হাঁস পালনে ঘুরল ভাগ্যের চাকা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  টানাপোড়েনের সংসারে অভাব মোচন হচ্ছে না কোনোভাবেই। নিজের সাধ্য অনুযায়ী পাঁচ বছর আগে মাত্র ২৫০ টি হাঁস নিয়ে মকবুল হোসেন গড়ে তুলেন হাঁসের খামার। তার এক বছর পর থেকেই সফলতার সূচনা কৃষক মকবুল হোসেনের।
পাঁচ বছর অভাব অনটনে কেটে গেলেও এখন তিনি সফল খামারি। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তর চলনবিল। চলনবিলের খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন মকবুল হোসেন। অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এই সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক এখন হাঁস পালন শুরু করেছেন।

উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে ছয় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাকালেই দেখা যায় বিশাল আকারের চলনবিল মাঠ। উপজেলার খুবজীপুর ইউপির খামারি মকবুল হোসেন ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক বেকার যুবকদের হাঁসের খামার।

মকবুল হোসেন জানান, পাঁচ বছর আগে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করতে হতো। সংসারে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করেছেন তিনি। তার এলাকার একজন সফল খামারির পরামর্শ নিয়ে ২৫০টি হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন। এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন রোগের কারণে কিছু সংখক হাঁস মারা গেলেও তার প্রায় সবগুলো হাঁস ডিম দেয়া শুরু করে। বাড়ির পাশেই চলনবিলের বিশাল মাঠ থাকার কারণে বাড়তি খাবার দিতে হয় নি।

মাঠের মধ্যে থাকা ছোট ছোট মাছ, শামুক খেয়েই চলছিলো। হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের সংসার খুব ভাল ভাবেই চলছিলো। ডিম বিক্রির টাকায় সংসারের খরচের পাশাপাশি কিছু টাকা জমিয়ে রাখতেন তিনি। তিন বছর পরে জমানো টাকা দিয়ে আরো ২৫০টি হাঁস ক্রয় করেন মকবুল হোসেন।

বর্তমানে তার খামারে ৫০০ হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন ডিম সংরক্ষণ করে ৪৫০টি। যার বাজার মূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। মাসে আয় হয় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। মাঠের মধ্যে হাঁস পালনের জন্য একজন শ্রমিক রেখেছেন তিনি। শ্রমিকের বিল মাসে ছয় হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার খরচ হয় ১২ হাজার টাকার মত। তারপরও মকবুল হোসেনের সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার টাকা।

হাঁস পালন করে মকবুল হোসেন এখন তার সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। সংসারের খরচের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ করেও সে অনেক টাকা আয় করতে পারছেন।

মকবুল হোসেন বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা বেকার ঘোরাফেরা করছে তারা যেন হাঁস পালন শুরু করে। একসময় অবশ্যই আর্থিকভাবে সে সাবলম্বী হবে।

গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, গুরুদাসপুর উপজেলায় অনেক হাঁসের খামার রয়েছে। আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করতে পারলেও হাঁসের চিকিৎসা, টিকা ও পরামর্শ দেয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর