রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৯১ স্কুলে পাঠদানে শঙ্কা

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে বন্যাকবলিত ১৯১টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় আজ থেকে বিদ্যালয় খুলছে। দীর্ঘ দেড় বছর পর প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে আবার পা পড়বে শিক্ষার্থীদের। তবে কয়েক দফা বন্যায় রংপুর বিভাগের চলাঞ্চলের ঐ সব ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক স্তরের এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীর পাঠদান নিশ্চিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, পাঠদান নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষ পাঠদান উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরাঞ্চলে এখনো বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠ ও মাঠের বাইরে পানি জমে আছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও কর্দমাক্ত হয়ে আছে। কোথাও কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যালয়ের আসবাব থেকে অবকাঠামো।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এ বছর রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ১০২টি, কুড়িগ্রামে ৭৩টি, নীলফামারীতে ১০টি, লালমনিরহাটে ৫টি এবং রংপুরে ১টি রয়েছে। এছাড়া গদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরো চারটি বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের মাঠে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় অভিভাবকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব বিদ্যালয় পরিদর্শনও করেছেন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে, নয়তো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লালমনিরহাট সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার পাঁচটি বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, এবারের বন্যায় জলঢাকা, ডিমলা, ডোমার, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৪টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০টির অবস্থা কিছুটা নাজুক। তবে সরকারের নানা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি থাকায় আজ থেকে পাঠদান করা সম্ভব হবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী বলেন, বন্যাকবলিত গাইবান্ধায় ক্ষতির তালিকায় থাকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ১০২টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছিল, তা নেমে গেছে। এখন সরকারি নির্দেশনা মেনে ধুয়ে-মুছে সবকিছু পরিষ্কার করে পাঠদানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বাইরে রাখলে সরকারের এই উদ্যোগ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুজাহিদুল ইসলাম গতকাল জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে। বিদ্যালয় খুলতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় অভিভাবকেরাও বেশ আগ্রহী। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় এই কর্মকর্তা জানান, এ অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের উপযোগী করা হয়েছে। যে কয়টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, সেগুলো পাশের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আপাতত চালু হবে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মিললে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর