কাজিপুরে আমন ধানে স্বপ্ন বুনছে অর্ধলক্ষ কৃষক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনুকূল আবহাওয়া, সময়োপযোগী বৃষ্টি, জলাবব্ধতার অবসান এবং কৃষি অফিসের নিয়মিত তদারকির কারণে যমুনা শিকস্তি কাজিপুরের কৃষকরা আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার অর্ধলক্ষ কৃষক এবার পুরো আগস্ট মাস জুড়ে আমন ধানের চারা রোপন করছেন। এতে করে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে বলে জানিয়েছে কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিস।

যমুনার নিরন্তর ভাঙন আর বন্যার কারণে প্রতি বছরই আমন আবাদে কৃষক পুরোপুরি সফলতা পায় না। অনেক বছর প্রবল বন্যায় ভাসিয়ে নেয় কৃষকের সবুজ ক্ষেত। কোনো বছর আবার খরায় পুড়ে যায় কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। সেইসাথে ১৯৮৮ সালের পর প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছিলো। কিন্তু এবছর দফায় দফায় বৃষ্টি, খাল কেটে জলাবদ্ধতার নিরসন এবং বন্যার হানা না থাকায় কাজিপুরের বিশাল চরাঞ্চলসহ বিড়া অঞ্চলে আমনের উৎপাদন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার ১১ হাজার চারশ পয়ষট্টি হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ২০ হেক্টর, উফসী জাতের ৯ হাজার পাঁচশ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের চাষ হচ্ছে ১ হাজার নয়শ পয়তাল্লিশ হেক্টর। এতে করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ২৯ হাজার সাতশ ৪৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৭৮ মেট্রিকটন, উফসী ২৬ হাজার সাতশ নব্বই মেট্রিকটন এবং স্থানীয় জাতের ২ হাজার আটশ উনআশি মেট্রিকটন।

ইতোমধ্যে প্রায় দৃই তৃতীয়াংশ কৃষক তাদের জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছেন। আমন ধানের ক্ষেতে এখন তারা পরিচর্যা করছেন। আর নিচু জমিতে এখন চলছে রোপনের কাজ।

জানা গেছে, কৃষক পরিবারের অনেক সদস্য করোনায় কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসে বেকার সময় পার করছিলেন। এবার তারাও নিজেদের জমিতে রোপা আমন চাষ করছেন। সেইসাথে বন্যার ব্যাপক প্রকোপ না থাকায় চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের কৃষক এবার তাদের পুরো জমিতেই রোপা আমনের চাষ করছেন। এতে করে তারা গত বছরের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন।

নাটুয়ারপাড়া চরের চাষী নজরুল মিয়া জানান, এবার নিজের তিন বিঘা এবং বর্গা চারবিঘা জমিতে রোপা আমন লাগাইছি। ছেলেডার চাকরি গেছে। হেও এবার আমার কাজে লাগছে। আশা করতাছি ভালো ধান পামু।

উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের বর্গাচাষী আব্দুল শেখ জানান, এবার বন্যার তেমন বাড়াবাড়ি নাই। তাই তিরিশ বিঘার একটা জেগে ওঠা চর কট (টাকা দিয়ে নেয়া) নিয়া রোপা লাগাইতাছি। কোনো বালা না আইলে মেলা ধান পামু।

কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রেজাউল করিম জানান, ‘সময়মতো বৃষ্টি আর বন্যার তেমন সম্ভাবনা না থাকায় চরের সবটুকু জমিতেই রোপা আমনের চাষ হয়েছে। বিড়া অঞ্চলে এবার জলাবদ্ধতা দূর হওয়ায় বাড়তি অনেক জমিতে আমনের চাষ হচ্ছে। আমাদের উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ নিয়মিত কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছে। সরকারিভাবে আমরা বীজ, সারসহ বেশকিছু সহায়তা দিয়েছি। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর