পেঁয়াজের দাম হাজার টাকা মণ চান চাষিরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজবাড়ীতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হলেও কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা। পাশাপাশি ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম থাকায় লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

চাষিদের দাবি স্টোরেজের ব্যবস্থা না থাকায় কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার মূল্য কমপক্ষে এক হাজার থেকে বারোশো টাকা করা হলে এবং এলসি করা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে তাদের খরচার টাকা উঠবে।

 

মসলা জাতীয় ফসল হিসেবে পেঁয়াজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় স্থানে রাজবাড়ীর অবস্থান। দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এ জেলায়। জেলার পাঁচ উপজেলায় কমবেশি পেঁয়াজের আবাদ হলেও পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়।

বর্তমানে হালি পেঁয়াজ ওঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজবাড়ীর চাষিরা। পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও পেঁয়াজ তোলার কাজ করছেন। মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে বাড়িতে নিয়ে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে কেউ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষণ করছে। আবার কেউ সংরক্ষণ করতে না পেরে বিক্রি করছেন।

চাষিরা জানান, এবার প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদে ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ, সার, শ্রমিক মুজরি দিয়ে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। লিজ নেওয়া জমি হলে বিঘায় খরচ বেড়ে যায় আরো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এবার বিঘায় ফলন হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ মণ। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকায়। ফলে তারা লোকসানে পড়ছেন।

 

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজবাড়ীতে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে মুড়ি কাটা ৫ হাজার ২১৫ হেক্টর, কদম (কালী) ১৯৫ হেক্টর ও হালি পেঁয়াজ ২৯ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ী সদরে ২ হাজার ৮০৫, বালিয়াকান্দিতে ১০ হাজার ১৬৫, পাংশায় ১০ হাজার ৩৮৮, কালুখালীতে ৯ হাজার ৩১৫ ও গোয়ালন্দে ২ হাজার ১৯২ হেক্টর।

চাষি আজিজুল ইসলাম বলেন, এবার তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে তাদের ফলন ভালো হয়নি। যেখানে প্রতি বিঘায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ হওয়ার কথা সেখানে এবার ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ হয়েছে।

বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার ৭শ থেকে ৮শ টাকা মণ। বাজার এমন থাকলে তাদের লোকসান হবে। ভবিষ্যতে কৃষি কাজ করতে পারবেন না। তাদের পেঁয়াজ স্টোরেজ করার মতো উপায় বা জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

গোলাপ সরদার নামে আরেক চাষি বলেন, কৃষি কাজ করে তাদের সংসার চলে। গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের ফলন হয়েছে অর্ধেক। বাজারে দাম পাচ্ছেন সর্বোচ্চ সাড়ে ৮শ টাকা মণ। পেঁয়াজ আমদানি হাওয়ায় তাদের পেঁয়াজের চাহিদা নেই, যার কারণে তারা দাম কম পাচ্ছেন না। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে এক হাজার থেকে বারোশো টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে তারা কিছুটা লাভবান হবেন।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, এ বছর রাজবাড়ীতে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের বাজার আপডাউন করছে। এখন দাম ৭ থেকে ৮শ টাকা মণ। তবে প্রতি মণ ১ হাজার টাকা হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

তিনি আরো বলেন, কোল্ডস্টোরেজ এ অঞ্চলে নেই। কোল্ডস্টোরেজ থাকলে কৃষকরা পেঁয়াজ মজুত করতে পারতেন এবং লাভবান হতেন। তবে বীজ বিপণন কেন্দ্র থেকে একটি কোল্ডস্টোরেজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে পেঁয়াজ রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। কিন্তু এ বছর রাজবাড়ীতে আবহাওয়াজনিত কারণে কেউ কেউ জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেও রোপণ করেছে। তাদের ক্ষেত্রে ফলন কিছুটা কম হবে। তবে সর্বোপরি পেঁয়াজের উৎপাদন গতবারের মতো এবারও প্রতি হেক্টর জমিতে ১২.৬ টন হবে বলে তিনি আশা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর