হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার গিয়াস উদ্দিন শেখ।
সোমবার দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাকিবুল হকের আদালতে এ জবানবন্দি প্রদান করেন।
জবানবন্দিকে হত্যার নেপথ্যের কারণসহ নানা দিক উল্লেখ করা হয়। জবানবন্দি শেষে গিয়াস উদ্দিন শেখকে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আদালতে সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় নিহত রহিমার ভাই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে আসামি করে বেলাবো থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নিহত রহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পিবিআইয়ের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে সোমবার দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই সময় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, গিয়াস উদ্দিন শেখ পেশায় রংমিস্ত্রি। একইসঙ্গে মাদকাসক্ত ও জুয়াড়ি। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে নিহত রহিমা বেগমের নামে বিভিন্ন এনজিও থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, শ্বশুর-শ্যালক ও শ্যালকের শ্যালকের (বিয়াই) কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ও সুদে আরও দুই লাখ টাকাসহ সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এই সব ঋণ নিহত রহিমা বেগমের নামে আনা হয়। সুদে আসলে ঋণের টাকা ১২ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
এ টাকা পরিশোধের জন্য নিহতের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের ওপর চাপ ছিল। সর্বশেষ জুয়া খেলার মতো কোনো টাকা তার হাতে ছিল না। তাই বাড়ির আঙিনা থেকে কয়েকটি গাছ বিক্রি করেন এবং তা নেওয়ার সময় প্রতিবেশী চাচাতো ভাই রেনু মিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরই মধ্যে সে জানতে পারে ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তি মারা গেলে ঋণ টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এই চিন্তা থেকে গিয়াস স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গিয়াস রাতে বাড়ি ফিরে সন্তানদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত আড়াইটার দিকে স্ত্রীকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও গরু জবাইয়ের ছুড়ি দিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। স্ত্রীকে হত্যার পর সন্তানরা সবাইকে বলে দেবে- এই ভয়ে গিয়াস সন্তানদেরও হত্যা করে। হত্যার পর পুলিশ ও মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে রাতেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
উল্লেখ্য, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিথ্যা তথ্য দেওয়া শুরু করেন গিয়াস। একইসঙ্গে ঝগড়ার রেশ ধরে প্রতিপক্ষ রেনু মিয়া এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বেলাবো থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সাংবাদিকেদের কাছে অভিযোগ করেন।
পরে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে তদন্তে যান পিবিআই। নানা বিচার বিশ্লেষণ শেষে নিহতের স্বামী গিয়াসের অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নানের সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইয়ের এসপির কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেন গিয়াস।