রূপপুরের আলোয় আলোকিত ঈশ্বরদীর জনপদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প ঘিরে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে ঈশ্বরদীর জনপদ। যেখানে একসময় বিষাক্ত সাপের অভয়ারণ্য ছিল, সেখানেই এখন বিশালাকৃতির সুউচ্চ অনেক ভবন উঠেছে। সন্ধ্যার পর যেখানে একসময় নিকষ কালো আঁধার নেমে আসত, সেখানে এখন বিদ্যুতের আলো ঝলমল করছে।

ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া সড়কের দিয়াড় সাহাপুর নতুনহাট মোড় থেকে প্রকল্প এলাকা রূপপুর পর্যন্ত এমনই চিত্র এখন দৃশ্যমান। অতীতে কেউ কল্পনাই করেনি, এই অজপাড়াগাঁয়ে এত আধুনিক ভবন নির্মিত হয়ে গ্রাম প্রায় শহরে পরিণত হবে। রূপপুর প্রকল্পের এই আধুনিক ‘গ্রিন সিটি’ ঘিরেই বদলে যাচ্ছে পাকশীসহ আশপাশের এলাকার চিত্র।

১৯৬১ সালে পদ্মার তীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের অক্টোবরে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। বিদ্যুেকন্দ্রের ঢালাইকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট।

প্রায় ৮ হাজার জনবল এখন এই প্রকল্পে কাজ করছে, যার মধ্যে রাশিয়ানসহ বিদেশি জনবল রয়েছে ৩ হাজারের বেশি। বিদ্যুেকন্দ্রের রাশিয়ান কর্মকর্তাদের বসবাসের আবাসন প্রকল্প গ্রিন সিটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ৩৬ দশমিক ১১ একর জমিতে গ্রিন সিটি নির্মাণের কাজও পূর্ণোদ্যমে চলছে। বাস্তবায়নে রয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। আবাসনের জন্য মোট ২১টি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোর মধ্যে ২০ তলা ১২টি, ১৬ তলা সাতটি এবং ১৫ তলাবিশিষ্ট দুটি ভবন রয়েছে। এ পর্যন্ত ১০টি আবাসিক ভবনের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সম্পূর্ণ শেষ হওয়া ছয়টি ২০ তলা এবং চারটি ১৬ তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবন।

১৫ তলার দুটি ভবনে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট থাকছে। ২০ তলাবিশিষ্ট তিনটি ভবনে ১২৫০ ও ৮৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ডরমেটরি কাম মালটিপারপাস কমার্শিয়াল ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণের টেন্ডার ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। ফায়ার স্টেশন ও পাওয়ার সাব স্টেশনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও গ্রিন সিটিতে থাকছে। আরো বেশ কয়েকটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। কোয়ার্টারগুলোতে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এছাড়া গ্রিনসিটিতে একটি দোতলা মসজিদ ভবন, ছয় তলাবিশিষ্ট স্কুল ভবন, দ্বিতল সাবস্টেশন, জেনারেটর, পাম্পহাউজ ভবন, খেলার মাঠ, গেস্টহাউজ ও ফোয়ারা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পে কর্মরত দেশি ও বিদেশিরা এই গ্রিন সিটিতে বসবাস করবেন। বিদ্যুত্ প্রকল্পে কর্মরত বেশির ভাগ রাশিয়ানসহ বিদেশিরা ইতিমধ্যে গ্রিন সিটিতে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্মিত ভবনগুলোতে আসবাবপত্র সরবরাহ হয়েছে। এসি, ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন, রান্নার গ্যাস সরবরাহ, এমনকি বাথরুমে গিজারের ব্যবস্থাও সব ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে।

পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম বাবু মণ্ডল, এলাকার শ্রমিকনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদুল্লাহ ও রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল হক মালিথা বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বেই দেশের সর্ববৃহত্ এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে সক্ষম হচ্ছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান রূপপুর প্রকল্পকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ আখ্যা দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মিত্রশক্তি রাশিয়া এই পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা আমাদের পরম বন্ধু। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রাশিয়ান সরকারের (জিসিসি) চুক্তিপত্র রয়েছে। তাতে নির্ধারিত সময়ে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাশিয়ানদের আবাসনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে না পারলে বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হতো প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, ‘১২ মাসের মধ্যে তিনটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করে প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা বিরল নজির স্থাপন করেছেন। এ কাজের জন্য অবশ্যই তারা প্রশংসার দাবিদার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর