নওগাঁয় কোটি টাকার কলা বেচাকেনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নওগাঁর মান্দায় দিন দিন বাড়ছে কলার চাষ। উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় এ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। চাষ বাড়তে থাকায় হাটে আমদানিও বাড়ছে। বর্তমানে কলা বেচাকেনার পাইকারি মোকামে পরিণত হয়েছে উপজেলার সতিহাট। সপ্তাহে এ হাটে এখন অন্তত কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হচ্ছে।

প্রতি রোববার বিকেল থেকে শুরু হয় বেচাকেনা, চলে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। তবে সোমবার দিনভর জমজমাট বেচাকেনা চলে। এখানকার কলা চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হাটবারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে জমজমাট হয়ে উঠে হাটের আশপাশ।

এলাকার কৃষকেরা বলছেন, কলা চাষে উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম। একই সঙ্গে কীটনাশক কম প্রয়োগ করতে হয়। ঝুঁকিও নেই বললেই চলে। জমিতে একবার চাষ করলে ফল পাওয়া যায় ৪ থেকে ৫ বছর। এক বিঘা জমিতে খরচ বাদে লাভ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই এ চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাঁদের।

উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করেছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে গণেশপুর, মৈনম, প্রসাদপুর ও কুসুম্বা ইউনিয়নে কলার চাষ বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য ইউনিয়নগুলোতেও বাড়ছে কলার চাষ।

জানা গেছে, নওগাঁ সদর, মান্দা, মহাদেবপুর ও নিয়ামতপুর উপজেলাসহ রাজশাহীর বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলার চাষিরা কলা নিয়ে আসেন সতিহাটে। প্রায় দুই যুগ ধরে এ হাটে কলা বেচাকেনা হলেও হাট তেমন জমজমাট ছিল না। চাষ বেড়ে যাওয়ায় এ হাটে প্রচুর কলার আমদানি হচ্ছে। চাহিদামত কলা পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাটে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতি হাটবারে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক কলার আমদানি হয়ে থাকে সতিহাটে। এ হাটের কলা যায় রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, মীরপুর, তেজগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। যার বাজার মূল্য অন্তত কোটি টাকা। একই সঙ্গে স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরাও কয়েক লাখ টাকার কলা বেচাকেনা করেন। রমজান মাসে একই পরিমাণ কলার দাম বেড়ে যায় দেড়গুণ।

উপজেলার মধ্যমৈনম গ্রামের কলাচাষি গাজীউর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। হালচাষ, সার, চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফল পাওয়া পর্যন্ত খরচ হয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে প্রতি বিঘায় খরচ বাড়ে আরও ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে চারা লাগে ৪০০টি। রোগ-বালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও ভালো মানের অন্তত ৩০০ কাঁদি কলা বিক্রি করা সম্ভব। যার বাজার মূল্য প্রায় লাখ টাকা। জমিতে একবার চারা রোপণ করলে চার থেকে পাঁচ বছর ফল পাওয়া যায়।

ঢাকার মীরপুরের কলা ব্যবসায়ী কাউসার শেখ নিয়মিত আসেন সতিহাটে। তিনি বলেন, সতিহাটের কলার মান ভালো। চাহিদামত কলা পাওয়া যায়। দামও অন্য হাটের তুলনায় কম। এসব কারণে তিনি নিয়মিত আসেন এই হাটে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় উপজেলায় কলার চাষ দিনদিন বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরিচর্যা, কীটনাশক প্রয়োগসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর