৮ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশা দুই বন্ধুর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০২১ সালের ১০ জুন কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আমির হোসেন অপুর বাবা বেলায়েত হোসেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে বিপাকে পড়েন অপু। সবে সৈকত ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। অল্প বয়সেই সংসারের ভার আসে কাঁধে। নানা চিন্তা ভর করে মনে। শেষে পরিশ্রম করে নিজের ও সংসারে সচ্ছলতা ফেরান অপু।

আমির হোসেন অপু নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৭ নং পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের মধ্য চরবাটা গ্রামের খোকন ব্যাপারির বাড়ির বাসিন্দা ও সৈকত ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অপর বন্ধু নুর আলম একই গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে ও সৈকত ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, তরমুজ খেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত আমির হোসেন অপু। চার একর জমিজুড়ে আবাদ হয়েছে তরমুজের। বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে যতদূর চোখ যায় যেন সবুজের সমারোহ। কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের আশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন অপু।

আমির হোসেন অপু বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ইউটিউবে ভিডিও দেখে তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। তরমুজ চাষে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় জেনে চার একর জায়গা বর্গা নিয়ে দুই বন্ধু তরমুজ চাষ শুরু করেছি। সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচসহ সবকিছু মিলিয়ে আমাদের প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি চার একর জমির তরমুজ বিক্রি করে ৮ লাখ টাকার মতো আয় করব।

আমির হোসেন আরও বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসার আমাকে চালাতে হয়। মা ঘরের হাঁস-মুরগি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন। সেই টাকার সঙ্গে নিজের জমানো টাকাসহ দুই বন্ধু মিলে তরমুজ চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো দাম পাব বলে মনে করি।

আরেক বন্ধু নুর আলম বলেন, আমাদের দুজনেরই পড়াশোনা আছে। ইউটিউব দেখে অনেক কিছু শিখেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি জমি চাষ করায় অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কারও কথায় কান দিইনি। এত কম খরচে বেশি লাভ আর কোনো ফসলে নেই। উপকূলীয় এলাকা হিসেবে তরমুজ ভালো ফলন হয়। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা পেলে সুবর্ণচরের কৃষকরা আরও ভালো করবেন।

 

একই এলাকার তরমুজচাষি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, উপকূলীয় এলাকা বলে এখানে তরমুজের ভালো ফলন হয়। কিন্তু সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কৃষি বিভাগের লোকজন জানেও না আমাদের এখানের তরমুজ চাষের কথা। তারা সহযোগিতা করলে আগামী দিনে আরও ভালো ফলন হবে।

আমির হোসেনের সহপাঠী খালিদ হাসান মামুন বলেন, পরিবারের অভাব দূর করতে আমির তরমুজ চাষ শুরু করেছে। সে পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী। কৃষিকাজে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছে। এমন বন্ধু পেয়ে আমরা গর্বিত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নুর-অপু আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের জন্য তরমুজ চাষ করেছে। তাদের দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমরা সব সময় উৎসাহ দিয়েছি। তারা শিক্ষিত হওয়ায় তাদের কর্মদক্ষতা অনেক দূর আসতে সহায়তা করেছে।

সুবর্ণচর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সুবর্ণচরে এ বছর ১ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে চাষ হয়েছে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর। যা তিন গুণের বেশি। জেলায় তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রার ৮০ ভাগই চাষ হচ্ছে সুবর্ণচরে। শিক্ষিত তরুণরা যদি কৃষিতে আসে, তাহলে কৃষি সমৃদ্ধ হবে। কৃষি সমৃদ্ধ হলে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ হবে। তরমুজের রোগবালাই, পোকামাকড় দমনে সব স্তরের কৃষি কর্মকর্তারা সোচ্চার রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, নোয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য তরমুজকে ঘিরে সারাক্ষণ চাষিদের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ। এ ছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজের বাম্পার ফলন অব্যাহত থাকবে। কৃষক তাদের এই ফসলে যাতে লাভ করে ঘরে তুলতে পারেন, সে জন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর