ঢাকা মহানগরীকে রক্ষায় ৫ দফা প্রস্তাব মেয়র তাপসের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা মহানগরীকে রক্ষায় ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

 মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্তিতে সোমবার নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রস্তাব দেন।

মেয়র তাপস বলেন, শহর পরিকল্পনা অত্যন্ত দুরূহ একটি মহাযজ্ঞ। আর ঢাকা শহরের মতো পরিকল্পনাহীন শহরে সেই ব্যবস্থাপনা আরও বেশি দুরূহ। তাই ঢাকা শহরকে একটি সচল, আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। সেজন্য ঢাকাবাসীর কিছু নিয়ম-নীতি পরিপালন করা একান্ত আবশ্যক। না হলে যতই বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হোক না কেন, আমরা যতই স্বপ্ন দেখি না কেন, সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন করা সম্ভব হবে না— যদি না এখনই ঢাকামুখী জনস্রোত রোধ করা যায়।

তিনি বলেন, বাস্তবিকতার নিরিখে এটি সুস্পষ্ট যে, ঢাকা শহর ২ কোটিরও বেশি জনগোষ্ঠীর ভার বহনে অক্ষম। এ শহরে দুই কোটির বেশি জনগোষ্ঠীকে ধারণ করার সক্ষমতা নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সুতরাং সরকারকে সে ব্যাপারে এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে।

পাঁচ দফা প্রস্তাব-

প্রথমত- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্রাম হবে শহর’ যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। সেজন্য জরুরিভিত্তিতে ঢাকার আশপাশের শহর, এলাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত- শহর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাকে একটি সময়সীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে, সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। শহর কখন জেগে উঠবে, কখন ঘুমাবে- সেই বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য শহরের মতোই সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঢাকা শহরের জন্যও থাকা আবশ্যক। সুতরাং আমরা মনে করি, ঢাকা শহরকে একটি বাসযোগ্য ও উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে অন্যান্য অনুষঙ্গের পাশাপাশি রাত ৮টার মধ্যে বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, বাজার (মার্কেট), শপিং মল ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। খাবার হোটেল রাত ১০টার পর খোলা রাখা যাবে না। ঔষধালয়, চিকিৎসালয় ইত্যাদি একান্ত জরুরি সেবা ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময়ের পর খোলা রাখতে হলে করপোরেশনের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। এতে যেমন শহরের কার্যক্রম শৃঙ্খলায় আসবে তেমনি লোকজনও তাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটাতে পারবে, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন মজবুত ভিত্তি লাভ করবে।

তৃতীয়ত- আমরা যে খালগুলোর দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি, সেগুলো হতে বর্জ্য ও পলি অপসারণ করে চলেছি। খাল পুনরুদ্ধার ও সেগুলোর উন্নয়ন এবং সেখানে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু খালে যদি পয়:বর্জ্য মিশে যায় তাহলে আমাদের সকল উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। নান্দনিকতা নোংরা ও দূষিত পরিবেশে বিলীন হয়ে যাবে।

সুতরাং এখন থেকেই আমাদেরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে আমাদের নর্দমায় কোনো পয়:বর্জ্য/পানির সংযোগ আমরা আর দিতে দেব না। পয়:বর্জ্য/পানি ব্যবস্থাপনা ওয়াসার দায়িত্ব। ওয়াসা সেই দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা আশাবাদী। ওয়াসা সেই দায়িত্ব পালন করুক বা না করুক, আমরা আমাদের স্ট্রম স্যুয়ারেজে আর কোনো পয়:বর্জ্যের/পানির সংযোগ দেব না।

সেজন্য ঢাকাবাসীকেও আমরা অনুরোধ করছি- আপনারা আপনার বাড়ি/ভবনে যথানিয়মে সোক ওয়েল ও সেফটিক ট্যাংক নির্মাণের ব্যবস্থা নিন। নতুবা এ শহরকে বাঁচাতে আমাদের কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে।

চতুর্থত- আমরা পথচারীবান্ধব একটি শহর গড়ে তুলতে চাই। সেজন্য আগামী অর্থবছর থেকেই হকার ব্যবস্থাপনাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। ঢাকা শহরে দেখা যায়, যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই শহরের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, হাঁটার পথ, পথচারী পারাপার সেতু দখল করে জনগণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এ ধরনের মনোবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রচুর অর্থ ও পরিশ্রমের বিনিময়ে এসব অবকাঠামো সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। সেগুলো বিভিন্নভাবে দখল হচ্ছে— এটা মেনে নেওয়া যায় না।

আমরা অনুধাবন করি যে, তাদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। সে বিষয়ে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা হকার ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পুলিশ প্রশাসনসহ সব অংশীজনের সাথে মতবিনিময় করব। পর্যায়ক্রমে যাতে তাদের সরানো যায় সেজন্য আমাদের ধারাবাহিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। রাস্তাগুলো কীভাবে হকার মুক্ত করা যায়, হাঁটার পথসমূহ কীভাবে উন্মুক্ত করা যায়- সেটাই হবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, কিছু কিছু সড়ক/এলাকাকে আমরা লাল চিহ্নিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করব। সেসব সড়কে কোনোভাবেই কোনো হকারকে বসতে দেওয়া হবে না।

কিছু সড়ককে হলুদ চিহ্নিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেসব সড়কে সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য হকাররা বসতে পারবে, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে। সময়সীমার বাইরে সেসব সড়কেও কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। এভাবে হকার ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা যাবে।

পঞ্চমত- ঢাকা শহরে যে পরিমাণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার চেয়ে অনেক কম প্রতিষ্ঠানই করপোরেশনের কাছ হতে বাণিজ্য অনুমতি গ্রহণ করে থাকে। অনেকেই বাণিজ্য অনুমতি ছাড়াও নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছর হতে এ বিষয়ে আমরা কঠোর হবো। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বাণিজ্য অনুমতিবিহীন আর কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর