একজনের নামে ২০ বছর ধরে কারারক্ষী আরেকজন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন খানের পরিচয়ে ২০ বছর ধরে কারারক্ষী পদে সিলেট কারাগারে চাকরি করছেন কুমিল্লার এক ব্যক্তি। সম্প্রতি এ জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় তদন্তে নেমেছে কারা কর্তৃপক্ষ

হবিগঞ্জ কারাগার ও ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে শাহজাহানপুর গ্রামের মো. নুর উদ্দিন খানের ছেলে মঈন উদ্দিন খান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কারারক্ষী পদে চাকরি করার জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে সশরীরে হাজির হয়ে শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাকে চাকরির যোগদানপত্র পাঠানো হয়নি।

যোগদানপত্র না পাওয়ায় মঈন উদ্দিন খান চাকরির আশা না করে মনতলা বাজারে ফার্মেসির ব্যবসা শুরু করেন। গত ১২ আগস্ট কারারক্ষী মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন বলে শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ওই চিঠি পেয়ে একটি প্রত্যায়নপত্রের মাধ্যমে মঈন উদ্দিন খানকে অবগত করেন।

ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্রটি পেয়ে মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী পদে তিনি চাকরি করেন না এবং তার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কে বা কারা চাকরি করছেন বলে জানান। এ বিষয়টি অবগত করার জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন তিনি।

এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ১৬ নভেম্বর উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বরাবর একটি  প্রত্যায়নও প্রেরণ করেন। প্রত্যায়নপত্রে তিনি উল্লেখ করেন- মঈন উদ্দিন খান একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। তিনি কারারক্ষী হিসেবে চাকরি করেন না। পরবর্তীতে সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক এ প্রত্যয়ন পেয়ে মঈন উদ্দিন খানকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঈন উদ্দিন খান সিলেটের উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেনের কাছে গিয়ে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী পদে পরীক্ষা দিয়েছিলেন বলে জানান। এ সময় তিনি চাকরিতে যোগদানের জন্য লিখিত আবেদন করেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হবিগঞ্জ কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী জেল সুপারের পক্ষে জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা কাগজপত্রসহ মঈন উদ্দিন খানকে এবং তার নামে চাকরি করা ব্যক্তিকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

নির্দেশ অনুযায়ী শাহজাহানপুরের মো. মঈন উদ্দিন খান এলাকার সাবেক চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শনিবার হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির হন। তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা দিনভর মঈন উদ্দিন খান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু মঈন উদ্দিন খান নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কুমিল্লার যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তিনি হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির হননি।

এ ব্যাপারে মঈন উদ্দিন খান জানান, সরকারি চাকরি করার অনেক আশা নিয়ে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আমার ঠিকানায় অধিকতর তদন্ত করা হয়। ভেবেছিলাম আমি চাকরি পাব; কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমার যোগদানপত্র না আসায় আমি চাকরিতে যোগদান করতে পারিনি। যখন আমার কাছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চিঠি আসে তখন আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হই।

তিনি বলেন, জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আমার ঠিকানা ব্যবহার করে যে মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন তিনি আমার ফার্মেসিতে এসে আমাকে ২ লাখ টাকা দিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি।

এ ব্যাপারে জেলার মো. জয়নাল আবেদীন ভূঞা জানান, তদন্তকালে অভিযুক্ত কারারক্ষী মঈন উদ্দিন খান ও শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান হাজির হওয়ার কথা থাকলেও যে ব্যক্তি মঈন উদ্দিন খান নামে চাকরি করছেন তিনি হাজির হননি। কিন্তু শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান তার কাগজপত্র নিয়ে কারাগারে হাজির হয়েছেন। আমরা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এলাকার কয়েকজন মুরব্বিয়ানের জবানবন্দি নিয়েছি। এ বিষয়টি আরও তদন্তের স্বার্থে আমি সরেজমিন শাহজাহানপুর এলাকায় যাব। পরবর্তীতে আমার তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করব। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, মঈন উদ্দিন খান নামে যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তিনি হাজির না হওয়ায় তার প্রকৃত নাম, বাবার নাম, ঠিকানা সম্পর্কে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর