প্রায়ই পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়তেন সিয়াম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পড়াশোনা করতে করতে প্রায়ই পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি। বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন খুবই কম। যেটুকু আড্ডা দিতেন, তাও পড়াশোনা কেন্দ্রিক। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি কোন আসক্তি নেই তার।

জানালেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাতে প্রথম স্থান অধিকারী বগুড়ার মেধাবী শিক্ষার্থী মেফতাউল আলম সিয়াম।

সিয়াম জানান, এরকম ফলাফল পেতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। পড়াশোনা করতে করতে টেবিলে ঘুমিয়ে যাওয়া  নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিলো তার।

তিনি বলেন, বাবা-মা পড়াশোনার বিষয়ে সব সময়ই আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমাকে সমর্থন করেছেন। আমি কোন বিষয়ে পড়াশোনা করবো, এ নিয়ে কখনও তারা সিদ্ধান্ত দিতে আসেননি। আমার সিদ্ধান্তকেই সব সময় মেনে নিয়েছেন। তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। যার কারণে আমার এই ফল এসেছে। এছাড়া বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ছিলো খুব কম। যতটুকু আড্ডা দিতাম সেটা ছিলো পড়াশোনা কেন্দ্রিক। ভালো রেজাল্ট করতে এটাও একটা ভূমিকা রেখেছে।

সিয়াম বলেন, বাবা-মা চাচ্ছিলেন আমি চিকিৎসক হই। আমারও প্রথম দিকে চিকিৎসক হওয়ারই পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু আমার কাছে ফিজিক্সের বিষয়গুলো ভালো লেগে যায়। যে কারণে এখন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে গবেষক হতে চাই।

এর আগে সিয়াম বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াকালীন সময়ে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ লাভ করেন। অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ ও জেনারেল বৃত্তি পান। এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এরপর সিয়াম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। সেখানেও তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন।

মেফতাউল আলম সিয়াম বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ গ্রামের খোরশেদ আলম ও মুনজিলা আলম দম্পতির প্রথম সন্তান। তার বাবা বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিন ছেলের মধ্যে সিয়াম সবার বড়। তার অপর দুই ভাই মোবাশ্বির আলম সানি ও মুনজির আলম সামি বগুড়া জিলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

সিয়ামের বাবা খোরশেদ আলম জানান, ছেলের এমন সাফল্যে তিনি অনেক খুশি।

সিয়ামের মা মুনজিলা আলম বলেন, ছোট বেলা থেকেই সিয়াম পড়াশোনায় মনোযোগী। তাকে কখনও পড়ার কথা বলতে হতো না। এছাড়া পড়াশোনায় যেন অমনোযোগী না হয় এজন্য ভাল রেজাল্ট করলে তাকে গিফট করতাম। প্লে থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত সব সময় মূল পাঠ্যবই পড়েছে সিয়াম। কোন সময় গাইড বই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়নি। এছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা বা বাজে কোন সঙ্গ নেই সিয়ামের। এসএসসি পাশের পর সিয়ামকে একটি বাটন ফোন কিনে দিই। যে কারণে তার মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে তার কোন আসক্তি ছিলো না। তবে করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করার জন্য তাকে একটি অ্যান্ড্রয়েট ফোন কিনে দেওয়া হয়। সিয়াম এখনও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরেই আছে। আমার ছেলের মন মানসিকতা অনেক ভালো। এজন্য তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম ডাক্তার হবে। মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেবে। কিন্তু সিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে চায়। বিষয়টি জানার পর তার সাথে একমত পোষণ করি। আমরা তার উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেইনি, দিতেও চাই না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর