সেন্টমার্টিনের পরিবেশ বিনষ্টকারী চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে অব্যাহত স্থাপনা নির্মাণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযানে চারটি আবাসিক রিসোর্টকে অবৈধ পাকা ভবন নির্মাণের দায়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে দ্বীপের কয়েকটি নির্মাণাধীন রিসোর্টের বিপুল পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রী। সেইসঙ্গে নির্মাণাধীন কয়েকটি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে নিজ খরচে স্থাপনা ভেঙে ফেলার জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, দ্বীপে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা উল্টো পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেছেন, খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরই দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে পাকা দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দ্বীপের পাকা ভবনের রিসোর্টগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে এমন ‘উল্টো অভিযোগের’ মুখে পড়েন অভিযান পরিচালনাকারীরা।

 

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হকের নেতৃত্বে দ্বীপে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলামসহ পরিবেশকর্মী ও পুলিশের অভিযানে ‘আটলান্টিক রিসোর্ট’কে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণের দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

রিসোর্টটির দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন এই জরিমানা করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, যে দ্বীপে পাকা ভবন করার দায়ে আমাদের লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সেই দ্বীপেই পরিবেশ অফিসটিও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা দু’তলা ভবন। পরিবেশ অধিদপ্তর পাকা ভবন করলে দূষণ হয় না কিন্তু আমরা করলে নাকি দূষণ হয়?

এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর সরকারের যথাযথ অনুমতি নিয়ে দ্বীপে পাকা ভবনের অফিস নির্মাণ করেছে। এটা সরকারি অফিস, কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নয়। আমরা দ্বীপে এরকম স্থাপনা করতে কাউকে নিষেধ করছি না। কেবল বলছি, সরকারের নিয়মানুযায়ী অনুমতি নিয়ে করুন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার অফিসের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, দ্বীপে কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় থাকার জন্য অফিসে অবশ্য রেস্টহাউজ হিসেবে কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম বৃহস্পতিবারের অভিযানের সম্পর্কে বলেন, দ্বীপে সাগরের পানি ছোয়া সৈকতে নির্মাণাধীন রয়েছে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশীদের মালিকানাধীন ‘ড্রিমার্স প্যারাডাইস’ নামে রিসোর্টটি। ভ্রাম্যমাণ আদালত রিসোর্টটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে নিজেদের খরচে আগামী সাতদিনের মধ্যে স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে। অনুরূপ ‘প্রিন্স হ্যাভেন’কে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে এক লাখ টাকা ও অবৈধ স্থাপনার দায়ে ‘ফ্রেন্ডস রিসোর্ট’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এগুলোসহ আরও কয়েকটি পাকা স্থাপনাও সাতদিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থাপনা পরিবেশ কর্মীরা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দিয়েছেন।

 

অপরদিকে, সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ আশপাশের এক হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করার বিষয়টির গুরুত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরে করণীয় নির্ধারণের জন্য এক মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। আগামী রোববার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে এ সভা ডাকা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ এ বিষয়ে বলেন, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপটি যে কোনোভাবে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ কারণে দ্বীপ ও দ্বীপ সন্নিহিত সাগরের পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকেই সচেতন করা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর