জমকালো আয়োজনে রোকসানার বিয়ে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরের সাহেবগঞ্জ এলাকার অসহায় এক অন্ধ বাবার মেয়ে রোকসানা বেগম। পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার সুযোগ হয়নি তার। ছোটবেলা থেকে দুই ভাই-বোনের খাবার ও ভরণ-পোষণ জোগাতে মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন মা মনোয়ারা বেগম। অন্ধ বাবা রফিকুল ইসলামের সংসারে রোকসানা ও তার বড় ভাই নুর হোসেন যেন এক প্রকার বোঝা ছিল। নুর হোসেন স্কুল জীবন শেষ না করেই সংসারের হাল ধরতে নরসুন্দর পেশা বেঁচে নেন। কিন্তু নিজের ছোট বোনের বিয়ে নিয়ে পুরো পরিবারের মাথায় যেন ছিল চিন্তার ভাঁজ। এ সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে রোকসানার বিয়ের দায়িত্ব নেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবতার পথিক’।

রোববার (১৪ নভেম্বর) রাতে নগরীর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে ধুমধামে বিয়ের আয়োজন করে ‘মানবতার পথিক’। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে মোর্শেদুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকসানার।

কান্না জড়িত কণ্ঠে কনে রোকসানার বড় ভাই নুর হোসেন বলেন, আমাদের একমাত্র বোনের বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছিলাম। তাকে বিয়ে দিতে এক সময় সুদের ওপর টাকা নেওয়ার চিন্তা করেছিলাম। পরে জানতে পারি মানবতার পথিক সংগঠনের কথা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমার বোনটার বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। আমি দোয়া করি আল্লাহ ছেলেগুলোর ভালো করে।

কনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, মেয়ের বিয়ে নিয়ে এতটাই সমস্যায় পড়েছিলাম যে খাওয়া-দাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম। কখনও কল্পনাও করতে পারিনি এত বড় আয়োজনে আমার অভাগা মেয়েটির বিয়ে হবে। এখন শুধু সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমার মেয়ে ও তার জামাই সুখে-শান্তিতে থাকে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজ সর্দার বলেন, ২০ দিন আগে রোকসানার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর আমরা গিয়ে পরিবারটির খোঁজখবর নেই এবং পরিবারের সিদ্ধান্তে পাত্র ঠিক করা হলে আমরা তাদের ধুমধাম করে বিয়ে দেই। এর আগেও আমরা নগরীর বাহারকাছনা এলাকার বিলকিস নামে এক অসহায় মেয়ে বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সব সময় চেষ্টা করি অসহায়, দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা মহামারির সময়েও ত্রাণ পৌঁছে দিয়ে দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের এ উদ্যোগগুলো অব্যাহত থাকবে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে কথা হয় নগরীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ্ আল হারুন বাপ্পি সঙ্গে। তিনি বলেন, ছাত্ররা বিষয়টি আমাকে জানানোর পর তাদের সঙ্গে যুক্ত হই। আমার পক্ষ থেকে সংগঠনে সহযোগিতা করি। যাতে তারা এ অসহায় মেয়েটির বিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর