ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে সর্বনাশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটে আরও অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। সুরমা নদী উপচে গতকাল সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বৃষ্টি কমলেও ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে সিলেটে জুড়ে। এছাড়া পানি বাড়ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাাপুর কানাইঘাট ও জকিগঞ্জেও। অপরদিকে সিলেটের তিন নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন র্বোড।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল সকাল থেকে সুরমা নদীর তীর উপচে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করতে দেখা যায়। এতে প্লাবিত হয় নগরীর উপশহর, সোবহানিঘট, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় ঢুকে পড়ে নদীর পানি।

নগরের কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ছোবা মিয়া বলেন, সকালে এসে দেখে নদী উপচে দেকানের সামনে পানি এসে গেছে। দুপুর গড়ানোর আগেই দোকানের ভেতর পানি প্রবেশ করে। এখন পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এতো দ্রুত পানি বাড়তে আগে কখনো দেখিনি। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল সকালে ‘ইউএনও গোয়ানঘাট’ ফেসবুক পেজ থেকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করে লিখেন ‘প্রিয় গোয়াইনঘাটবাসী, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে বৃষ্টি বাড়বে। সকলকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করার অনুরোধ করা হলো।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে গত রোববারের চেয়ে বেশি বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট পয়েন্টে পানি ছিল ১০.৪৯ সেন্টিমিটার। গতকাল সকালে পানি সীমা দাঁড়িয়েছে ১০.৬৬ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে গতকাল সকালে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টেও বেড়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় এ পয়েন্টে পানি সীমা ছিল ৬.৮৩ সেন্টিমিটার; গতকাল সকাল ৯টায় পানি সীমা হয় ৬.৯৬ সেন্টিমিটার। পানি বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। এখানে গতকাল সকাল ৬টায় পানি সীমা ছিল ৮.৭০ সেন্টিমিটার; সকাল ৯টায় পানি সীমা দাঁড়ায় ৮.৭৪ সেন্টিমিটার।
এদিকে, গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বিপদসীমার ০.৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কানাইঘাটের লোভা নদীর পানি গত রোববারের চেয়ে বেড়েছে ০.৩৪ সেন্টিমিটার। রোববার ছিল ১৪.৩৬ সেন্টিমিটার; গতকাল সকালে ১৪.৬৫ সেন্টিমিটার। এদিকে, গতকাল সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১.২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার চেয়ে আজ সকালে এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ০.৩ সেন্টিমিটার। এতে গত রোববার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও গতাকল সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে কানাইঘাটে।

 

পৌর শহরসহ আশপাশ এলাকায় নতুন করে বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সুরমা ডাইকের গৌরিপুর-কুওরঘড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি ভাঙ্গন কবলিত পয়েন্ট দিয়ে তীব্র গতিতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার হাজার হাজার বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গতকাল সিলেট-৫ কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এদিকে ভয়াবহ বন্যার কারণে উপজেলার অধিকাংশ এলাকার গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। সিলেট শহরের সাথে কানাইঘাটের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

আবহাওয়া অধিদফতরের সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী ইনকিলাবকে জানায়, সিলেটে কাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। তবে উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, একারণে ঢল নামছে। ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর