মসিকের উন্নয়নে বড় বাধা জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। সাড়ে ৮ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ৯০ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মসিকের উন্নয়নে পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের পৌর সুপার মার্কেট এলাকায় আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর ২০ তলা বিশিষ্ট নগর ভবন নির্মাণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নগরীর বাদেকল্পা এলাকায় ২৫ একর জমিতে চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক নির্মাণ এবং পাটগুদাম রেলব্রিজ থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ পর্যন্ত ১০ একর জমিতে আলাদা শিশু পার্ক নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সড়ক বাতি স্থাপন, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, শ্মশানঘাট উন্নয়ন, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে চায়না মোড়ের সাত একর জমিতে বাসটার্মিনাল স্থানান্তর এবং নগরীর শিকারীকান্দার আমলীতলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।

এছাড়া পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে খাকডহরে ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, চুরখাই, চরজেলখানা, শম্ভুগঞ্জ চায়না মোড়ের ময়লাকান্দা ও খাকডহর বাইপাস এলাকায় বর্জ্যের ডাম্পিং স্টেশন, এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ, ব্রহ্মপুত্র নদের বেড়িবাঁধ বরাবর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে খাকডহর ঘুন্টি পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ, নগরীর মাঝখান থেকে রেললাইন সরিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দীঘারকান্দা, আকুয়া বাদেকল্পা হয়ে খাকডহর ঘুন্টির সঙ্গে সংযোগ, নগরীর চরপাড়া মোড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, গাঙিনাপাড় ট্রাফিক মোড় ও কাচারি জিরো পয়েন্ট মোড়ে এসকেলেটরসহ ওভারব্রিজ নির্মাণ, চরপাড়া থেকে মালগুদাম হয়ে থানারঘাট এবং চরপাড়া থেকে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ময়মনসিংহ নগরীর সৃষ্টির ইতিহাস

১৭৮৭ সালের পহেলা মে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮১১ সালে ময়মনসিংহ শহর হিসাবে পদমর্যাদা লাভ করে। শহরের জন্য জায়গা দেন মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ রঘুনন্দন আচার্য। ১৮৬৯ সালের পহেলা এপ্রিল কৃষ্ণপুর, চরপাড়া, ইটাখলা ও কাশর এই ৪টি এলাকা নিয়ে নাসিরাবাদ পৌরসভা স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন করে এর নাম হয় ময়মনসিংহ মিউনিসিপালিটি।

 

শুরুতে এর লোকসংখ্যা ছিল ৮৫০০ জন। ১৯০১ সালে এই লোকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৬৬৮ জন। ১৯৮৩ সালে ময়মনসিংহ পৌরসভার লোকসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৮৬৩ জন। বর্তমানে এই জনসংখ্যা সাড়ে আট লাখ।

শহরের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন একজন ইংরেজ, তার নাম ছিল এম. স্ট্রাক। প্রথম হিন্দু ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রী চন্দ্রকান্ত ঘোষ, প্রথম মুসলিম ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন খান সাহেব আলী।

শুরুতে ময়মনসিংহ পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে রাস্তা ছিল মাত্র ২৫ মাইল। তৎকালীন কালেক্টর মি. গ্রস জেলখানার কয়েদীদের দিয়ে শহরের মধ্যভাগ ও ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় বরাবর দুইটি প্রধান সড়ক তৈরি করেন। রাস্তাঘাট ও ময়লা পরিষ্কারের জন্য সর্বপ্রথম ১৮৭০ সালে ভারতের সীমান্ত প্রদেশ থেকে ৬ জন ও পরে ১৮৭৬ এলাহাবাদ থেকে আরও ১৬ জন সুইপার আনা হয়। ১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিন বাতি জ্বালানো হয়। ১৯৩৫ সালে জমিদার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী নিজ প্রয়োজনে ডিসি পাওয়ার হাউস চালু করেন। মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী শহরবাসীর সুপেয় পানির জন্য স্ত্রীর নামে চালু করেন রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস।

প্রথম শ্রেণির ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। দুই দশমিক ১৫ বর্গমাইলের ময়মনসিংহ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়ে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ বর্গ কিলোমিটার। ওয়ার্ড সংখ্যা ২১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩টি। আর লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ো আট লক্ষাধিক। ২৫ মাইলের রাস্তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার।

জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পরিকল্পনা

এক সময় ময়মনসিংহ শহর নদের এক পাশে থাকলেও বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদ এটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ময়মনসিংহ নগরী উত্তর পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে ঢালু। ফলে বর্ষায় বৃষ্টির পানি ব্রহ্মপুত্র নদে না গড়িয়ে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। এতে পানি সরে যেতে সময় লাগায় নগরীতে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

এছাড়াও নগরীর রেললাইনের দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের চরপাড়া, নয়াপাড়া, মাসকান্দা, ধোপাখলা, আরকে মিশন রোড, আকুয়া, নওমহল, কাচিঝুলি, কলেজ রোড, গুলকিবাড়ি, জিলাস্কুল, সানকিপাড়া, গোহাইলকান্দি ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় এখনও রয়ে গেছে জলাবদ্ধতার সমস্যা।

নতুন বাজার-গাঙিনাপাড়-স্টেশন রোডসহ আশপাশের বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় যেভাবে আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ স্থাপন ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করে জলাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে নগরীর দক্ষিণ পশ্চিমাংশের আবাসিক এলাকাতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানে দাবি উঠেছে।

একইভাবে কলেজ রোড, হামিদ উদ্দিন রোডে আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ বসিয়ে কাচিঝুলির সঙ্গে সংযোগ করে কাটাখালি হয়ে পানি ফেলা হবে নদীতে। জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল থেকে ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ হয়েছে। কাঠগোলা ও কাশর এলাকার জলবদ্ধতা দূরীকরণে আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ বসিয়ে জেলখানা গেট হয়ে পানি ফেলা হবে ব্রহ্মপুত্র নদে।

এ বিষয়ে জেলা জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডেভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে সিটি মেয়র নানামুখী উদ্যোগ নিলেও এখনও রয়েছে হাজারো সমস্যা। অপ্রশস্ত বেহাল দশার রাস্তাঘাট, ময়লা আবর্জনার বর্জ্য, যানজটের অসহনীয় যন্ত্রণা ও জলাবদ্ধতাসহ ফুটপাথ-সড়ক জবরদখলের মতো সমস্যা নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে। সম্প্রসারিত নতুন ১২টি ওয়ার্ডে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। পরিকল্পনা করে দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানান এই নাগরিক নেতা।

এ বিষয়ে মসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিয়া জানান, নগরীর সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৫শ ৭৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। নগরীর সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন ১৩ প্যাকেজ টেন্ডার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬টির ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ৭টি টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এই সময়ে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

মসিক মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, পুরো নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে মেগা প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরীতে জলাবদ্ধতার কোনো সমস্যা থাকবে না বলে দাবি মেয়রের।

সড়ক বাতিতে আলোকিত হচ্ছে মসিক

মসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জিল্লুর রহমান বলেন, নগরীর ১৮২ কিলোমিটার সড়কে বসছে এলইডি বাতি। ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে লাগানো হচ্ছে পোলসহ ৬ হাজার ৬৬৭টি বাতি।

মসিক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের আওতায় নগরের খাগডহর ঘুন্টি এলাকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট পর্যন্ত পোলসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন।

পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মসিকের প্রকৌশল বিভাগ।

এ বিষয়ে মেয়র টিটু বলেন, নগরবাসীর জন্য নিরাপদ ময়মনসিংহ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা ব্যক্ত করেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় সেই কাজ আমরা হাতে নিতে পেরেছি। আশা করছি অচিরেই নগরবাসীকে একটি আলোকিত নগরী উপহার দিতে পারব।

নগরীর বিনোদন পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ

নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। সিটি কর্পোরেশন মোড়ে ৫২ থেকে ৭১ স্মৃতি অম্লান, পাটগুদাম র্যালি মোড়ে বিজয় একাত্তর, জিলা স্কুল মোড়ে বর্ণমালা, ফুলবাড়িয়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মোড়ে শিক্ষা শেকড়, কাচারি মসজিদ মোড়ে আলোর দিশারি, চক বাজার বড় মসজিদ মোড়ে ইকরা, টাউনহল প্রাঙ্গণে ভাষা সৈনিক শামছুল হক মঞ্চ, টাউনহল মোড়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার, চরপাড়া মোড়ে টাইম স্কয়ার, কাচিঝুলী মোড়ে আলোক বর্তিকা, মহারাজা রোডে তিন সত্য, মহিলা ডিগ্রী কলেজ মোড়ে আলোকিত বাংলা, সার্কিট হাউস পার্কে ক্রীড়াঙ্গন, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে বঙ্গবন্ধু চত্বর, গাঙিনাপাড় ট্রাফিক মোড়ে শাপলা চত্বর ও নতুন বাজার মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা চত্বর।

এসব স্থাপত্যশৈলীর বাইরে নগরীর পুরনো ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ছায়াশীতল জয়নুল উদ্যানের ভেতর শিশু কিশোরদের বিনোদনে করা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, ট্রেন জার্নি, ম্যাজিক বোট, নাগরদোলাসহ বিনোদনের নানার আয়োজন।

 

নগরীর জয়নুল উদ্যানকেও সাজানো হয়েছে নতুন করে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনসহ বাংলা নববর্ষ এবং বিশেষ দিনগুলোতে হাজারো মানুষের ঢল নামছে এই উদ্যানে।

সম্প্রসারিত ১২টি ওয়ার্ডে কর্মপরিকল্পনা

২০১৮ সালের অক্টোবরে ময়মনসিংহ সিটি ঘোষণার সময় পুরনো ২১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে সিটি সম্প্রসারণ করে আরও নতুন ১২টি ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে। তবে এসব ওয়ার্ডে নাগরিক কোনো সুবিধা এসময়ে গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো, সড়ক বাতির মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা, ময়লা আবর্জনার বর্জ্য অপসারণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই নয়া ১২টি ওয়ার্ডে।

অথচ সিটি ঘোষণার পর থেকে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে সিটির কর যুক্ত হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর দাবি উঠেছে।

বর্জ্য ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

নগরীতে প্রতিদিন ৩৮০ টন ময়লা আবর্জনার বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু অপসারণ করা হচ্ছে মাত্র ৯০ টন বর্জ্য। বাড়তি বর্জ্য অপসারণসহ পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সিটি মেয়র পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন।

দিনের বদলে রাতের বেলায় ময়লা আবর্জনা অপসারণের কাজ চলছে এখন। তবে সমস্যা হচ্ছে ময়লাবাহী যানবাহনের সঙ্কট। ফলে নগরীর প্রধান সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকাসমূহ কিছুটা পরিচ্ছন্ন দেখা গেলেও অলিগলির চেহারা এখনও আগের মতো।

তবে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছেন সিটি মেয়র মসিকের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান।

মসিক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, চিরচেনা যানজটের নগরী বলে খ্যাত ময়মনসিংহের ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নেও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

নগরীতে হারবারের আদলে স্টিলের আর্চ ব্রিজ

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারের আদলে ময়মনসিংহে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ ব্রিজ। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত দেশের প্রথম স্টিল আর্চ ব্রিজটিতে থাকবে না কোনো পিলার। নদের দুই পাশে থাকবে দুটি পিআর। দুটি পিআরের ওপর বসবে ১৮০ মিটারের একমাত্র স্প্যানটি। এজন্য এ ব্রিজটি হবে দেশের প্রথম দর্শনীয় মডেল ব্রিজ।

এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ নামে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। প্রকল্পে চীনের এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ হিসেবে দেবে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

এছাড়া নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে এবং শম্ভুগঞ্জ সেতুর উপর যান চলাচলের চাপ কমাতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এমন দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মাণের খবরে খুশি স্থানীয়রাও।

সূত্র জানায়, ৩২০ মিটার ধনুক আকৃতির এই স্টিল আর্চ ব্রিজ সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণে ব্যয় হবে ৪০৭ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। চার লেনের সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা।

 

এছাড়া এই প্রকল্পের অধীনে একটি টোলপ্লাজা, একটি ৫৫১ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাস সড়ক, ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি রেলওয়ে ওভারপাস ও সেতুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেতু এবং সংযোগ সড়কটি হবে চার লেনের। সেতু নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে বর্তমানে নির্মিত সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩ হাজার ২শ যানবাহন চলাচল করে।

সেতু নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়েছে ৪ বছর। সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে ময়মনসিংহের সাথে শেরপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলার যোগাযোগে সুবিধা বাড়বে এবং রাজধানীর সঙ্গে নাকুগাঁও এবং হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।

সিটির উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে যা বলেন মেয়র

মেয়র ইকরামুল হক টিটু  বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি এলাকায় অভাবনীয় যে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ সিটির উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে ময়মনসিংহ সিটি মেয়র নানা শ্রেণি পেশার নাগরিকদের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছেন। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ময়লা আবর্জনার বর্জ্য অপসারণ, যানজটমুক্ত পরিবেশবান্ধব গ্রিন সিটি গড়তে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করে সকল সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সিটি মেয়র।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর