ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাওরে ঢেউয়ের তালে তালে ভাঙছে বাড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:২৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০
  • ২৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলার হাওর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দী হাজারো পরিবারের মধ্যে বিশুদ্ধ পানিসহ গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

একদিকে দেশের করোনা পরিস্থিতিতে গবাদিপশু বিক্রি করতে না পারা, অন্যদিকে বন্যার পানিতে খড়সহ গো-খাদ্য তলিয়ে যাওয়ায় এখন বাজারের খৈল ও ভুসিসহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যাদির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে খামারিদের। এতে খামারিরা উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে লোকশানের আশঙ্কা করছেন।

এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সরকারি ও স্থানীয়ভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে একটি পরিবারও ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হবে না। পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যেই বিতরণ করা হবে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী।

টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে জেলার কালনি-কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীর পাড় উপচে বিভিন্ন স্থান দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। আর এ পানি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে এখন বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করছে। ফলে একের পর এক গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ মূল্যবান সামগ্রী। বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

সরেজমিনে বন্যা কবলিত বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেকেই এখন ঢেউয়ের কারণে বাড়িঘর ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন। হাওর পারের মানুষেরা তাদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচিয়ে রাখতে রাতের পর রাত জেগে রক্ষা করছেন তাদের বাসস্থান। কচুরিপানা আর খড়সহ বিভিন্ন ঘাস দিয়ে আড় তৈরি করে রাখছেন বাড়ির চারদিকে। তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাদের। ঢেউয়ের তালে তালে ভেঙে যাচ্ছে অনেক বাড়িঘর। এমন অবস্থায় অনেকে বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচুস্থানসহ আশ্রয় কেন্দ্রে।

এদিকে, বন্যার পানিতে গভীর নলকূপসহ বিশুদ্ধ পানির সব ব্যবস্থা ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়ার কারণে বানভাসিদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নৌকা দিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে বা পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বানভাসিদের। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

এছাড়া হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আশ্রয় কেন্দ্রে না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে। যে কয়েকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোকেই আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল কাদির নামে এক যুবক জানান, তাদের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু- বাছুরসহ যাবতীয় আসবাবপত্র নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। এছাড়া যে আশ্রয় কেন্দ্রে তারা অবস্থান করছেন সেখানে জায়গার তুলনায় প্রায় তিনগুণ লোক রয়েছে। তাই বিশুদ্ধ পানিসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

আমজদ আলী নামে এক বানভাসি জানান, ২০০৪ সালে বন্যা হলেও পানি ছিল শান্ত। কিন্তু এবারের বন্যার পানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলছে ঢেউ। যে কারণে বাড়িঘর টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে যে ত্রাণ সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে তা ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ধেকও পাচ্ছেন না।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সরকার জানান, গত দুই দিন ধরে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি কমলে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। এছাড়া বন্যায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বন্যার পানি কমলে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ
করা হবে।

হবিগঞ্জের ডিসি মো. কামরুল হাসান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন আন্তরিক ও সচেষ্ট রয়েছে। প্রতিদিনিই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহ উপহার সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসনসহ উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এছাড়া এরইমধ্যে তিনি নিজেই আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচংয়ের বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পর্যায়ক্রমে ত্রাণের আওতায় আনা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাওরে ঢেউয়ের তালে তালে ভাঙছে বাড়ি

আপডেট টাইম : ০৭:২৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলার হাওর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দী হাজারো পরিবারের মধ্যে বিশুদ্ধ পানিসহ গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

একদিকে দেশের করোনা পরিস্থিতিতে গবাদিপশু বিক্রি করতে না পারা, অন্যদিকে বন্যার পানিতে খড়সহ গো-খাদ্য তলিয়ে যাওয়ায় এখন বাজারের খৈল ও ভুসিসহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যাদির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে খামারিদের। এতে খামারিরা উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে লোকশানের আশঙ্কা করছেন।

এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সরকারি ও স্থানীয়ভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে একটি পরিবারও ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হবে না। পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যেই বিতরণ করা হবে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী।

টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে জেলার কালনি-কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীর পাড় উপচে বিভিন্ন স্থান দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। আর এ পানি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে এখন বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করছে। ফলে একের পর এক গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ মূল্যবান সামগ্রী। বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

সরেজমিনে বন্যা কবলিত বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেকেই এখন ঢেউয়ের কারণে বাড়িঘর ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন। হাওর পারের মানুষেরা তাদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচিয়ে রাখতে রাতের পর রাত জেগে রক্ষা করছেন তাদের বাসস্থান। কচুরিপানা আর খড়সহ বিভিন্ন ঘাস দিয়ে আড় তৈরি করে রাখছেন বাড়ির চারদিকে। তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাদের। ঢেউয়ের তালে তালে ভেঙে যাচ্ছে অনেক বাড়িঘর। এমন অবস্থায় অনেকে বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচুস্থানসহ আশ্রয় কেন্দ্রে।

এদিকে, বন্যার পানিতে গভীর নলকূপসহ বিশুদ্ধ পানির সব ব্যবস্থা ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়ার কারণে বানভাসিদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নৌকা দিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে বা পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বানভাসিদের। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

এছাড়া হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আশ্রয় কেন্দ্রে না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে। যে কয়েকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোকেই আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল কাদির নামে এক যুবক জানান, তাদের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু- বাছুরসহ যাবতীয় আসবাবপত্র নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। এছাড়া যে আশ্রয় কেন্দ্রে তারা অবস্থান করছেন সেখানে জায়গার তুলনায় প্রায় তিনগুণ লোক রয়েছে। তাই বিশুদ্ধ পানিসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

আমজদ আলী নামে এক বানভাসি জানান, ২০০৪ সালে বন্যা হলেও পানি ছিল শান্ত। কিন্তু এবারের বন্যার পানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলছে ঢেউ। যে কারণে বাড়িঘর টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে যে ত্রাণ সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে তা ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ধেকও পাচ্ছেন না।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সরকার জানান, গত দুই দিন ধরে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি কমলে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। এছাড়া বন্যায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বন্যার পানি কমলে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ
করা হবে।

হবিগঞ্জের ডিসি মো. কামরুল হাসান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন আন্তরিক ও সচেষ্ট রয়েছে। প্রতিদিনিই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহ উপহার সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসনসহ উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এছাড়া এরইমধ্যে তিনি নিজেই আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচংয়ের বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পর্যায়ক্রমে ত্রাণের আওতায় আনা হবে।