কটিয়াদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৯ লক্ষ টাকার প্রকল্পে অনিয়ম

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রাম দিয়ে ঘেষে যাওয়া ব্রক্ষপুত্র নদীতে ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙন প্রতিরোধ করার জন্য ১৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সেখানে বালুর বস্তা ফেলাসহ নানান অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি তুলেন গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। সম্প্রতি গ্রামের একাধিক ব্যক্তি কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি নূর মোহাম্মদের কাছে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন। এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাজের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

  • ১২০ মিটার নদী ভাঙন কাজের প্রকল্পের প্রাক্কলন ১৯ লক্ষ টাকা।
  • ১১ হাজার ২৮৬ টি বালু ভর্তি বস্তা
  • জিও বস্তা ৪ হাজার ২৮৬টি
  • প্লাস্টিক বস্তা ৭ হাজার
  • ২’শ খুঁটি (বাঁশ)।

কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, লোহাজুরী ইউনিয়নের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামের ১২০ মিটার নদী ভাঙন এলাকার কাজের প্রকল্পের বরাদ্দ ধরা হয় ১৯ লক্ষ টাকা। ১৯ লক্ষ টাকা দিয়েই ১১ হাজার ২৮৬ টি বালু ভর্তি বস্তা ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলা হয়েছে। এদের মধ্যে জিও বস্তা ৪ হাজার ২৮৬টি ও প্লাস্টিক বস্তা ৭ হাজার ও ২’শ খুঁটি (বাঁশ) রয়েছে। ভাঙন এলাকায় প্রকল্পের কাজ করেছে মাঈন ইন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এদিকে প্রকল্পের কাজ সঠিক মতো তদারকি করার জন্য কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীকে প্রধান সমন্বয়ক করে চার সদস্যে বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ১জন, নির্বাহী কর্মকতার প্রতিনিধি হিসেবে ১ জনকে তদারকি কমিটিতে রাখা হয়।
সূত্র জানায়, পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদীর প্রায়য় ১২০ মিটার ভাঙনে এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বস্তা ফেলা হয়নি। বস্তায় যে পরিমাণ বালু ভর্তি করার নিয়ম ছিল তা ও করা হয়নি। বস্তা ও ফেলা হয়েছে পরিমাণে কম। ভাঙন এলাকায় কোনো সাইনবোর্ড টাঙ্গানো ছিল না। নদী ভাঙন প্রতিরোধে কত টাকা বরাদ্দের কাজ হচ্ছে তা ও গ্রামবাসীকে জানানো হয়নি। পরে গ্রামের কিছু লোক স্থানীয় এমপি’র সাথে যোগাযোগ করে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উধর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাজের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাঁদের। তদারকি কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী ভাঙন এলাকায় বস্তা ফেলা হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় যে পরিমাণে বস্তা ফেলার অনুমতি ছিল, ঠিক সেইভাবে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ফারুক বলেন,’আমাদের গ্রামের ভাঙন এলাকায় বস্তা ফেলার সময় ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ বা পাউবো কর্তৃপক্ষ কারো কোনো কথার উত্তর দেননি। তাঁদের মত কাজ শেষ করেছেন। এই কাজে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।’

কিশোরগঞ্জ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মাঈন ইন্টারপ্রাইজ’ এর সত্ত্বাধিকারী রাসেল সরকার জানান, এখানে বস্তা ফেলার সময় চার সদস্যের কমিটির দেখাশোনা করেছেন। কাজের সময় কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মাফিক কাজ সম্পূন্ন করা হয়েছে।

লোহাজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার উদ্দিন ভূইয়া রতন মনে করেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকায় ১৯ লক্ষ টাকার বরাদ্দ হলেও তা শতভাগ কাজ হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. আকতারুন নেছা বলেন, ‘যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় ইস্টিমেন্ট অনুযায়ী ১৯ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। পাউবো ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত থেকে কাজ করেছেন। বালু ভর্তি বস্তা ফেলতে কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমি জানি না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর