বাড়তে পারে পানি, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মা-যমুনাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদনদীর পানি বাড়ছে। ছয় নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত নদী-তীরবর্তী নিচু এলাকাগুলোর মানুষ।

বন্যায় গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। এসব এলাকায় গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। অন্যদিকে ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী তিন থেকে সাতদিন পানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে দেশের আরো কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ইতিমধ্যে পদ্মা নদীর নিম্নাঞ্চলে, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানিকগঞ্জেও কিছুটা বন্যা পরিস্থিতি রয়েছে। তিনি বলেন, আবার যমুনা নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা হয়তো আরো তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীতে যে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আগামী এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনাসহ সবগুলো নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির সবচেয়ে অবনতি হয়েছে। বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করায় নদী তীরবর্তী সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর, ভূঞাপুর, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার আমন ধান ও সবজি খেতসহ অন্যান্য ফসলের মাঠ।

দুই দিন স্থিতিশীল থাকার পর বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সঙ্গে বাড়ছে জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীর পানিও। ফলে ক্রমেই জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। যমুনা নদীর চরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ নদী-তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি, ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে পাঁচ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। যমুনা,ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নিম্নাঞ্চল। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে বুধবার রাতে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ঐ উপজেলার ফেনী-পরশুরাম সড়কটিও পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ওই সড়কে সকাল থেকে ছোট যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বিকালে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৩ থেকে কমে ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৮ থেকে বেড়ে ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যায়। ভাগ্যকূল পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার নিচে চলে গেছে।

এদিকে যমুনা নদীর মথুরা পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার নিচে নেমেছে। একই নদীর আরিচা পয়েন্টে পানি পাঁচ থেকে কমে এখন এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ী পয়েন্টে পানি ২০ থেকে বেড়ে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গড়াই নদীর কামারখালী পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার নিচে নেমে গেছে। ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ১৬ থেকে বেড়ে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা নদীর লরেরগড় পয়েন্টে ৭, মুহুরি নদীর পরশুরাম পয়েন্টে পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এছাড়া মেঘনার চাঁদপুর পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ১৯ থেকে কমে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর