জনপ্রিয় লাল ড্রাগন চাষে অধিক লাভ, এক বছরেই ফলন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শেরপুরের  ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের কালাকুড়া এলাকার ড্রাগন চাষি মো. আল-আমিন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত লাল বারী-১ জাতের ৪৫০টি চারা রোপণ করেন এক বছর আগে। এখন তার বাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। নিয়মিত চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন তিনি। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশেই জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন চাষ।

শেরপুরেও জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশী এ ফলের চাষ। জেলার নকলা উপজেলার পোলাদেশী, বাছুর আলগা, মোজার ও রামপুর এলাকার কয়েক জন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়েক বছর ধরে ড্রাগন চাষ করছেন। তারা ফল বিক্রি ও কাটিং চারা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের চৈতাজানী গ্রামের মো. শাহ আলম ২০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগনের খামার। পাশাপাশি করেছেন মাল্টা বাগান। তিনিও প্রায় এক বছর ধরে লাল ড্রাগন (বারি-১) চাষ করছেন।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, কৃষকদের ড্রাগন চাষে আগ্রহী করতে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির আঙিনা ও অনাবাদি জমিতে চাষ করে সহজে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

ড্রাগন ফণি মনসা প্রজাতির উদ্ভিদ। এর ফুল রাতে ফোটে, তাই একে নাইট কুইনও বলা হয়। জেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাগন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফল। দুই দশক ধরে আমাদের দেশে এ ফল আমদানি করা হতো। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনেও বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষাবাদ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এর চাষাবাদ শুরু হয় ২০০৭ সালে।

ড্রাগন চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় শেরপুরে এর চাষাবাদ বাড়াতে উদ্যোগ নেন তৎকালীন সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। তার নির্দেশে ২০১২ সালে জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টার নকলায় ৩২০ জন প্রান্তিক কৃষককে ফলের কাটিংকৃত চারা সরবরাহ করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ বিনা খরচে প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের মোজারবাজার, পোলাদেশী, বাওসা, চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর, বাছুরআলগা এলাকার ১০ থেকে ১২ জন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ও অনেকেই বসতবাড়ির আঙিনা ও অনাবাদি জমিতে গত কয়েক বছর ধরে ড্রাগন চাষ করছেন। এখন এ কৃষকদের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে।

ড্রাগন ভিটামিন সি, মিনারেল ও আঁশসমৃদ্ধ। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডায়াবেটিস, প্যারালাইসিস ও হার্টের রোগ প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম। নকলার হাবিবুর ও শফিকুল বলেন, ড্রাগন গাছে সামান্য জৈব সার দিলে চলে। রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না কীটনাশকের?ও। মাসে একবার ছত্রাকনাশক ছিটাতে হয়। তবে শীতকালে সন্ধ্যার পর আলোর ব্যবস্থা করতে হয়। চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছর পর ফল ধরে। একবার রোপণ করলে টানা ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। পূর্ণ বয়সের একেকটি চারা থেকে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এ গাছের রোগবালাই ও মৃত্যুঝুঁকি নেই বললে চলে।

কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ফলে এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে জেলার কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নতি ঘটবে।

পোলাদেশীর কৃষক আ. হালিম বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় ড্রাগন চাষ করে আমরা এখন সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি। ড্রাগন একবার যে খেয়েছে, বার বার সে খোঁজবেই।

রামপুরের ড্রাগনচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ১৫ শতক পতিত জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। এখন তার দেখাদেখি অনেকেই ড্রাগন চাষ করছেন। তার বাগানে ড্রাগন গাছ রয়েছে ৩২০টি।

বাওসা এলাকার চাষি পারুল বেগম জানান, তার বাগানে গাছ রয়েছে ৮০টি। সংসারের পাশাপাশি তিনি ড্রাগন ক্ষেতে সময় দিয়ে তৃপ্তি পান। তার মতে, এর ফুল ও ফল পরিবেশকে নান্দনিক সৌন্দর্য দেয়। এতে বাড়তি ব্যয় নেই, বরং সংসারে বাড়তি আয় হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপপরিচালক ড. মোহিদ কুমার দে বলেন, ২০১২ সালে নকলায় পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষ শুরু হয়, যা বাণিজ্যিক চাষে রূপ নিয়েছে। কৃষি বিভাগের তরফ থেকে সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর