স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে সেই শিক্ষার্থীরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নড়াইলের শেখহাটি ইউনিয়নের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পহেলা বৈশাখ বিদ্যালয়টির তিন শতাধিক শিক্ষার্থী সাইকেলে ১১টি গ্রাম ঘুরে বরণ করে নিয়েছিল নতুন বছরকে। গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এই বর্ষবরণ তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দেশবাসীকে। সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবারও আলোচনায় এসেছেন স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে।

গত শুক্রবার শুরু করে গতকাল রবিবার পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে ১২ কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছেন এই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।

গত শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। আর গতকাল রবিবার ছিল বুদ্ধপূর্ণিমার বন্ধ। মাঝখানে শনিবারের দিনটি প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি থেকে স্কুল বন্ধ দিয়ে তিন দিনের ধান কাটা কর্মসূচি সাজানো হয়। এই তিন দিনে বিদ্যালয়টির সাড়ে তিন শ ছাত্র-ছাত্রী, ১৪ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী জমিতে গিয়ে ধান কাটেন। জমির ধান কৃষকের বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা।

 

দশম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী গোস্বামী বললেন, ‘স্যাররা ক্লাসে এসে ধান কাটার কথা বললে সবাই রাজি হয়ে যাই। আমার বাবাও কৃষক। তাই ধান নিয়ে তাঁদের কষ্টটা আমরা বুঝি। আমি সকালে স্যারদের সঙ্গে অন্যের জমিতে আর বিকেলে নিজের জমির ধান কেটেছি। সহপাঠীরা সবাই মিলে কাজটি করেছি বলে কষ্ট লাগেনি। ’

গুয়াখোলা গ্রামের বর্গাচাষি প্রতাপ কুমার পাল। ধান কাটা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন তিনি। সেই চিন্তা দূর করে দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতাপ বললেন, ‘৬০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ধান করেছি এবার। কিন্তু হাটবাজারে মজুর পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃষ্টির পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছিল ধান। ছাত্র-ছাত্রীরা ধান কেটে দিয়ে কী যে উপকার করেছে বলে বোঝাতে পারব না। ’

প্রতাপের মতোই ধান কাটা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন হাতিয়ারা গ্রামের কৃষক মিহির সরকার। তিনি বললেন, ‘এক মণ ধানের দাম ৮৯০ টাকা। কিন্তু একজন মজুরকে দিনে দিতে হয় ১০০০-১১০০ টাকার মতো। তাই ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীরা সেই দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে। ’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র নাথ মণ্ডল বললেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গ্রামের কৃষকরা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিলেন। জমিতে পানি জমে পচে যাচ্ছিল অনেকের কষ্টের ফসল। তা ছাড়া মজুরি অত্যধিক বেশি বলে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটানোর সামর্থ্যও নেই অনেক কৃষকের। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। ’

ছুটির দিন, তাই কতজন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটতে আসবে, সেটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন আইসিটি শিক্ষক তাপস কুমার পাঠক। তিনি বললেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল বাড়ি থেকে কাঁচি, গামছাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আসতে। স্কুল ড্রেস পরে যেন কেউ না আসে। প্রথম দিন ছিল শুক্রবার। স্কুলের বন্ধের দিনে কতজন আসবে তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু দেখি সকাল ৮টার আগেই একে একে সবাই এসে হাজির। ’

বাংলার শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী বললেন, ‘শিক্ষকদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ১১টি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করেছি আমরা। পুরো কাজটির সমন্বয় করেছিলেন প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানী মল্লিক। ’ রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বললেন, ‘এখনো অনেক কৃষক আমাদের কাছে এসে ধরনা দিচ্ছেন তাঁদের ধান কেটে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সবার ধান কেটে দেওয়ার মতো সামর্থ্য তো আমাদের নেই। ’

এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল  ‘অবসর’ পাতায় একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল। যার শিরোনাম ছিল ‘তাক লাগাল নড়াইল’।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর