হারিয়ে যাচ্ছে হাতিয়া, কাঁদছে মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাক্ষসী মেঘনার ছোবলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাতিয়া। উত্তাল মেঘনার খরস্রোতা ঢেউয়ের আঘাতে মাত্র ক’মাসের ব্যবধানে জেলার হাতিয়া উপজেলার মূলভূখণ্ড থেকে হারিয়ে গেছে কমপক্ষে ৫শ’ একর আবাদি ভূমি। এ সময় গৃহহারা হয়েছে কমপক্ষে ১শ’ পরিবার। গতকাল সরজমিনে মেঘনার ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনদিন ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। মাত্র ক’বছর আগে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা বয়ারচরের একাংশ বর্তমানে আবারো মেঘনার বুকে হারিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় হরণী ইউনিয়নের প্রশাসক মোরশেদ আলম সাংবাদিককে বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা মেঘনার পুন:ভাঙনের কবলে পড়েছে। বয়ারচরের দক্ষিণপ্রান্তে মেঘনা ঘেঁষে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে মেঘনার হৃদয়হীন ঢেউয়ের নীড়ভাঙ্গা আঘাতে তছনছ হতে চলছে অনেকেরই সাজানো ঘরবাড়ি, সংসার। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, হয়তোবা ১৫/২০ দিনের মধ্যে মেঘনার প্রবল ঢেউয়ের তীব্র রাক্ষুসে তেজে আঘাত হানতে পারে বাঁধে। এতে বয়ারচরের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল বিলীন হতে পারে অতি নিকটে। ইতিমধ্যে, ভাঙনের কবলে অনেকটা বিলীন হয়ে হয়ে গেছে টাংকির বাজার। হুমকির মুখে রয়েছে এখানকার মসজিদ ও হাফেজি মাদরাসা।

এখানকার স্থানীয় দোকানি ও জেলেরাসহ গ্রামবাসী চেষ্টা করছেন কোনোরকম ঝাউ গাছপালার প্রাচীর দিয়ে জোয়ারের তীব্রতা ব্যাহত করতে। কিন্তু কোনো কিছুই টিকছে না। মেঘনার ঢেউয়ে বাজারের পল্লী বিদ্যুতের বেশ ক’টি পিলারও নদীতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী বলেছেন, একমাত্র ব্লক বাঁধই এ অঞ্চলের মূলভূখণ্ড তথা জনবসতিকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। না হলে প্রবল স্রোতের মুখে খড়কুটো দিয়ে কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। স্থানীয় কুটি কালাম মাঝি বলেন, এ পর্যন্ত ৩ বার মেঘনার কবলে পড়েছেন। তিনি বলেন, মেঘনার বুকেই ছিল তার ঘর-বাড়ি ও জায়গা-সম্পত্তি। সবই বিলীন হয়ে আজ তিনি বেড়িরকূলে কোনো রকম মাথা গুঁজে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন পার করছেন।

তবে আনন্দের সঙ্গে কুটি কালাম জানান, নদীতে আগের মতো দস্যুদের কোনো ছোবল নেই। তিনি বলেন, জাহাজ্যার চরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হওয়ার পরেই মোটামুটি নদীতে তারা অনেকটা নিরাপদে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। এছাড়া সরকারি সাহায্য সহযোগিতাও অপ্রতুল বলে অভিযোগ করে বলেন, বছরে একবার কিছু দেয়া হয়। এরপর আর খবর থাকে না। বর্তমানে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে উপকূলে কয়েক সহস্রাধিক জেলে মেঘনায় এসে ইলিশের প্রহর গুনছেন। তারা আশা করছেন, আসছে ইলিশের ভরা মৌসুমে চাহিদা মাফিক ইলিশ পেলে হয়তো মহাজনের দায়-দেনা পরিশোধ করে কোনোরকম ঢাল-ভাত খেয়ে জীবন চালাতে পারবেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন সাংবাদিককে বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনকবলিত এলাকার রোধকল্পে বিকল্প চিন্তা করছে। তবে সেসব করতে সময় ও প্রচুর অর্থ দরকার। এ বিষয়ে হাতিয়া আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস আলী জানান, তিনি পুরো হাতিয়া এবং জেগে ওঠা চরাঞ্চল মেঘনার ভাঙনের ছোবল হতে রক্ষাকল্পে সরকারের কাছে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছেন। এটি বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে। তিনি আশা করেন, এটি বাস্তবায়িত হলে হাতিয়ার ভাঙন অচিরেই থেমে যাবে বলে মনে করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর