একেকটি বেগুন ২ কেজি, নাম দিয়েছেন লাউবেগুন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেগুন সাধারণত আড়াই’শ থেকে তিনশ গ্রামের হলেই যথেষ্ট। জাতভেদে আরো বড় কিছু জাত পাওয়া যায়। কিন্তু বেগুনের একেকটির ওজন ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হলে চমকে উঠাই স্বাভাবিক। লোকজন এই ভিন্ন জাতের বেগুনের নাম দিয়েছেন লাউবেগুন।

ভোলা সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট গ্রামের কৃষক মো. সেলিম (৩৫)। বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি কৃষিকাজ করছেন প্রায় ৮ বছর ধরে। তার ফসলের ক্ষেত এলাকার অন্যান্য কৃষকের চেয়ে বেশ ভালো। ফলন হয় বেশি। সফল কৃষক হিসেবেই পরিচিত সেলিম। এবার তার বেগুনক্ষেতে লাউয়ের মতো বড় বড় বেগুন ফলেছে।

বেগুনগুলো দেখতে লাউয়ের মতো হওয়ায় কৃষক সেলিমের গ্রামের লোকজন এটির নাম দিয়েছেন লাউবেগুন। আর এই বেগুন দেখতে প্রতিদিন তার গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে কৃষক ও স্থানীয়রা ভিড় জমাচ্ছেন।

জানা গেছে, এই কৃষক প্রতিবছর শীত মৌসুমে ৬৫ শতাংশ জমিতে দেশি বেগুন, টমেটো, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও সয়াবিন চাষ করেন। কিন্তু তেমন সফলতা অর্জন করতে পারছিলেন না তিনি। তবে এবছর বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।

কৃষক মো. সেলিম জানান, প্রতিবছর দেশি বেগুন চাষ করলেও লাভবান হতে পারছিলাম না। এবছর কৃষি বিভাগ থেকে আমাকে বারি-১২ জাতের বেগুনের বীজ ও সার দিয়েছে চাষ করার জন্য। আমার ৬৫ শতাংশ জমির মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে বারি-১২ জাতের বেগুন রোপণ করি। আর বাকি জমিতে টমেটো, ফুলকপি, পাতাকপি ও সয়াবিনের চাষ করি।

২০ শতাংশ জমিতে আমার ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৩ মাস ১০ দিনের মধ্যে বেগুনগুলো ১ কেজি আর কোনো কোনোটি দেড় কেজি আবার কোনোটি ২ কেজি ওজনের হয়। পরে ক্ষেত থেকে বেগুন তুলে পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য প্রথমদিন নিয়ে গেলে পাইকাররা দেখে অবাক হন। প্রথমদিন প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা দামে বিক্রি করেছি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এপর্যন্ত ১২ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। ক্ষেতে এখনও যে পরিমাণ বেগুন রয়েছে তাতে আরো ২০ হাজার টাকারও বেশি বিক্রি করতে পারবো। চাষ করার আগে বুঝতে পারিনি এতো লাভজনক এটি। আশা আছে আগামী বছর এক একর জমিতে এ বেগুন চাষ করবো।

ভোলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ হচ্ছে জেলায়। তবে এটা প্রথম এই নতুন জাত আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে ভোলার সাত উপজেলায় ২০০ জন কৃষককে আমরা বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ করিয়েছি। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি কৃষকরা প্রত্যেকেই সফল হয়েছেন। ভোলা সদর উপজেলায় ৫০ জন কৃষক রয়েছে  যারা বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ করেছেন।

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, যারা চাষ করছেন তারা সফলতা পেয়েছেন। তাদের দেখে নতুন করে অনেক কৃষক আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ করার জন্য। আগামীতে হয়ত কয়েক হাজার কৃষক বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর