জজ হওয়া আর হলোনা নওগাঁর বদলগাছীর মেধাবী শিক্ষার্থী আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহির। গত রবিবার ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম পড়ে যায়।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুরে গিয়ে দেখা যায়, শতবর্ষী দাদা আলহাজ্ব সোলাইমান আলী মন্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক সেদিক দেখছে। আর ফুফু আক্তার বানুর কান্না থামছে না। এদিকে মেধাবী ছাত্রীর এমনভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের লোকজনসহ প্রতিবেশীরা। তাই ঘটনার রহস্য উদঘাটন চাইলেন ফুফাত ভাই বকুল মিয়াসহ প্রতিবেশীরা।
জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি ছিল মেজো। বাবার আদরের ২৪ বছরের এই মেয়ে ছোট থেকেই ছিল মেধাবী। তাই দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনে করতেন পড়াশোনা। ছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির প্রতিবাদী শিক্ষার্থী। সেই জন্য পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় গিয়ে শুরু করেছিলেন আন্দোলন। মাইক হাতে অন্যান্য সহপাঠীর সাথে দাঁড়ান রাস্তায়।
গত রবিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নিউমার্কেট থানা পুলিশ রাজধানীর নিউমার্কেট থানাধীন এলিফ্যান্ট রোডের মকসুদ টাওয়ারের ৮ তলার একটি কক্ষ থেকে আনিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বুটেক্সের এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নিহত ঢাবির ওই ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। যদিও এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনো। তবে তার পরিবারসহ এলকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার মৃত্যুর রহস্য উৎঘাটন করা হোক।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, নিহত আনিকার চেয়ারম্যান বাবা ফিরোজ হোসেন ছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আর এই ৫ আগষ্ট তার বাড়িতে যেন কেউ হামলা না করে এমন স্কিনশট এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। আনিকা আন্দোলনে প্রথম সারির হলেও তার বাবার কারণে তাকে বিভিন্ন কটু কথা শুনতে হতো। এমনকি সাইভার ব্যুলিংয়েরও শিকার হতে হয়েছে তাকে। যদিও আনিকা জয়পুরহাটে আন্দোলনের সময় অনেক অ্যাক্টিভ ছিলেন। তারপরও তাদের একটি ফার্মও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাবাসহ ফ্যামিলির অনেককে হয়রানি করা হচ্ছে। তার বাবার শাস্তি পাওয়া লাগছে এটা তার জন্য ছিল কষ্টদায়ক। তবে যে কারণেই হোক, আনিকার মৃত্যুর রহস্যের জট খুলবে এমনটাই দাবি সকলের।
বকুল নামের একজন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখি আনিকা মেহেরুন শাহির মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। কিন্তু মরদেহ অর্ধেক মেঝেতে লেগেছিল। আমার জানা মতে, একটা ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। আমরা ঢাকায় আছি। এদিকে তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙ্গা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা থেকে আনিকার মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। পরে রাতেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
Reporter Name 
























