Kishoreganj Norsunda Nod

নরসুন্দায় জল আনতে ১১১ কোটি টাকা ‘জলে’

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১২ সালে নদীর ৩৫ কিলোমিটার পুনর্খননের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু ১১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এ কাজে নদীতে পানি আসেনি।

কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদ পুনর্খনন ও পুনর্বাসনে ১১১ কোটি টাকা ব্যয়ের সুফল কতটুকু- এ নিয়ে কথা উঠেছে।

শত কোটি টাকা খরচেও নদীতে ফেরেনি নাব্যতা। বরং অপরিকল্পিত খনন ও নির্মাণের কারণে অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে খননের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে আগামী বছর। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও ৪৮ কিলোমিটার খনন করা হলে পানি আসবে নদে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের বেশিরভাগ টাকাই লুটপাট হয়েছে। প্রকল্পের ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যানও (ডিপিপি) অনুসরণ করা হয়নি।

২০১২ সালে নদীর ৩৫ কিলোমিটার পুনর্খনন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা। ১১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এ কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে।

কিশোরগঞ্জ নরসুন্দা নদ
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদ পুনর্খনন ও পুনর্বাসন প্রকল্পে নির্মিত ওয়াকওয়ে নির্মাণের কিছুদিন পরেই বিভিন্ন অংশ ধ্বসে পড়ে। 

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট তিন সচিব কিশোরগঞ্জে গিয়ে গণশুনানি করেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব আব্দুল মালেক, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় ও রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব সম্পদ বড়ুয়ার উপস্থিতিতে ওই শুনানিতে লুটপাট, ডিপিপি না মানাসহ দুই পাড় থেকে অবৈধভাবে অনেককে উচ্ছেদের অভিযোগ করা হয়।

দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সে সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রইছ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। নদী খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনও দেয় এ কমিটি। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

কিশোরগঞ্জ এলজিইডি কার্যালয় থেকে জানানো হয়, অনিয়মের কারণে ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত করে সে টাকায় একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সভাপতি শরীফ আহমেদ সাদী বলেন, ‘নরসুন্দায় খননকাজে তিন স্তরে দুর্নীতি হয়েছে। প্রথমটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে, দ্বিতীয়টি স্থানীয় প্রভাবশালী মহলে ও তৃতীয়টি রাজনৈতিক মহলে।

কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদ ডিপিপি অনুযায়ী খননকাজ না করায় নদীর অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীতে পানি প্রবাহ বাড়েনি; প্রভাবশালী দখলদারদেরও উচ্ছেদ করা হয়নি। নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলাও বন্ধ করা যায়নি।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সংযোগের জন্য নরসুন্দার হোসেনপুর অংশে প্রথম পর্যায়ে ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ চলছে। প্রায় ১৪ কোটি টাকার এ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে তাড়াইল ও করিমগঞ্জ অংশে ২৩ কিলোমিটার এবং হোসেনপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র থেকে কিশোরগঞ্জ সদরের যশোদল হয়ে নিকলী পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার নদী খনন প্রস্তাবিত পর্যায়ে রয়েছে।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ সদরের শোলাকিয়া থেকে করিমগঞ্জের চামটা ঘাট পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার ও অন্য অংশে সদরের নীলগঞ্জ থেকে তাড়াইলের কাজলা পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার খননের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এসব প্রকল্প শেষ হলে নরসুন্দায় পানির প্রবাহ ফিরবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর