শীতে পর্যুদস্ত উত্তরাঞ্চল, থাকবে আরো দুই দিন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশজুড়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ চলছে। অবশ্য তাপমাত্রা কমলেও সূর্য ওঠার কারণে মানুষ অতটা বিপর্যস্ত হয়নি। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতায় বেশ পর্যুদস্ত সেখানকার মানুষ।

আবহাওয়াবিদ এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে গত শুক্রবার থেকে যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তা আরো দুই দিন থাকবে। এরপর শৈত্যপ্রবাহ অনেকটা দুর্বল হয়ে যাবে। তবে এই তিন দিনে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। আকাশ পরিষ্কার থাকবে। দিনের শুরুতে সূর্য উঠবে। ভোরের দিকে কুয়াশা পড়বে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পুরো দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়বে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী বিভাগসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, যশোর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ভোলা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে। পুরো দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে এবং দিনের  তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল রাজধানীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫০ শতাংশ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের টেকনাফে, ২৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটে, ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রামে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, এ অবস্থা আরো দু-তিন দিন অব্যাহত থাকবে। কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল ও নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার হতদরিদ্র মানুষ। শ্রমজীবীদের অনেকে যেতে পারছে না কাজে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে চরের শিশু, নারী ও বয়স্করা কষ্ট পাচ্ছেন বেশি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় পোশাক কিনে বিতরণের জন্য ছয় লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মহীন শীতার্ত মানুষের জন্য আসা ৯ হাজার প্যাকেট খাবারও বিতরণ করা হয়।

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আবারও কমছে তাপমাত্রা। দুই দিন ধরে সকালে সূর্যের দেখা মিললেও ঠাণ্ডা বাতাসে জেঁকে বসেছে শীত। কয়েক দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন মাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় উত্তরের এই জনপদে। গতকাল পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। শীতের তীব্রতা থাকছে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত।

শীতের তীব্রতা বাড়ায় পঞ্চগড়ের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার দরিদ্র শীতার্তদের মধ্যে ২২ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে এ জেলার বিশালসংখ্যক দরিদ্র মানুষের তুলনায় এটি খুবই সামান্য। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

নীলফামারীতে গতকাল ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল সকালে সূর্যের দেখা মিললেও হারিয়ে যায় দুপুরের পর। এর পর থেকে কুয়াশাঢাকা আকাশে বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ। আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, দুপুর পর্যন্ত সূর্যের উষ্ণতায় তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও বিকেল ৪টার পর থেকে তাপমাত্রা কমে রাতে তীব্র শীত অনুভূত হয়।

শীত বাড়ায় বেড়েছে শীতজনিত রোগবালাই। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নেমে এক অঙ্কে এসেছে। গতকাল সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সঙ্গে রয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে আরো বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষকে কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি এখানকার শীতার্ত মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক জানান, গতকাল সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন। হঠাৎ করে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি নিচে নেমে আসায় শীত জেঁকে বসেছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি]

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর