হাওর বার্তা ডেস্কঃ গাছে গাছে কাঁচা-পাকা পেঁপের সারি। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত থরে থরে সাজানো প্রতিটি পেঁপের সর্বনিন্ম ওজন চার থেকে পাঁচ কেজি। বড় আকারের পেঁপে ৭ থেকে ৮ কেজি। বিস্ময়কর এই পেঁপে দেশেই চাষ হচ্ছে। যার ফলন মিলবে মাত্র ৬ মাসেই।
বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা ড. নজরুল ইসলাম। জাপানে মেরিন সায়েন্সে পিএইচডি করে বাংলাদেশে ফিরে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। তার খামারে ফলিয়েছেন অতিকায় বড় জাতের পেঁপে। যার নাম জায়ান্ট পার্ল পেঁপে। যেটির একটিই ওজনে সাত থেকে আট কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
এই খামারে ফলন হওয়া পেঁপেটি কিন্তু কোন হাইব্রিড বা বিদেশি জাতের পেঁপে নয় বরং পুরাদস্তুর দেশী জাতের একটি পেঁপে। পেঁপে বাংলাদেশে কাঁচা ও পাকা – দু ভাবেই বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে আর পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। বেশ পুষ্টিকর এই ফলটি কাঁচা থাকা অবস্থায় সবুজ রংয়ের আর পাকলে হলুদ বর্ণ বা লালচে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
পরে দেশে ফিরে এসে যোগ দেন জাইকার একটি প্রকল্পে। করোনার সময় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কোটচাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। খামারের মধ্যে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। সেই পুকুর থেকে তোলা মাটিতে তিনি আবাদ করছেন জায়ান্ট পার্ল পেঁপের।
তিনি বলেন, এলাকারই একজন কৃষকের কাছ থেকে বীজটি পেয়েছিলাম আমি। তিনি যথাযথভাবে আবাদ করতে পারেননি বলে ফলন পাননি। আমি খামারের পুকুরের পাড়ের উর্বর মাটিতে আবাদ করলাম। বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে সাফল্য পেলাম।
চাষ পদ্ধতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত মাটির মান খুব ভালো হতে হবে আর জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পুকুর কাটা মাটিতে চাষ করার জন্য ফলন হয়েছে খুব ভালো। পেঁপে চাষ সহজ মনে হলেও আসলে কিন্তু ততটা সহজ ব্যাপার না। আমি কখনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। বরং জৈব সার ব্যবহার করেছি।
ভালো ফলনের জন্য দরকার বিশেষ কৌশল। এক একটি পেঁপে গাছে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ চার মন পর্যন্ত পেঁপে হতে পারে।
চারা কোথায় পাওয়া যাবে প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার কাছ থেকেই অনেকে এখন চারা বীজ নিচ্ছে। কিছুদিন আগে তিন হাজার বীজ করলাম। আশা করি এই ফলটি পেঁপের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে এটিকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে।
কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলীর মতে আকারের মতোই স্বাদের হওয়ায় এই পেঁপেটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। পাকা পেঁপে ফল হিসেবে বিশেষ প্রিয় গৃহবধূ ফারহানা ইসলামের। তার শিশু সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে চিকিৎসক পেঁপে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহাসীন আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ড. নজরুল ইসলামের খামার পরিদর্শন করে পেঁপেগুলো দেখেছেন। এটি সাইজে অনেক বড় ও খেতেও সুস্বাদু। কৃষকরা এটি আবাদ করলে ভালো লাভবান হবে কারণ ফলনও অনেক হয়। বাজারে থাকা অন্য পেঁপের মতো সবজি হিসেবেও যেমন খাওয়া যায় আবার পাকা ফল হিসেবেও বিক্রি করা যাবে। এলাকার কৃষকদের অনেকেই এখন ড. নজরুল ইসলামের কাছ থেকে চারা ও বীজ সংগ্রহ করছেন।