিস্তার ও মানব সভ্যতার রক্ষাকবচ হচ্ছে মানব শিশু। মানব শিশুর উৎসস্থল হচ্ছে পুরুষ-নারীর দাম্পত্য জীবন। এ দাম্পত্য জীবনকে তথা নারীকে উৎপাদনক্ষেত্র স্বরূপ উল্লেখ করে বলা হয়েছে- ‘‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য উৎপাদনক্ষেত্র স্বরূপ।’’ ‘‘আল-কুরআন, ২:২২৩।’’
ক্ষেত বা খামারে চাষাবাদ ও বীজ বপণের লক্ষ্য হচ্ছে ফসল উৎপাদন, বিশেষ একটি ফসলের বংশবৃদ্ধি ও বংশের ধারা রক্ষা। অনুরূপভাবে স্ত্রী লোকেরা মানব-বংশরূপ ফসলের জন্য ক্ষেত্র স্বরূপ এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব বংশের বিস্তার ও অস্তিত্ব রক্ষা, তথা মানব সভ্যতার সুরক্ষা।
মানব-মানবীতে যদি দাম্পত্য জীবনের অভাব ঘটে তা হলে মানবতা ও সভ্যতা সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শিশু : আইনি ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ

আপডেট টাইম : ০৭:১৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১

ইহকালীন জীবনের জন্য যেমন শিশু সন্তানের গুরুত্ব হয়েছে, ঠিক পরকালীন জীবনের জন্যও শিশুদের গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। নিম্নোক্ত কুরআন ও হাদীসের উদ্বৃতি থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাঁদের সন্তানরাও ঈমানের পথে তাদের অনুসরণ করেছে, তাঁদের সে সন্তানদের আমরা তাঁদের সঙ্গে জান্নাতে একত্র করব।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৫২:২১।’’
এতে শিশু সন্তানকে সুসন্তান ও ঈমানের অনুসারী হিসাবে গড়ে তোলার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এতে শিশু সন্তানকে সুসন্তান ও ঈমানের অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- ‘‘সদা প্রস্তুত জান্নাতে তারা প্রবেশ করবে, আর তাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা পুণ্যবান হবে তারাও।’’ ‘‘আল-কুরআন, ১৩:২৩।’’ এদের জন্য ফিরিশতাদের একটি প্রার্থনা উল্লেখ করে কুরআনে এসেছে- ‘‘ওহে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে সদা প্রস্তুত জান্নাতে প্রবেশ করাও, যার প্রতিশ্রæতি তুমি তাদের দিয়েছ। আর তাদেরকেও যারা তাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে নেককার হবে। ‘‘আল-কুরআন, ৪০:৮।’’
শিশুর সাথে সদাচরণ করতে হবে। আর এটা ঈমানের পূর্ণতার গ্যারান্টি হিসেবে বিবেচিত। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ স. বলেন- ‘‘মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমান সে লোকই লাভ করেছে যার চরিত্র সর্বোত্তম এবং যিনি পরিবারের লোকদের সাথে কোমল আচরণকারী।’’ ‘‘তিরমিযী, ইমাম, আস-সুনান, অধ্যায়: আল-ঈমান, অনুচ্ছেদ: ফী ইস্তিকমালিল ঈমান ….. খ. ৫, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ২৬১২, পৃ. ৯:’’
আল্লাহ নিজেই যখন নেককার সন্তানদেরকে জান্নাতী পিতা-মাতার সঙ্গে পরকালে একত্রে বসবাস করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, তখন সন্তানদেরকে নেককার হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব। উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে শিমু-সন্তানের গুরুত্বের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদের মূলনীতিসমূহে শিশুর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিধৃত হয়েছে। সনদে বলা হয়েছে, শিশু বিষয়ক যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে শিশুর মা-বাবা, দেশের সংসদ, আদালত এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষসমূহ শিশুর সর্বত্তোম স্বার্থ রক্ষার নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে।’’ ‘‘র‌্যাচেল কবির, শিশুদের অধিকার আমাদের অঙ্গীকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ১৯৯৮, পৃ. ৫।’’
বস্তুত মানব শিশু তথা সকল প্রাণীর বাচ্চা এমনকি উদ্ভিদ জগতের জন্ম ও সৃষ্টি কৌশল আল্লাহর এক সীমাহীন কুদরত। মানবীয় প্রচেষ্টা এখানে অকার্যকর। পৃথিবীতে মানব প্রজন্মের ধারা এবং নারী ও পুরুষের ভারসাম্য রক্ষার্থে আল্লাহ তাআলার কুদরতের অন্যতম সৃষ্টি এ মানব প্রজন্ম তথা মানব শিশু। মানব শিশুর জন্মদান মানুষের ইচ্ছায় হয় না, এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে।
মানব শিশুর গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে তাদের প্রতি যথার্থ আচরণ ও ব্যবহার করা সকলের দায়িত্ব। আধুনিক ভোগবাদী চিন্তাধারায় মানুষের সুখ-শান্তি ও ভোগের আকাঙ্খায় মানব শিশুর প্রতি নানা রকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। অনেক দম্পতি স্বাস্থ্যহানি ও ভোগের সুযোগ কমে যাবে মনে করে সন্তান গ্রহণ করতে চায় না। অনেকে তো বিয়ে করতেও রাজি নয়। তারা চায় বিবাহ বন্ধনহীন উচ্ছৃঙ্খল জীবন। বিয়ের বন্ধন ছাড়াই তারা যৌন জীবন আগ্রহী। জন্ম নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশলের কারণে এসব অবৈধ কাজ অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়ে গেছে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ ও মুসলমানের সুসন্তান কামনাই স্বাভাবিক। একজন ভাল মানুষ অবশ্য শিশু-সন্তানের উজ্জ্বল সমৃদ্ধ জীবন কামনা করে। কাজেই একজন ভাল মানুষের কাছে মানব শিশু গুরুত্ব অপরিসীম।
শিশু মানব সভ্যতার রক্ষা কবচ ঃ ইসলামী সমাজ দর্শনে মানব বংশধারা, অস্তিত্ব রক্ষা ও বিস্তারের ভিত্তি ভূমি হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র দাম্পত্য জীবন। এ দাম্পত্য জীবনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতির বংশ বিস্তার ও মানব সভ্যতার অগ্রায়ণ। মানব শিশু মানব সভ্যতার রক্ষাকবচ। মানব সভ্যতার সূচনা ও বিকাশের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে বিধৃত হয়েছে। বলা হয়েছে- ‘‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের সেই রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে, তা থেকেই সৃষ্টি করেছেন তাঁর জুড়িকে এবং দু’জন থেকেই বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক পুরুষ ও নারী।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪:১।’’
আল-কুরআনে আরো এসেছে- ‘‘তিনি তোমাদের স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জড়ি বানিয়েছেন এবং অনুরূপভাবে প্রাণীকুলের মধ্যেও তাদেরই স্বজাতীয় জুড়ি বানিয়েছেন এবং এভাবেই তিনি তোমাদের বংশ বৃদ্ধি ও বিস্তার করেন।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪২:১১।’’ আরও বলা হয়েছে- ‘‘তিনিই সেই মহান সত্তা (আল্লাহ), যিনি পানির উপাদান থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। পরে মানুষকে বংশক্রম ও শ্বশুর সম্পর্কিত আত্মীয়তার ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে তিনি তোমাদের বংশ বৃদ্ধি ও বিস্তার করেন।’’ ‘‘আল-কুরআন, ২৫:৫৪।’’
কুরআনের আয়াতে আরো আছে- ‘‘হে মানবজাতি! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে। আর তোমাদের সজ্জিত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্ররূপে, যেন তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪৯:১৩।’’ উপরিউক্ত আয়াতের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানবতা ও মানব সভ্যতার জয়মাত্রা এ পৃথিবীতে শুরু হয়েছিল একজন মানুষ দিয়ে। পরে তাঁরই অংশ থেকে তার জুড়ি (স্ত্রী) সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর এ দু’জনের পবিত্র দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রæতি হিসেবেই বিশ্বময় এত অসংখ্য পুরুষ ও নারী অস্তিত্ব লাভ করেছে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, মানব বংশধারার বিস্তার ও মানব সভ্যতার রক্ষাকবচ হচ্ছে মানব শিশু। মানব শিশুর উৎসস্থল হচ্ছে পুরুষ-নারীর দাম্পত্য জীবন। এ দাম্পত্য জীবনকে তথা নারীকে উৎপাদনক্ষেত্র স্বরূপ উল্লেখ করে বলা হয়েছে- ‘‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য উৎপাদনক্ষেত্র স্বরূপ।’’ ‘‘আল-কুরআন, ২:২২৩।’’
ক্ষেত বা খামারে চাষাবাদ ও বীজ বপণের লক্ষ্য হচ্ছে ফসল উৎপাদন, বিশেষ একটি ফসলের বংশবৃদ্ধি ও বংশের ধারা রক্ষা। অনুরূপভাবে স্ত্রী লোকেরা মানব-বংশরূপ ফসলের জন্য ক্ষেত্র স্বরূপ এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব বংশের বিস্তার ও অস্তিত্ব রক্ষা, তথা মানব সভ্যতার সুরক্ষা।
মানব-মানবীতে যদি দাম্পত্য জীবনের অভাব ঘটে তা হলে মানবতা ও সভ্যতা সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটবে।