ডাক্তার হয়ে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সেবা করতে চান ম্যাচোখেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেলেন অনগ্রসর জনগোষ্ঠী রাখাইন ছাত্রী ম্যাচোখেন। তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার বৌলতলিপাড়ায় শৈশব ও কিশোর বয়সে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন।

পিইসি পাসের পর বরিশাল নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি ও বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এবার মেডিকেলের ভর্তিযুদ্ধে ম্যাচোখেন জয়ী হয়েছেন।

সদ্যঘোষিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ম্যাচোখেন কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছেন।

অদম্য রাখাইন ছাত্রী ম্যাচোখেন যুগান্তরকে বলেন, বৌলতলিপাড়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বিল পেরিয়ে খেচাওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের শিক্ষা নিতে যেতে হতো। বর্ষার ৬ মাস ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় স্কুলেই যেতে পারত না। তার বাবা রাখাইন কৃষক উচোথান, মা গৃহিণী খেওয়ান।

ম্যাচোখেনের প্রাথমিক শিক্ষায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন প্রয়াত দাদা থানচাচিং তালুকদার। যখন স্কুলে যেতে পারত না- দাদাই ঘরে বসে পড়াতেন। যে কারণে প্রাথমিক সমাপনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে তার।

এরপর ষষ্ঠ শ্রেণিতে বরিশাল নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বাবা-মা ছেড়ে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতে হতো অনেক সংগ্রাম করে। রাতে ঘুমাতে পাড়তেন না ম্যাচোখেন। মা খেওয়ানেরও ঘুম হতো না মেয়েকে দূরে রেখে। মেয়ের প্রিয় খাবারগুলো রান্না হলে খেতে পারতেন না বাবা-মা। ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায় ম্যাচোখেন।

একইভাবে চলতি সালে মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। স্কুলশিক্ষক এবং কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার কথা অকপটে স্বীকার করেন ম্যাচোখেন।

ম্যাচোখেন জানিয়েছেন, তার ইচ্ছা অনাগ্রসর রাখাইন জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দেবেন। কেন না রাখাইনরা বাংলায় ততটা দক্ষ নন।

বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শিখা রানী বলেন, ম্যাচোখেন নিয়মিত ক্লাসে আসতো। ভীষণ মেধাবী মেয়েটি। পড়াশুনায় আন্তরিকতার পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থী ভদ্র ও বিনয়ী ছিল। অনগ্রসর রাখাইন জনগোষ্ঠীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠা এমন একটি ছাত্রীর মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া সত্যিই চ্যালেঞ্জের। ম্যাচোখেন একজন ভালো মানুষ- তাই  চিকিৎসায় মানবসেবায় ব্রত হয়ে কাজ করবেন বলে ওই শিক্ষক দাবি করেছেন।

বাবা রাখাইন কৃষক উচোথান বলেন, সংসারের অভাব অনটন সত্ত্বেও মেয়ের লেখাপড়ার ব্যয়ভার মেটাতে এতটুকু কষ্ট বুঝতে দিতেন না। মেয়ের আগ্রহ ও স্বপ্ন যাতে বিনষ্ট না হয় তাই তার মা অবসরে টেইলারিংয়ের কাজ করে এবং তিনি নিজে আগাম সবজি চাষ করে আয় বাড়াতেন। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় অদম্য ছিল তার কন্যা। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তিনি তার কন্যাকে কলাপাড়া অনগ্রসর রাখাইন জনগোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ বিষয়ে রাখাইন উন্নয়ন কর্মী প্রকৌশলী ম্যাথুজ যুগান্তরকে বলেন, রাখাইন সম্প্রদায় থেকে ম্যাচোখেন দ্বিতীয়বারের মতো মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে ১৯৭২ সালে তালতলী উপজেলার আগাঠাকুরপাড়া থেকে এক ছাত্রী মেডিকেলে চান্স পেয়ে ডাক্তার হয়েছিলেন।

ম্যাথুজ আরও বলেন, ম্যাচোখেন আমাদের সম্প্রদায়ের সম্পদ। এ প্রজন্মের রাখাইন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাবেন ম্যাচোখেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর