হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনি শুরু হয়ে মারা যাচ্ছে গরু

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাটারি কারখানার বর্জ্যের বিষক্রিয়ার দুই গ্রামে ২০টি গরু মারা গেছে। আরও গরু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে ধারণা করছে পশু চিকিৎসকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনি শুরু হয়ে মারা যাচ্ছে গরুগুলো। এ কারণে গরু নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর ও বেতদিঘি ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামে এতগুলো গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে কারখানাটি ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বাসুদেবপুর পাকড়ডাঙা এলাকায় ফুলবাড়ী-মাদিলা সড়কের পাশে আবাদি জমিতে একটি ব্যাটারি কারখানা করা হয়। কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকার ঘাস ও খড় বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এসব ঘাস ও খড় খেয়ে গরুগুলোর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে। পরে পেট ফেঁপে কাঁপুনি শুরু হচ্ছে। এর এক-দুদিনের মধ্যে গরুগুলো মারা যাচ্ছে।

দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের ফয়জুর রহমান মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার তার গাই-বাছুরসহ দুটি গরু মারা গেছে। এর আগে ৩০ নভেম্বর তার আরও তিনটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।

একইভাবে গত ২৭ নভেম্বর একই গ্রামের বাদশা মিয়ার দুটি, সোহেল রানার একটি ও হাফিজের একটিসহ ওই গ্রামে গত সাতদিনে প্রায় ১০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।

মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই গ্রামের জাকিরের একটি, শফিকুলের একটি, বেলালের একটি, মুক্তারের দুটি, মজিবরের দুটিসহ ওই গ্রামের ১০টি গরু মারা গেছে। এনিয়ে দুই গ্রামের প্রায় ২০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এভাবে একের পর এক গবাদিপশুর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রামের সাধারণ কৃষকরা।

গ্রামবাসীরা বলছেন, মাঠের মধ্যে একটি অস্থায়ী ব্যাটারি কারখানা তৈরি করার পর থেকে ওই মাঠে চলাচল করা গরুগুলোর এই সম্যসা দেখা দিচ্ছে। ব্যাটারিতে ব্যবহৃত সিসার বিষক্রিয়ায় গরুগুলোর মৃত্যু হতে পারে ধারণা করছেন পশুচিকিৎসকরা। বর্তমানে ওই এলাকার অনেক গরু এখনও অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ আতঙ্কে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ আবার জবাই করে ফেলছেন।

জানতে চাইলে কারখানার জমির মালিক প্রভাষক দুলাল বলেন, কারখানার জন্য জমিটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তবে বেশকিছু দিন আগে এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গরু মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অল্প কয়েকেটি গরু মারা গেছে। কারখানার কারণে তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। বিভিন্ন রোগের কারণেও গরুগুলো মারা যেতে পারে। বিষয়টি তিনি নিজেই খতিয়ে দেখবেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে যে গরুগুলো ঘাস অথবা খড় খেয়েছে, বিষক্রিয়ার কারণেই সেগুলো মারা গেছে। জয়পুরহাট থেকে আমাদের একটি বিশেষ টিম আসছেন। তারা এসে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের একটি তদন্ত টিম সেখানে যাবেন। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর