চারঘাট থানার ওসির বিরুদ্ধে হত্যা মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শিলন আলী হত্যা মামলার এজাহার পরিবর্তন করে ১৫ জন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের।

মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত শিলনের বাবা ও মামলার বাদী রিয়াজ আলী বলেন, ‘তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিদের আড়াল করতে ওসি জাহাঙ্গীর আলম মামলার এজাহার পরিবর্তন করেছেন। তাদের অভিযোগে হত্যায় অংশ নেওয়া ২০ জনের নাম ছিল। কিন্তু পাঁচজনকে আসামি করে আমার কাছে মামলায় সই নিতে বাধ্য করেন ওসি। আমাদের মামলা না নেওয়ার ভয় দেখান।’

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর আমাকে বাড়ি থেকে জোর করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ২০ জনকে আসামি করে হত্যার অভিযোগ করি। কিন্তু যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওসি চান ওই পাঁচজনকেই আসামি করে মামলা হোক। ওসির করা এজাহারে গ্রেফতার ব্যক্তিদের আসামি করে সেখানে জোর করে আমার সই নেওয়া হয়।’

এই পাঁচজনের বাইরে কাউকে আসামি করা যাবে না মর্মে ওসি জাহাঙ্গীর আলম মুচলেকায় সই নিয়েছেন বলেও সংসাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তার কথার বাইরে কিছু করলে ছোট ছেলেকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন ওসি।

মামলার বাদী রিয়াজ আলীর অভিযোগ, মামলায় যাকে এক নম্বর আসামি করা হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে নিচে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের নাম মামলার এজাহারে নেই। এজাহারের কপি চাইলেও ওসি দেননি। হত্যাকারী সম্রাট রক্তমাখা কাপড় পরে থাকলেও পুলিশ সেই কাপড় খুলে ভালো কাপড় পরিয়ে বাসা থেকে বের করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত শিলনের স্ত্রী আলেয়া বেগম, ছোট ভাই ইবরাহিম আলী রতন ও নিহতের দুই সন্তান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, ‘যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু শুধু সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে লাভ আছে? এটা করলে তো নিহত ব্যক্তির পরিবার ব্যবসা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন জড়িত কারও নাম বেরিয়ে এলে তাদেরও ধরা হবে।’ রিয়াজ উদ্দিনের কাছ থেকে সাদা কাগজে কোনো সই নেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন ওসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, এজাহার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। একটি পক্ষ পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এর আগে রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে চারঘাটের জিকরা গ্রামে মাদক নিয়ে বিরোধের জের ধরে শিলন মিয়াকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে রাতে অভিযান চালিয়ে সম্রাটসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন-সম্রাট, জুয়েল রানা, হাসান আলী, জনি হোসেন ও রাসেল মিয়া। তাদের কাছ থেকে এসময় হত্যায় ব্যবহৃত চাইনিজ কুড়াল ও হাঁসুয়া উদ্ধার করেন র্যাব সদস্যরা।

এর আগে ২০১৯ সালে একটি হত্যা মামলার পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। এরপর তিনি বরখাস্ত হন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি আদালতে আত্মসমর্পন করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর