বাল্যবিয়ে না দেয়ার মুচলেকায় মিমাকে মায়ের কাছে সোপর্দ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাল্যবিয়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে মাদারীপুর নানা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা মিমা আক্তার (১৩)-কে তার মা হাসিনা বেগমের হাতে তুলে দিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া।

গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার মাদারীপুর জেলার ঝাউদি ইউনিয়নের তোবারকদি গ্রামে মিমার নানা বাড়িতে তার মামা রহিম খা ও মামি ইয়াসমিন বেগম মিমার অমতে বিয়ের আয়োজন করেন। উপায়ন্তর না দেখে বিয়ের ভয়ে মিমা তার নানা বাড়ি থেকে বের হয়ে তার চাচাতো নানার কাছে শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্ত ভুলবশত সে শরিয়তপুরের বাসের পরিবর্তে ফরিদপুরের বাসে চেপে ফরিদপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এসে নামে। একই বাসের যাত্রী শরিয়তপুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ইলিয়াস হোসেন লিমন ও মুক্তা বেগম দম্পতি মেয়েটিকে একা দেখতে পেয়ে তার কাছে তার গন্তব্যের কথা জানতে চাইলে সে তার চাচাতো নানার কাছে যাবে বলে জানায়। ইলিয়াস তখন তার ওই নানার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে তাকে ভুলক্রমে সে ফরিদপুর চলে এসেছে বলে জানান।

মেয়েটির নানা ইলিয়াসকে তার বাসায় সাময়িক আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে পরের দিন অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ফরিদপুর থেকে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলে ইলিয়াস দম্পতি শহরের কমলাপুরে তাদের বাসায় মেয়েটিকে নিয়ে যায়। মিমা সব কথা ইলিয়াস দম্পতিকে জানালে তারা ওর বাবা, মা ও মামাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। যোগাযোগের এক পর্যায়ে মেয়েটির মামা-মামি তাকে নিতে রাজি না হওয়ায় এবং তার নানা নিতে না আসায় বুধবার বেলা ১১টায় ইলিয়াস ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়াকে বিষয়টি অবগত করেন। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। তার প্রেক্ষিতে বিকাল সাড়ে ৪টায় মিমার মা হাসিনা বেগম মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হন।

মিমার মা হাসিনা বেগম জানান, বছর তিনেক আগে মিমার বাবা মিন্টু শেখের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে এবং হাসিনা আবার বিয়ে করে। মিমার আরো দুটি ছোট ভাই রয়েছে। তারা তার বাবা মিন্টু শেখের কাছে ঢাকায় থাকত। মিমা হাজারিবাগ গার্লস স্কুল ও কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।

তিনি আরো জানান, গত রোজার সময় মিমা তার মায়ের সাথে নানা বাড়িতে চলে আসে। তার ভাইয়েরা মিমার বিয়ে ঠিক করে, যার কারণে সে বাড়ি থেকে পালায়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে অবগত করি এবং তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করি। অবশেষে মেয়েটির মা আমার কার্যালয়ে হাজির হয়ে তাকে নিজ হেফাজতে নেয়ার আবেদন করলে, মেয়েকে বাল্যবিয়ে না দেয়ার মুচলেকায় মিমাকে তার হাতে তুলে দেই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর